দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে হতে পারে ভ্যারিকোস ভেইনস
শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো পা। সারাদিন দেহের পুরো ভার বহন করা থেকে শুরু করে দাঁড়ানো, হাঁটা, দৌড়-সব কাজই এই দুই অঙ্গকে করতে হয়। তাই পায়ের ওপর সামান্য অতিরিক্ত চাপ পড়লেও তার প্রভাব সরাসরি নেমে আসে শিরায়।
এ অবস্থায় পায়ের শিরা ফুলে গিয়ে গাঢ় নীল রং ধারণ করে। অনেক সময় একাধিক শিরা জট পাকিয়ে বা পেঁচিয়ে উঠে ত্বকের ওপর স্পষ্টভাবে ভেসে ওঠে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থাকেই বলা হয় ‘ভ্যারিকোস ভেইনস’।
কাদের হয়
পুরুষদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে যাদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয় বা সারাদিন পায়ে ভর দিয়ে চলাফেরা করতে হয়, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বাড়ে। যাদের দেহের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি, তারাও সহজেই এ সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।
বিক্রয়কর্মী, ট্রাফিক পুলিশ, বাস-ট্রেনের চালকের সহকারী, শিক্ষক-এ ধরনের পেশায় যারা প্রতিদিন দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকেন, তাদের মধ্যে ভ্যারিকোস ভেইনস হওয়ার হার বেশি।
নারীদের ও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। গর্ভাবস্থা, অতিরিক্ত ওজন কিংবা বৃদ্ধ বয়সও এটি হওয়ার একটি কারণ হতে পারে। তাছাড়া পরিবারের কারো যদি এ রোগ থাকে, তাহলে বংশগত কারণে অন্য সদস্যদের মধ্যেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কিন্তু এই রোগ শুরু হয় কীভাবে? চিকিৎসকদের মতে, ভ্যারিকোস ভেইনস মূলত শরীরের রক্ত প্রবাহের সঙ্গে সম্পর্কিত। পায়ের শিরার ভেতরে থাকা ক্ষুদ্র ভাল্বগুলো রক্তকে ওপরের দিকে ঠেলে দিতে সাহায্য করে। কোনো কারণে এই ভাল্বগুলো দুর্বল হয়ে পড়লে বা ঠিকমতো কাজ না করলে রক্ত বিপরীত দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। এর জেরে শিরা ধীরে ধীরে প্রসারিত হয়, ফুলে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত ত্বকের ওপর দৃশ্যমান হয়ে পড়ে। অনেক সময় এটি দেখতে মাকড়সার জালের মতো সবুজ বা নীল শিরার জট হিসেবে চোখে পড়ে।
লক্ষণগুলো কী
শুরুতে হালকা অস্বস্তি থাকলেও ধীরে ধীরে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে-পায়ে ব্যথা, হাঁটার সময় টান লাগা, মাংসপেশিতে খিঁচুনি, কিংবা দিনের শেষে পা ভারী হয়ে যাওয়া। অনেকে পা বা গোড়ালি ফুলে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। ত্বকে শুষ্কতা বা চুলকানি দেখা দিতে পারে, এমন কি ছোটখাটো ক্ষতও সহজে ভালো হয় না।
এই রোগ প্রতিরোধ করবেন যেভাবে-
ভ্যারিকোস ভেইনস অনেক ক্ষেত্রে নীরব থাকে, অর্থাৎ কোনো দৃশ্যমান উপসর্গ নাও থাকতে পারে। এ ধরনের অবস্থায় আলাদা চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি। পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে উপকার পাওয়া যায় এবং ভবিষ্যতের ঝুঁকিও কমে।
১. রক্ত সঞ্চালন সচল রাখতে সবচেয়ে কার্যকর অভ্যাস হলো নিয়মিত হাঁটা। প্রতিদিন অন্তত আধঘণ্টা হাঁটা পায়ের শিরায় রক্ত চলাচল বাড়ায় এবং পেশিকে সক্রিয় রাখে। একইভাবে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং খাবারের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
২. জুতার ক্ষেত্রে উঁচু হিল যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। বরং ছোট হিল বা আরামদায়ক জুতা কাফ মাংসপেশির স্বাভাবিক নড়াচড়া বজায় রাখে, যা শিরার জন্য উপকারী।
৩. দীর্ঘসময় একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকা রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। তাই প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর শরীরের অবস্থানে সামান্য পরিবর্তন আনলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। আর পা ভাঁজ করে বা চেপে বসার অভ্যাস রক্তপ্রবাহে সমস্যা বাড়ায়-তাই এভাবে বসা এড়িয়ে চলাই ভালো।
সূত্র: মায়ো ক্লিনিক, হিন্দুস্তান টাইমস ও অন্যান্য
আরও পড়ুন
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে সোনা পাতা
২০২৫-এ চিকিৎসাবিজ্ঞানে আশা জাগানো ৮ সাফল্য
এসএকেওয়াই/জেআইএম