২০২৫-এ চিকিৎসাবিজ্ঞানে আশা জাগানো ৮ সাফল্য

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:২৬ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

২০২৫ সাল বিজ্ঞানীদের জন্য সহজ ছিল না। তবুও এই বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে কয়েকটি যুগান্তকারী অগ্রগতি আমাদের ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যসেবায় নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। মেনোপজ, ক্যানসার, অ্যালার্জি, এইচআইভি, জেনেটিক থেরাপি — প্রায় সব ক্ষেত্রেই এসেছে নতুন সাফল্য।

২০২৫-এ চিকিৎসাবিজ্ঞানে আশা জাগানো ৮ সাফল্য

১. মেনোপজের সমস্যাগুলোর জন্য প্রথম নন-হরমোনাল চিকিৎসা

মেনোপজে বেশিরভাগ নারীরই হট ফ্ল্যাশ (হঠাৎ শরীর উত্তপ্ত লাগা) ও নাইট সোয়েট (রাতে অতিরিক্ত ঘাম) হয়। হরমোন থেরাপি কার্যকর হলেও অনেক নারীর জন্য এটি নেওয়া নিরাপদ নয়।

২০২৫ সালে এফডিএ প্রথমবার নন-হরমোনাল দুটি ওষুধ অনুমোদন করেছে — লিনকুয়েট (এলিনজানেটান্ট) এবং ভিওজাহ (ফেজোলিনেটান্ট)। এই ওষুধগুলো হাইপোথ্যালামাসে থাকা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী নার্ভ সেলকে লক্ষ্য করে কাজ করে, ফলে হট ফ্ল্যাশ কমে।

২০২৫-এ চিকিৎসাবিজ্ঞানে আশা জাগানো ৮ সাফল্য

২. অ্যালার্জি আক্রান্ত শিশুদের জন্য সুচবিহীন ইপিনেফ্রিন

গুরুতর অ্যালার্জি হলে দ্রুত ইপিনেফ্রিন (শরীরের বিপজ্জনক অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া থামানোর ওষুধ) দিতে হয়। এবার সুচ ছাড়াই নাকে স্প্রে করে দেওয়া যায় এমন নেফি এসেছে।

৪ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুদের জন্য অনুমোদিত এই স্প্রে জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত রক্তে শোষিত হয়। দীর্ঘদিন পর শিশুদের অ্যালার্জি চিকিৎসায় এটি বড় অগ্রগতি।

২০২৫-এ চিকিৎসাবিজ্ঞানে আশা জাগানো ৮ সাফল্য

৩. ‘রিজেনারেটিভ মেডিসিনে’ বিশাল অগ্রগতি

কাটা অঙ্গ পুনরায় জন্মানো—আগে শুধু সায়েন্স ফিকশনের গল্প ছিল। এবার গবেষকেরা সালাম্যান্ডারের অঙ্গ পুনর্জন্মের রহস্যে থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম ও একটি জিন চিহ্নিত করেছেন। মানুষের মধ্যেও একই ধরনের মলিকিউল থাকায় ভবিষ্যতে গুরুতর ইনজুরির পর অঙ্গ পুনর্গঠন সম্ভব হতে পারে।

এছাড়াও বানরদের ওপর পরীক্ষায় প্রথম ইমপ্লান্টেবল হার্ট প্যাচ তৈরি হয়েছে।

স্টেম সেল থেকে সফলভাবে ইউরেটার (কিডনি থেকে মূত্র বহনকারী নালী) বানানো গেছে।

২০২৫-এ চিকিৎসাবিজ্ঞানে আশা জাগানো ৮ সাফল্য

৪. এক শিশুর জন্য কাস্টম জিন এডিটিং

সিআরআইএসপিআর-ক্যাস৯ বা ক্রিসপার জিন এডিটিং প্রযুক্তি এ বছর ইতিহাস তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে একটি শিশু জন্মায় বিরল জেনেটিক রোগ নিয়ে, যেখানে শরীরে অ্যামোনিয়া বিপজ্জনকভাবে জমে মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করে। তার জন্য বিজ্ঞানীরা ব্যক্তিগতভাবে তৈরি একটি জিন ঠিক করে লিভারে প্রবেশ করান। শিশুটির অবস্থা নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়েছে। ভবিষ্যতে বিরল রোগে আক্রান্ত অসংখ্য মানুষের চিকিৎসায় এটি নতুন যুগের সূচনা করবে।

২০২৫-এ চিকিৎসাবিজ্ঞানে আশা জাগানো ৮ সাফল্য

৫. এইচআইভি প্রতিরোধে ইনজেকশন

এইচআইভি প্রতিরোধের জন্য আগে প্রতিদিন ওষুধ খাওয়া লাগত। এখন ইয়েজটুগো (লেনাকাপাভির) - এফডিএ অনুমোদিত নতুন ইনজেকশন — মাত্র ৬ মাসে একবার নিলেই প্রায় ১০০ শতাংশ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সমস্যা বলছে, এটি এইডস প্রতিরোধে একটি বড় মাইলফলক।

২০২৫-এ চিকিৎসাবিজ্ঞানে আশা জাগানো ৮ সাফল্য

৬. ভ্যাকসিন শুধু সংক্রমণ নয়, আরও বড় ঝুঁকি কমায়

নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, হারপেস জোস্টার (শিংগলস) ভ্যাকসিন নিলে হার্ট অ্যাটাক ১৮ শতাংশ ও স্ট্রোক ১৬ শতাংশ কমে। একই ভ্যাকসিন ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিও এক-তৃতীয়াংশ কমাতে পারে।

ফুসফুস বা স্কিন ক্যানসারের রোগীদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এমআরএনএ ভ্যাকসিন নেওয়া ইমিউনোথেরাপির কার্যকারিতা বাড়ায়।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভ্যাকসিন দেহের ইমিউন সিস্টেমকে এমনভাবে সক্রিয় রাখে, যা দীর্ঘমেয়াদে অন্য রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে।

২০২৫-এ চিকিৎসাবিজ্ঞানে আশা জাগানো ৮ সাফল্য

৭. প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার শুরু হওয়ার আগেই থামানোর সম্ভাবনা

প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার খুব দেরিতে ধরা পড়ে, তাই এটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী। এবার গবেষকেরা এফজিএফআর২ নামের এক প্রোটিনকে ব্লক করলে ক্যানসার সেল তৈরি হওয়া থেমে যায় — এমন প্রমাণ পেয়েছেন।

যেহেতু এফজিএফআর২ ব্লকার ওষুধ ইতিমধ্যে বাজারে আছে, তাই ভবিষ্যতে উচ্চঝুঁকির ব্যক্তিদের ওপর ট্রায়াল শুরু হতে পারে।

২০২৫-এ চিকিৎসাবিজ্ঞানে আশা জাগানো ৮ সাফল্য

৮. মানুষের দেহের সবচেয়ে বড় ‘অ্যাটলাস’ তৈরি

যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাংক ১ লাখ মানুষের শরীরের ১ বিলিয়নের বেশি স্ক্যান সংগ্রহ করেছে — এটাই দেহের সবচেয়ে বড় মেডিকেল ডেটাসেট।

এমআরআই, আলট্রাসাউন্ড, জেনেটিক তথ্য, খাওয়া-দাওয়া, পরিবেশ — সব মিলিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন বুঝতে পারছেন মানুষের শরীর সময়ের সঙ্গে কীভাবে বদলায়। এরই মধ্যে হাজার হাজার গবেষণা এই ডেটা ব্যবহার করছে।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

এএমপি/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।