জুলাই-আগস্টের গণহত্যা
ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার নিয়ে জিয়াউল আহসানের চ্যালেঞ্জ

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ঘটনায় গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করেছেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার-এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।
সেইসঙ্গে যে অধ্যাদেশের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন করা হয়েছে সে সরকারের অধ্যাদেশ করার ক্ষমতা ও সরকারের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে আর্জি জানানো হয়েছে। শুনানি শেষে এই বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী বুধবার (২২ জানুয়ারি) আদেশের জন্য দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে সোমবার (২০ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদেশের জন্য এই দিন ঠিক করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
জিয়াউল আহসানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী ও অ্যাডভোকেট নাজনীন নাহার। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন। আর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এসময় প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার, গাজী এমএইচ তামিমসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আবেদনকারী ও রাষ্ট্রপক্ষের পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য
আবেদনের বিষয়ে শুনানি শেষে বাইরে এসে জিয়াউল আহসানের বোন ও তার আইনজীবী নাজনীন নাহার সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭১ সালে যে যুদ্ধ হয়েছিল সেই যুদ্ধে যে অপরাধী ছিল তাদের বিচার করার জন্য এই ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল। এই ট্রাইব্যুনালে এখন যে বিচার হচ্ছে সেটা জুলাই-আগস্ট, এটা হচ্ছে একটা পলিটিক্যাল কনফ্লিক্ট। এখানে কোনো যুদ্ধের বিশেষত্ব নেই। এই একটাই প্রশ্ন এই ট্রাইব্যুনালের গঠন প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছি।
তিনি বলেন, এই ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে কোরাম নন জুডিস। অথ্যাৎ এই ট্রাইব্যুনালের এই মামলা পরিচালনা করার কোনো ক্ষমতা নেই। নাজনীন নাহার বলেন, আমরা আবেদনে বলতে চেয়েছি, এখানে যারা বিচারপতি আছেন তারা হাইকোর্টের বিচারপতি। তাদের হাইকোর্টে থাকা উচিত। তাদের এখানে বিচার করার এখতিয়ার নেই। আবেদনে আমরা এই কথাটাই বলেছি।
শুনানির পর বাইরে এসে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যেসব বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। এখানে সাংবিধানিক কোনো বিষয়ে শুনানির সুযোগ নেই। এখানে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তারা বলছেন, এই আইনে কেবল যুদ্ধাপরাধ হলেই বিচার করা যাবে। কিন্তু ১৯৭৩ সালের আইনে বলা হয়েছে আগে বা পরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ বা আন্তর্জাতিক আইনে কোনো অপরাধের বিচার করা যাবে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা লাভজনক কোনো পদে যেতে পারবেন না বলে আবেদনে বলা হয়েছে। অথচ এটি কোনো লাভজনক পদ নয়। এর আগেও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা এখানে বিচারকাজ করেছেন। তাদের যুক্তি মূল্যহীন। মূলত মিডিয়ার দৃষ্ট আকর্ষণ করতেই এই আবেদন করা হয়েছে। আবেদন খারিজ করে বড় অঙ্কের খরচ ধার্য করার আবেদন করেন তিনি।
আদেশের পর চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার ও ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে জারি করা অধ্যাদেশ চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করা হয়েছে। তারা বর্তমান সরকারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছেন।
এছাড়া ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত আইনে গুমের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে যেটি তারা চ্যালেঞ্জ করেছে। আমরা বলেছি এটা করলে সাংবিধানিক আদালতে করতে হবে। এটা ফৌজদারি কোর্টে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ নেই। আর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে এই অপরাধের বিচারের সুযোগ আছে। সেটি আগে বা পরে যখনই হোক না কেন।
এফএইচ/এমআইএইচএস/এএসএম