অভিযোগপত্রে ডিবি

গান গাইতে না গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন নোবেল

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর আলম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩৭ পিএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

গত বছরের ২৮ এপ্রিল শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ‘এসএসসি ব্যাচ ২০১৬’-এর প্রথম পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়। ওই পুনর্মিলনীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনের কথা ছিল গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলের। এজন্য তিনি এক লাখ ৭৫ হাজার টাকার মৌখিক চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী তাকে এক লাখ ৭২ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি নির্ধারিত দিনে সেখানে গান গাইতে যাননি। পরে অভিযোগ ওঠে, অনুষ্ঠানে গান না গেয়ে ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন নোবেল।

এ ঘটনায় ওই এসএসসি ব্যাচের প্রতিনিধি মো. সাফায়েত ইসলাম বাদী হয়ে গত বছরের ১৬ মে রাজধানীর মতিঝিল থানায় প্রতারণার অভিযোগ এনে নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ১৭ মে আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করে ৯ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরপর তদন্তে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরই ধারাবাহিকতায় নোবেলের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা

তবে মামলার বাদী ও নোবেলের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন উভয়েই বলছেন, বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে আপস মীমাংসা হয়ে গেছে। বাদীর কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিয়েছেন নোবেল। আদালতে অভিযোগ গঠনের দিন নোবেল অব্যাহতি পাবেন বলে আশা করছেন বিবাদীর আইনজীবী।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

jagonews24

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাইতে না গিয়ে এক লাখ ৭২ হাজার টাকা প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরির আদালতে নোবলকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের লালবাগ জোনাল টিমের ইন্সপেক্টর হুমায়ুন কবির।

৩০ মার্চ সিটি ব্যাংক এটিএম বুথ শরীয়তপুর ব্রাঞ্চ থেকে ৪৭ হাজার টাকা তার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। এর দুই সপ্তাহ পর ১৪ এপ্রিল একই ব্রাঞ্চ থেকে আরও এক লাখ ১০ হাজার টাকা পাঠানো হয়। পুনর্মিলনীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য তিন দফায় মোট এক লাখ ৭২ হাজার টাকা দেওয়া হয় নোবেলকে। কিন্তু টাকা নিয়েও অনুষ্ঠানে না গিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তা আত্মসাৎ করেন তিনি

এই তদন্তকারী কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, নোবেলের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এ মামলার তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: গায়ক নোবেল গ্রেফতার

মামলার বাদী সাফায়েত ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গত বছরের ২২ মে কনসার্টের এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে জামিন পান নোবেল। এরপর তিনি সেই টাকা আমাকে ফেরত দিয়েছেন। এখন আদালতের যে কোনো সিদ্ধান্তে আমার কোনো আপত্তি বা অসন্তুষ্টি থাকবে না।

নোবেলের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, বাদীর সঙ্গে নোবেলের আপস মীমাংসা হয়েছে। বাদীর কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরতও দিয়েছেন নোবেল। আপস শর্তে আমরা মামলার চার্জগঠনের দিন তার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করবো। ওইদিন বাদী আদালতে উপস্থিত থাকবেন। আশা করি নোবেল এ মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন।

বিজ্ঞাপন

jagonews24

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামি নোবেল বাদীর কাছ থেকে চুক্তির এক লাখ ৭২ হাজার টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়ে উত্তোলন করেন। কিন্তু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে না গিয়ে ওই টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করেন। তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণে এজহারনামীয় আসামি নোবেলের বিরুদ্ধে বাদীর আনা অভিযোগটি দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০ ধারার অপরাধ হিসেবে প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: এক লাখ ৭২ হাজার টাকা নিয়েও গান গাইতে যাননি নোবেল

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, প্রতারণার অভিযোগে গত বছরের ১৬ মে নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর ২০ মে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ওইদিনই তাকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিনদিনের রিমান্ড আবেদন করে ডিবি। অন্যদিকে তার আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবীর একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য ওই বছরের ২৫ মার্চ নোবেলের সঙ্গে মোট এক লাখ ৭৫ হাজার টাকার মৌখিক চুক্তি করেন বাদী। নোবেলকে তখন অগ্রিম হিসেবে নগদ ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এসময় নোবেল অনুষ্ঠানের আগেই অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানান এবং তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেন

রিমান্ড শেষে ওই বছরের ২২ মে বাদীকে কনসার্টে গান গাওয়ার জন্য নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত। এরপর নিজের ভুলের জন্য সবার কাছে ক্ষমা চান গায়ক নোবেল।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ‘এসএসসি ব্যাচ ২০১৬’-এর প্রথম পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য ওই বছরের ২৫ মার্চ নোবেলের সঙ্গে মোট এক লাখ ৭৫ হাজার টাকার মৌখিক চুক্তি করেন বাদী। নোবেলকে তখন অগ্রিম হিসেবে নগদ ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এসময় নোবেল অনুষ্ঠানের আগেই অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানান এবং তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেন।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: টাকা ফেরত দিয়েছেন নোবেল, জামিনে আপত্তি ছিল না বাদীর

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, পরে এসএসসি ব্যাচের সদস্যদের থেকে টাকা সংগ্রহ করে একই বছরের ৩০ মার্চ সিটি ব্যাংক এটিএম বুথ শরীয়তপুর ব্রাঞ্চ থেকে ৪৭ হাজার টাকা তার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। এর দুই সপ্তাহ পর ১৪ এপ্রিল একই ব্রাঞ্চ থেকে আরও এক লাখ ১০ হাজার টাকা পাঠানো হয়। পুনর্মিলনীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য তিন দফায় মোট এক লাখ ৭২ হাজার টাকা দেওয়া হয় নোবেলকে। কিন্তু টাকা নিয়েও অনুষ্ঠানে না গিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তা আত্মসাৎ করেন তিনি।

জেএ/এমকেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।