ছাত্র আন্দোলন

তাইম হত্যা: এসি তানজিলকে আজ ট্রাইব্যুনালে তোলা হচ্ছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০৪ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫
আহত তাইমকে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তার এক বন্ধু

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ বন্ধুকে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের উপ-পরিদর্শক মো. ময়নাল হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে কলেজ শিক্ষার্থী ইমাম হাসান তাইম গুলিতে নিহত হন। তাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তানজিল আহমেদকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) এসি তানজিল ছাড়াও গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানার পাশে শরীরে ঠেকিয়ে গুলি করে কলেজ ছাত্র মো. হৃদয় (২০) হত্যা মামলায় পুলিশের কনস্টেবল মো. আকরাম হোসেনকে (২২) ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে(আইসিটি) দায়ের করা অভিযোগে তাদেরকে গ্রেফতার দেখানোর জন্য প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট মূলে হাজির করার আবেদনের ওপর আজ ট্রাইব্যুনালে শুনানি হবে বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ।

প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত বিষয়ে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এর আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের উপ-পরিদর্শক মো. ময়নাল হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে নারায়ণগঞ্জ সরকারি আদমজীনগর এম. ডব্লিউ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান তাইমকে হত্যার অভিযোগে ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গত ২০ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহাম্মদের আদালতে নিহত শিক্ষার্থীর মা মোসা. পারভীন আক্তার এই মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- এডিসি শাকিল মোহাম্মদ শামীম, এসি তানজিল আহমেদ, যাত্রাবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন ও এসআই শাহাদাৎ আলী।

বাদীর অভিযোগে বলা হয়, গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সরকার কারফিউ জারি করে। ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। ওই সময় তাইম তার দুই বন্ধুর সঙ্গে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় চা খেতে যায়। তখন কিছু কোটা আন্দোলনকারী বিক্ষোভ করছিল। সে সময় ইকবাল হোসেন, শামীম ও তানজিল আহমেদের নির্দেশে জাকির হোসেন ও তার সঙ্গীরা বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও তাজা গুলি চালায়।

আরও পড়ুন

প্রাণভয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা এলোপাতাড়ি ছোটাছুটি করতে থাকে। তাইম ও তার দুই বন্ধু লিটন চা স্টোরের ভেতর ঢুকে দোকানের শাটার টেনে দেয়। কিন্তু শাটারের নিচের দিকে আধা হাত খোলা ছিল। সেখান থেকে পুলিশ তাদেরকে টেনে বের করে। জাকির হোসেন গুলি থেকে বাঁচতে চাইলে দৌড় দিতে বলে। তখন তাইম সবার আগে দৌড় দেয়। জাকির গুলি করে। বিনা চিকিৎসায় তাইম সেখানেই মারা যায়।

এদিকে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানার পাশে গুলি করে কলেজ ছাত্র মো. হৃদয়কে (২০) হত্যা মামলায় পুলিশের এক কনস্টেবলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে কিশোরগঞ্জের তারাইল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার মো. আকরাম হোসেন গাজীপুর শিল্প পুলিশে কর্মরত ছিলেন। নিহত হৃদয় টাঙ্গাইলের গোপালপুরের আলমগর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে। তিনি হেমনগর ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি কোনাবাড়ী এলাকায় অটোরিকশা চালাতেন।

পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকায় গত ৫ আগস্ট সরকারের বিরুদ্ধে মো. হৃদয় বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে হৃদয় রাস্তার পাশে অবস্থান নেন। ওই সময় শিল্প পুলিশে কর্মরত কিছু পুলিশ সদস্য কোনাবাড়ী এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তারা হৃদয়কে রাস্তার পাশ থেকে ধরে নিয়ে চড়-থাপ্পড় মারেন। এক পর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল আকরাম অতি উৎসাহী হয়ে তাকে পেছন দিক থেকে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই হৃদয়ের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় নিহতের ফুফাতো ভাই মো. ইব্রাহীম বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এফএইচ/এএমএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।