কবিরত্ন এম এ হকের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী

ফরিদপুরের কবিরত্ন এম এ হকের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০৬ সালের ১৩ আগস্ট পরলোক গমন করেন।এলাকায় তিনি ‘কবিরত্ন এম এ হক’ ও ‘কবি সাহেব’ নামে পরিচিত। তাঁর জন্ম ১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ব্যাংকেরচর গ্রামে।

এম এ হক কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমি থেকে ১৯৪৮ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করে খুলনা বিএল কলেজে ভর্তি হন। এ কলেজ থেকে ১৯৫০ সালে আইএ পাস করে একই কলেজে বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। বিএ ডিগ্রি লাভের আগেই তিনি শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। এলাকায় তিনি যুক্তিবাদী, পণ্ডিত, শিক্ষানুরাগী হিসেবেও পরিচিত। তিনি একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

এম এ হক জীবনে বহু খ্যাতনামা সাহিত্যিকের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। তিনি পল্লীকবি জসীম উদদীন এবং সুফী মোতাহের হোসেনের স্নেহভাজন ছিলেন। তারা ছিলেন তার গুণমুগ্ধ পাঠক ও অনুপ্রেরণাদাতা। তার কাব্য-প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তারা এম এ হকের ‘এপার-ওপার’ গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার এবং গল্পকার।

আরও পড়ুন: কালকিনিতে কবি-সাহিত্যিকদের মিলনমেলা

তিনি ‘মধুস্মরণে’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন। এছাড়া তৈরি করেছিলেন ‘শুকতারা সাহিত্য গোষ্ঠী’ নামে একটি সংগঠন। তিনি তার সাহিত্য সাধনার ভাবধারা ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন গ্রামে গ্রামে। যা আজও মানুষের মুখে মুখে।

তার রচিত গ্রন্থসমূহ- শুকতারা (কাব্যগ্রন্থ), পথদিশারু (কাব্যগ্রন্থ), এপার-ওপার (লোকগানের সংকলন), কচি মনের খোরাক (পাকিস্তান আমলে প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুতপঠন হিসেবে যশোর বোর্ডে পাঠ্য), দর্দে নবী (ইসলামি গান), হক-বচন, ছন্দ-বন্ধ-বাগধারা (অপ্রচলিত এবং হারাতে বসা বাগধারা সংকলন এবং শিক্ষার্থীদের উপযোগী ছন্দে বাক্য রচনা), দেশের গান, দাদুর ছড়া (শিশুসাহিত্য), স্মৃতিকথা (মুনীর চৌধুরী, ডক্টর এনামুল হক, কবি শাহাদাৎ হোসেন, সৈয়দ আলী আহসান, বিজয় সরকার, কবি আশরাফ আলী খান প্রমুখের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্মৃতি), কাঙ্গাল পথিক (কাব্যগ্রন্থ) এবং মুক্তির গান (সুফি কবিতা)।

এম এ হকের সাহিত্যিক চেতনায় লোকজীবন ও লোক-সংস্কৃতির গভীর রূপ এবং আধুনিক জীবনবোধের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল।

আরও পড়ুন: দুই দশক পর মঞ্চে ফিরছে সেলিম আল দীনের ‘প্রাচ্য’

যশোর সাহিত্য সংঘ তাকে ‘কবিরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করে। এছাড়া যশোরের লোককবি, ফরিদপুরের কবি পরিচিতি গ্রন্থে তার কবিতা ও জীবনী রয়েছে। সাবেক বাংলা উন্নয়ন বোর্ড (বাংলা একাডেমি) থেকে প্রকাশিত প্রিন্সিপ্যাল ইব্রাহীম খাঁ সম্পাদিত বাংলাদেশের কবি পরিচিতি গ্রন্থে তার নাতিদীর্ঘ জীবনী রয়েছে। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘চরিতাভিধানে’ কবিরত্নের জীবন ও কৃতিত্ব অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

কবির ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কবিরত্ন এম এ হক স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।

এন কে বি নয়ন/এসইউ/জেআইএম