হেলিকপ্টার থেকে গুলি
‘কমান্ড রেসপনসিবিলিটির দায়ে অভিযুক্ত র্যাবের সাবেক ডিজি’

ছাত্র আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত র্যাবের সাবেক ডিজি হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপনসিবিলিটির অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তবে তার সঙ্গে আর কে কে জড়িত সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে, ন্যায়বিচার নিশ্চিতের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
এর আগে এ দিন জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর দায়ে হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
গ্রেফতার ও তদন্ত নিয়ে এ সংক্রান্ত বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৩ মার্চ পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রসিকিউশনের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন বি এম সুলতান মাহমুদ। এ সময় প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম, আব্দুস সোবহান তরফদার ও মনোয়ার হোসেন তামিম উপস্থিত ছিলেন।
- আরও পড়ুন
- র্যাবের সাবেক ডিজি হারুনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
- ছাত্র আন্দোলন দমনের নির্দেশ শেখ হাসিনার, গুলির নির্দেশ কামালের
- যারা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে ও নির্দেশ দিয়েছে সবাই অপরাধী
পরে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, র্যাবের সাবেক ডিজি হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপনসিবিলিটির অভিযোগ রয়েছে। তিনি যখন র্যাবের প্রধান ছিলেন, র্যাব বাহিনী আন্দোলন চলাকালীন ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করেছে, আপনারা দেখেছেন তাদের (ছাত্র-জনতার) ওপর নানান ধরনের অপরাধ তারা করেছে। কাউকে আটক করেছে, কাউকে টর্চার করেছে, কারও ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় হেলিকপ্টার থেকে যে গুলি করা হয়েছে, তার প্রমাণ আমাদের তদন্ত সংস্থা পেয়েছে। র্যাবের যে ডিজি ছিলেন হারুন অর রশিদ, তিনি পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ছিলেন। ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতন এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার যে নির্দেশ বা পরিকল্পনা ছিল, তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তার অধীন কর্মকর্তাদের দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, র্যাবকে ব্যবহার করে তিনি এত ধরনের অপরাধ করেছিলেন, যার প্রমাণ আমাদের তদন্ত সংস্থা পাচ্ছে। সেই প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত সংস্থা তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য প্রসিকিউশনের কাছে আবেদন করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পিটিশন দিয়েছি। আদালত তাকে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২৩ মার্চ আদালত এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন। এর আগে যখনই হারুনকে গ্রেফতার করা হবে, তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন আদালত।
তাজুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করার যে নির্দেশনা ছিল, সেটি তার দেওয়া। এছাড়া র্যাবের মাধ্যমে যেসব অপরাধ হয়েছিল, তা সবই তার নির্দেশনায় করা। তার অধীন যে কর্মকর্তারা ছিলেন, তাদের মাধ্যমে তিনি এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। এ ধরনের সুশৃঙ্খল বাহিনীর কমান্ড রেসপনসিবিলিটি খুবই কঠিনভাবে মেনে চলা হয়। সুতরাং তিনি কমান্ড রেসপনসিবিলিটির দায়ে অভিযুক্ত।
তিনি বলেন, এ ধরনের অপরাধ যখন র্যাব কর্মকর্তারা করেছিলেন, তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি বা তাদের কোনো শাস্তি দেননি। এই যে পাওয়ার টু প্রিভেন্ট বা পাওয়ার টু পানিশ, সেটিও তিনি ব্যবহার করেননি। উল্টো দিকে তিনি পরিকল্পনা করেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন। এসব অভিযোগই তার বিরুদ্ধে আছে, তদন্ত চলমান। তার অধীন যে কর্মকর্তারা ছিলেন, তাদেরও আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
তাজুল ইসলাম বলেন, আজ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল থেকে ৯৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর অধিকাংশই পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং কিছু আছে সিভিলিয়ান (বেসামরিক)। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের নেতারা আছেন। আর একমাত্র সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে জিয়াউল আহসান আছেন।
এফএইচ/ইএ/জিকেএস