৭ খুন মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ২১ মার্চ
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের একটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ২১ মার্চ ধার্য করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।
মামলার সাক্ষ্যগ্রহণে লাশের সুরতহাল রিপোর্টের সাক্ষী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের গাড়ি চালক ইব্রাহিমের ভাই ইউসুফ ও স্থানীয় মো. হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। তাদের দু`জনকে ৩৩ জন আসামির আইনজীবী জেরা সম্পন্ন করেছেন।
এদিকে নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীর জেরার দিন ধার্য থাকলেও আসামি নূর হোসেন ও তারেক সাঈদের পক্ষের আইনজীবী উচ্চ আদালতের মামলার অজুহাতে সময় প্রার্থনার কারণে আদালত ২১ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।
পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সোমবার তারেক সাঈদ, এমএম রানা ও নূর হোসেনের পক্ষে একটি মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটির সাক্ষ্য জেরা দিন ধার্য ছিল। কিন্তু নূর হোসেন ও তারেক সাঈদের পক্ষের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সাক্ষ্য শুনানির জন্য সময় প্রার্থনা করেন। আদালত আগামী ২১ মার্চ পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।
তিনি আরও বলেন, সোমবার দুই সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। একজন নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের গাড়ি চালক নিহত ইব্রাহিমের ভাই মো. ইউসুফ ও সিদ্ধিরগঞ্জের আলীনগর এলাকার পিয়ার জাহানের ছেলে মো. হোসেন। এছাড়া তারেক সাঈদ ও নূর হোসেনের পক্ষের আইনজীবীরা ছাড়া অন্যান্য ৩৩ আসামির পক্ষে আইনজীবীরা তাদের জেরা করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান সাংবাদিকদের জানান, একটি মামলার বাদী বিজয় পালের মামলায় সুরতহাল রিপোর্টের দুইজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণসহ ৩৩ জন আসামির আইজীবী তাদের দুইজনকে জেরা সম্পন্ন করেছে। আর আরেকটি মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটিকে ৫ দিনের মতো জেরা করার কথা থাকলে নূর হোসেন ও তারেক সাঈদের পক্ষে উচ্চ আদালতের মামলার অজুহাত দেখিয়ে সময় প্রার্থনা করেন। আদালত ২১ মার্চ পরবতী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।
তিনি আরও জানান, ৭ খুন মামলার আসামিরা অনেক প্রভাবশালী। তারা মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে একের পর সময় প্রার্থনা করছেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯ টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে কাশিমপুর কারাগার থেকে অন্যতম প্রধান আসামি নূর হোসেন ও র্যাবের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা তারেক সাইদসহ মোট ২৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়ি চালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়ি চালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্ত শেষে প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। কিন্তু অভিযোগপত্র থেকে পাঁচ আসামিকে বাদ দেয়ায় এবং প্রধান আসামি নূর হোসেনের জবানবন্দি ছাড়া অভিযোগপত্র আদালত আমলে নেয়ায় ‘নারাজি’ আবেদন করেন সেলিনা ইসলাম বিউটি। আবেদনটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও জজ আদালতে খারিজ হয়ে গেলে বিউটি উচ্চ আদালতে যান। হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়, পুলিশ চাইলে মামলাটির ‘অধিকতর তদন্ত’ করতে পারে এবং ‘হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার’ ধারা যুক্ত করে নতুন করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাত খুনের দুটি মামলায় নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। আর চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখনো ১২ জন পলাতক রয়েছে।
শাহাদাত হোসেন/এসএস/এমএস