দুই দশক পর মঞ্চে ফিরছে সেলিম আল দীনের ‘প্রাচ্য’

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:২০ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২৩

দুইদশক পর মঞ্চে আসছে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের নাটক প্রাচ্য। ঢাকা থিয়েটারের প্রযোজনায় নাটকটি আবার মঞ্চে আসছে।

দলটির সুবর্ণজয়ন্তীতে ২৮ ও ২৯ জুলাই ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় নাটকটির প্রদর্শনী হবে। নাটকটির নির্দেশনা দিচ্ছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। শহীদুজ্জাম সেলিম, রোজী সিদ্দিকী ছাড়াও প্রাচ্যর সূত্রধর হিসেবে মঞ্চে থাকছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী শিমূল ইউসুফ আর নাটকটির নির্দেশক নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

প্রাচ্যের নাট্য ঘটনাটি বহুল প্রচলিত বেহুলা-লক্ষিন্দর কাহিনির বিপরীতচিত্র। লাঠিয়াল সয়ফরচান কাজলাকান্দা গ্রামের নোলককে বিয়ে করে নিজ গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। যাত্রা পথের কিছু ঘটনা এই নাটকের পরিণতি নির্ধারণ করে দেয়। নাটক এগিয়ে যায় ট্রাজেডির দিকে। বাসর ঘরে নোলক সর্প দংশনে মারা যায়।

সাপের খোঁজে সয়ফরচান স্বর্গমত্য ওলটপালট করতে থাকে এবং অবশেষে সাপের সন্ধান পেলেও সাপকে সে মারতে পারে না। নাটকের প্রথম দৃশ্যে সয়ফরচানের বসত বাড়ি, তার দাদী ও পড়শীদের দেখা যায়। এই দৃশ্যে গ্রাম্য মাতব্বর জিতু পুরানো লেনদেনের হিসাব দেখিয়ে সয়ফরচানের হালের বলদ নিয়ে যায়। এভাবে নাটকীয়তার মধ্যে এগিয়ে যেতে থাকে প্রাচ্যের পাঁচালী।

সয়ফর আর নোলকের পরিচয় হয় এক গ্রাম্য যাত্রানুষ্ঠানে। পরিচয় থেকে পরিণয় অতঃপর অমোঘ নিয়তি মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে নাটকের দ্বিতীয় পর্যায়ের আরম্ভ। এখানে ট্রাজেডির নায়ক ও সাপের মধ্যেকার টানটান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। সাপকে মারতে না পারার ব্যর্থতা আর সয়ফরের বিভ্রম জিতু মাতব্বর ও নোলকের প্রতিমূর্তি এক অদৃশ্য বাধার কারণে অপরাজেয় থেকে যায়।

শিমূল ইউসুফ, শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকী, ফারুক আহমেদ, নাসরিন নাহারসহ নাটকটির ৭০ ভাগের মতো শিল্পী পুরোনো চরিত্রেই ফিরছেন। সেলিম আল দীনের জীবদ্দশায় ২০০০ সালে মঞ্চে প্রথম প্রাচ্য করে ঢাকা থিয়েটার, বছর তিনেক নিয়মিত প্রদর্শনীর পর নাটকটি আর মঞ্চে আনা হয়নি। সেলিম আল দীনের মৃত্যুর পর এবারই প্রথম নাটকটি মঞ্চে তুলছে ঢাকা থিয়েটার।

jagonews24

‘দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পতত্ত্ব’এর রীতিতে লেখা সেলিম আল দীনের নাটকগুলোতে নিচুতলার মানুষের সামাজিক নৃতাত্ত্বিক পটে তাদের বহুস্তরিক বাস্তবতা উঠে আসে। জণ্ডিস ও বিবিধ বেলুন, মুনতাসির, শকুন্তলা, কিত্তনখোলা, কেরামত মঙ্গল, হাতহদাই, যৈবতী কন্যার মন, চাকা, হরগজ, বনপাংশুল, প্রাচ্য, নিমজ্জন, ধাবমান, স্বর্ণবোয়াল ইত্যাদি মঞ্চসফল নাটক রচনার মধ্য দিয়ে ক্রমাগত তিনি নিজেকে অতিক্রম করে যেতে থাকেন। সেলিম আল দীনের নাটক ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য।

সেলিম আল দীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৬ সালে জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার এবং ২০০৭ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় তাকে। এ বছর সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) দেয়া হয় তাকে।

বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্যও ছিলেন। বর্ণময় কর্মজীবনে দেশে-বিদেশে বহুবার সংবর্ধিত হয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি মর্ত্যলোকের মায়া ত্যাগ করে চলে যান অনন্তলোকে। কিন্তু রেখে যান তার অবিনশ্বর মহাকাব্যিক সৃষ্টি সম্ভার।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।