দেখতে স্বাস্থ্যকর হলেও এসব খাবার শরীরে প্রদাহ বাড়াতে পারে
দেখতে স্বাস্থ্যকর খাবার মানেই তা সবার শরীরের জন্য উপকারী হবে, এমন ধারণা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। কিছু খাবার বাইরে থেকে স্বাস্থ্যকর মনে হলেও অতিরিক্ত বা নিয়মিত গ্রহণ করলে শরীরে নীরব প্রদাহ বা ক্রনিক ইনফ্লেমেশন সৃষ্টি করতে পারে।
এই দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ ধীরে ধীরে ক্লান্তি, হজমের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি, জয়েন্টের ব্যথা এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। বিশেষ করে যখন খাবারগুলো প্রসেসড, অতিরিক্ত চিনি বা রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ হয়, তখন ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন খাবারগুলো শরীরে প্রদাহ বাড়াতে পারে-

নারিকেল পানি
নারিকেল পানি প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট থাকলেও খালি পেটে বা অতিরিক্ত পান করলে হজমের সমস্যা, পেট ফাঁপা এবং ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে হজম দুর্বল বা শরীর ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষের ক্ষেত্রে এটি ধীরে ধীরে প্রদাহ বাড়াতে পারে। তাই নারিকেলের পানি উপকারী হলেও সময় ও পরিমাণের ভারসাম্য অত্যন্ত জরুরি।
ফিটনেস বা প্রোটিন বার
বাজারে প্রচলিত অনেক প্রোটিন বা এনার্জি বারে থাকে রিফাইন্ড সুগার, সুগার অ্যালকোহল, কর্ন সিরাপ, প্রিজারভেটিভ এবং ইনফ্ল্যামেটরি সিড অয়েল। এই উপাদানগুলি অন্ত্রের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে এবং শরীরে প্রদাহজনিত (ইনফ্লেমেটরি) সিগন্যাল তৈরি করে। বাইরে থেকে ‘ফিটনেস ফুড’ মনে হলেও, দীর্ঘদিন নিয়মিত খেলে এগুলো মেটাবলিক স্ট্রেস বা শরীরের জৈবপ্রক্রিয়ায় চাপের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

তাজা ফলের রস
ফ্রেশ ফ্রুট জুস অনেকের কাছে স্বাস্থ্যকর মনে হলেও, এতে পুরো ফলের মতো ফাইবার থাকে না। তাই রক্তে চিনি দ্রুত বেড়ে যায়। এই হঠাৎ চিনি বাড়া শরীরের ইনসুলিনে চাপ দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রদাহ বাড়াতে পারে। তাই নিয়মিত ফলের রস খাওয়ার চেয়ে পুরো ফল চিবিয়ে খাওয়া বেশি উপকারী।
ওটস
সাধারণ ওটস অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসেবে কাজ করে, তবে ফ্লেভারড বা ইনস্ট্যান্ট প্যাকেটজাত ওটসে অতিরিক্ত চিনি, কৃত্রিম ফ্লেভার ও প্রিজারভেটিভ থাকে। এগুলো শরীরে মিষ্টির মতো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যা নিয়মিত খেলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং ক্রনিক ইনফ্লেমেশন বাড়াতে পারে।

সয়া জাতীয় খাবার
টফু, সয়া দুধ বা সয়া প্রোটিন অনেকের কাছে স্বাস্থ্যকর বিকল্প মনে হলেও সব শরীর একভাবে সয়া গ্রহণ করতে পারে না। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সয়া হরমোনের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে বা অন্ত্র সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে। বিশেষ করে সয়া প্রসেসড আকারে এবং বেশি পরিমাণে খেলে ধীরে ধীরে অন্ত্রের জ্বালা ও প্রদাহ (ইনফ্লেমেশন) বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

সবজি মানেই স্বাস্থ্যকর নয়
সবজি সাধারণত স্বাস্থ্যকর হলেও কেবল কাঁচা সালাদ নির্ভর ডায়েট সবার জন্য উপযুক্ত নয়। অতিরিক্ত কাঁচা বা ফাইবারসমৃদ্ধ সালাদ নিয়মিত খাওয়া হয়, তবে পেট ফাঁপা, গ্যাস এবং হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই হজমজনিত চাপ থেকেই শরীরে সেকেন্ডারি ইনফ্লেমেশন (দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ) তৈরি হতে পারে। তাই কাঁচা ও রান্না করা সবজির মধ্যে ভারসাম্য রাখা খুবই জরুরি।
প্রদাহ বাড়ায় এমন খাবার শুধুই জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুডেই সীমাবদ্ধ নয়। অনেক সময় ‘হেলদি’ লেবেল দেওয়া খাবারও যদি ভুল সময়, অতিরিক্ত পরিমাণে বা ভুলভাবে খাওয়া হয়, তবে তা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া বোঝা, খাবারের লেবেল খেয়াল করা এবং বৈচিত্র্যময় ডায়েট অনুসরণ করা দীর্ঘমেয়াদে ইনফ্লেমেশন কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও অন্যান্য
আরও পড়ুন:
ভিন্ন ভিন্ন বয়সে হাড় মজবুত রাখতে যা খাবেন
৪০ বছরের পর নারীরা কিডনি রোগে কেন বেশি ভোগেন
এসএকেওয়াই/