ওজন কমাতে চাইলে প্রথমে মন হালকা করুন

ওজন কমানোর কথা উঠলেই আমরা প্রথমে চিন্তা করি খাবার, ডায়েট চার্ট আর জিম নিয়ে। কেউ কেউ তো শুধু সবজি আর পানিতে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো-এই সব কিছুর আগে কী আমরা নিজের মনকে জিজ্ঞেস করি, সে কেমন আছে? আসলেই কি আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত পরিবর্তনের জন্য?
অনেক সময় ওজন বাড়ার পেছনে শুধুমাত্র খাবারের ভূমিকা থাকে না; থাকে চেপে রাখা অনুভূতি, একাকীত্ব, মানসিক ক্লান্তি আর বিষণ্ণতা। মন খারাপের সময় অবচেতনে আমরা অনেকেই পছন্দের খাবারের আশ্রয় নেই। মনের ক্লান্তি ঢাকার জন্য মুখ গুটিয়ে ফেলি চকলেট, পিজ্জা বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে। তারপর ধীরে ধীরে ওজন বাড়ে, আর সেই বাড়তি ওজন মনকে আরও ভারী করে তোলে। তৈরি হয় এক দুষ্টচক্র; যেখান থেকে বের হতে হলে, প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে ‘মনের ওজন’ কমানো।
মন খারাপ কি আমাদের মোটা করে তোলে?
শুধু মনের ওপর নয়, দীর্ঘসময় ধরে খারাপ থাকা মানসিক অবস্থার প্রভাব পড়ে শরীরেও। বিষণ্ণতা বা দীর্ঘস্থায়ী মনখারাপ মানুষের ঘুম, খাওয়ার অভ্যাস, চলাফেরা এবং প্রতিদিনের কাজের ছকে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। এরই পরিণতিতে অনেক সময় অজান্তেই বাড়তে থাকে শরীরের ওজন।
খাওয়ার সঙ্গে মনের সম্পর্ক
মন খারাপ হলে কেউ কেউ অস্থিরতায় ভোগেন, আবার কেউ গভীর ক্লান্তিতে তলিয়ে যান। এই অনুভব থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই আশ্রয় নেন প্রিয় খাবার বা জাংক ফুডের। চিনি, চর্বি বা মসলাযুক্ত খাবার সাময়িক আরাম দিলেও দীর্ঘমেয়াদে তা বিপদ ডেকে আনে।
এই সময় যা করা উচিত
>> খেয়াল রাখুন কখন কী খাচ্ছেন, এবং তখন আপনার মানসিক অবস্থা কেমন।
>> স্বস্তি খুঁজে নিন অন্য কোথাও যেমন- গান, বই, ছবি আঁকা বা প্রকৃতির সান্নিধ্যে।
>> ধীরে ধীরে খাওয়ার চেষ্টা করুন, এতে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে ক্ষুধা ও তৃপ্তির সংকেত বুঝতে পারবে।
>> নিজেকে দোষারোপ না করে বুঝতে চেষ্টা করুন, কেন এই পরিবর্তন ঘটছে।
ক্লান্ত শরীর, অবসন্ন মন
বিষণ্ণতা শুধু মনের নয়, শরীরেরও শক্তি কমিয়ে দেয়। বিছানা থেকে উঠতে কষ্ট হয়, হেঁটে যাওয়ার মতো সহজ কাজও কঠিন হয়ে পড়ে। নিয়মিত শরীরচর্চা বাদ পড়ে, যা আত্মবিশ্বাস ও সংযোগ দুইই কমিয়ে দেয়।
সমাধান হতে পারে
>> একেবারে ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন, যেমন দিনে পাঁচ মিনিট হাঁটা।
>> নিজেকে চাপ দেবেন না। শরীরচর্চা মানে নিজের প্রতি যত্ন।
>> সময় নয়, ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিন। যখন ইচ্ছা করে তখনই একটু ব্যায়াম করুন।
>> ক্লান্ত লাগলে বিশ্রাম নিন।
ঘুমের ছন্দ হারায়
কেউ বিষণ্ণতায় পড়ে অতিরিক্ত ঘুমান, আবার কেউ হয়তো রাতে চোখই বন্ধ করতে পারেন না। ঘুমের এই বিঘ্ন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে খাওয়ায়; খিদে বাড়ে বা কমে, এবং ওজনও পরিবর্তিত হয়।
যা করতে পারেন
>> প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
>> ঘরের পরিবেশ বদলান; নরম আলো, পছন্দের গান বা বই ঘুমে সহায়ক হতে পারে।
>> সমস্যা গুরুতর মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- আরও পড়ুন:
হলুদ যতটা উপকারী, অতিরিক্ত হলে ততটাই ভয়ংকর
সচেতনতা হোক নীরব ঘাতকের বিপক্ষে
রক্তের গল্পে বাঁধা জীবন: থ্যালাসেমিয়া দিবসে এক নতুন প্রশ্ন
ওষুধ ও শরীরের প্রতিক্রিয়া
বিষণ্ণতার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ অনেক সময় ক্ষুধা, ঘুম বা বিপাকক্রিয়ায় পরিবর্তন আনে। ফলে শরীরে ও ওজনে তার প্রভাব পড়ে।
করণীয়
>> ওষুধের যেকোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
>> খাবারে ভারসাম্য রাখুন।
>> বোঝার চেষ্টা করুন পরিবর্তনটা কোথায় হচ্ছে?
রুটিনের ছন্দপতন
মন খারাপ থাকলে দৈনন্দিন কাজগুলো ধীরে ধীরে এলোমেলো হয়ে পড়ে। সময়মতো খাওয়াদাওয়া হয় না, কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। দিনগুলো একরকম কাটে না, আবার শরীরও তাল হারিয়ে ফেলে।
এই অবস্থা সামাল নিবেন যেভাবে
>> ছোট ছোট অভ্যাস তৈরি করুন, যেমন-প্রতিদিন সকালে চায়ের সময় পাঁচ মিনিট নিজের সঙ্গে থাকা।
>> ফল ও সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
>> ফোনে রিমাইন্ডার সেট করুন, চেকলিস্ট বানান।
>> সবকিছু একদিনেই করতে হবে এমন না, ধীরে চলাই ভালো।
একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতা ও ওজন
বিষণ্ণতা যখন দীর্ঘস্থায়ী হয়, তখন তা মানুষের সামাজিক সংযোগ কমিয়ে দেয়। একা থাকার ফলে ঘুম, খাওয়া ও শরীরচর্চার অভ্যাস ভেঙে যায়। এই একাকীত্বও ওজন বাড়ার একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
একাকীত্ব দূরে করণীয়
>> প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান।
>> যার সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে, তার সঙ্গে সময় কাটান।
>> প্রয়োজন হলে থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।
মন খারাপ থাকলে ওজন বাড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। বরং এটা শরীরের এক ধরনের ‘কপিং মেকানিজম’(কোনো মানসিক চাপ, দুঃখ, উদ্বেগ বা কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মানুষ যে মানসিক কৌশল বা আচরণগত উপায়গুলো ব্যবহার করে তা কপিং মেকানিজম।)। লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। শুরু করুন ছোট ছোট পদক্ষেপে; এক কাপ গরম চা, পছন্দের গান, দশ মিনিট হাঁটা। মনে রাখবেন, পরিবর্তন একদিনে আসে না, কিন্তু প্রতিটি ছোট প্রচেষ্টাই আপনাকে এগিয়ে নেবে সুস্থ জীবনের দিকে।
তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন
জেএস/জেআইএম