রম্যগল্প

মতিন মিয়ার যন্ত্রের গণ্ডগোল

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৩:১২ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩

আগে কানে শুনতে পেতেন না মতিন মিয়া। কিছুদিন আগে ডাক্তারের কাছে গিয়ে কানে ব্লুটুথ ইয়ার ফোনের মতো একটা যন্ত্র লাগিয়ে এনেছেন। এরপর থেকে বেশ ভালোই কানে শুনছেন। তবে ইদানিং কিছু সমস্যায় পড়েছেন।

যন্ত্রটা দিনের আলোয় ঠিকঠাক কাজ করলেও রাতে বাজে বিপত্তি। রেডিওর ঝিরঝিরানির মতো আওয়াজ, কখনোবা গুলির শব্দ। মনে হয় এই বুঝি কেউ গুলি করলো। হঠাৎ বোমার আওয়াজ। একদিন তো বোমার আওয়াজে ঘর থেকে দৌড়ে পালিয়েছেন। পরে দেখেন পরিবেশ একদম শান্ত। বুঝতে পারলেন, যন্ত্রের ভেতরেই যত গণ্ডগোল।

আরও বড় সমস্যা রাইফেলের আওয়াজে মতিন মিয়া প্রায় সময় ঘুমের ভেতরেই খাট থেকে পড়ে যান। অজানা শব্দ যন্ত্র থেকে ভেসে আসে। তিনি ভাবলেন, যন্ত্রটার হয়তো মেকানিক দেখানো দরকার।

মতিন মিয়া যেই বাসায় সাবলেট থাকেন; সেই বাসার ভাড়াটিয়া কুদ্দুস আলী। সবাই ডাকে কুদ্দুস ভাই বলে। তিনি একজন ভালো মেকানিক। পাশাপাশি নিজের দোকান আছে। আগে একবার মতিন মিয়ার টিভির রিমোট ঠিক করে দিয়েছিলেন। কানে শুনতে পান না দেখে মতিন মিয়াকে খুব সম্মান দেখান তিনি। কুদ্দুস আলী একাই থাকেন এখানে। স্ত্রী-সন্তান থাকে গ্রামে। মতিন মিয়া থাকেন পাশের রুমে একা।

সহজ-সরল মতিন যন্ত্রটা নিয়ে কুদ্দুস আলীর কাছে গিয়ে সব খুলে বললেন। সব শুনে কুদ্দুস আলী লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন। আর চুপ রইলেন। চোর ধরা পড়ার পর যেমন একটা মুখ হয়; তেমন একটা মুখ হয়েছে কুদ্দুস আলীর। চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছেন না। অথচ যখন মতিন মিয়া কানে শুনতেন না; তখন কুদ্দুস আলী ইশারায় সব বুঝিয়ে বলতেন।

এখন মতিন মিয়া কানে শোনেন একথা যেন কুদ্দুস আলীর কানে বোমার মতো লাগল। অথচ কুদ্দুস মিয়ার তো খুশি হওয়ার কথা। বিষয়টি মতিন মিয়ার মাথায় ঢুকলো না।

মূলত কুদ্দুস আলীর মোবাইল গেমসের প্রতি আসক্তি ছিল। মতিন মিয়া কানে শুনতে না পাওয়ায় সমস্যা হবে না ভেবে তিনি ইয়ার ফোন ব্যবহার করতেন না। কিন্তু পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন লোক রাতে মোবাইলে গেমস খেলেন, জানতে পারলে এলাকায় মান-সম্মান থাকবে না ভেবেই কুদ্দুস আলী চুপ থাকেন।

একটু পর কুদ্দুস আলী কোথা থেকে যেন দুই গ্লাস গরম দুধ আনলেন। দুজনে পান করতে করতে কুদ্দুস আলী বললেন, ‘ভাই, আজকে থেকে আর কোনো সমস্যা হবে না।’
মতিন মিয়া বললেন, ‘মানে? আপনি তো যন্ত্রটা ছুঁইয়েও দেখলেন না।’
কুদ্দুস বললেন, ‘আরে ভাই! এটা আপনি বুঝবেন না। এই যে দুধ খাচ্ছেন, এটা আমার পরিচিত এক কবিরাজের পড়া দুধ। খাওয়া শেষে বাসায় চলে যান। আর এই সমস্যার কথা কাউকে বলবেন না। বললে দুধের জাদু কিন্তু কাজ করবে না।’

মতিন মিয়া বাসায় চলে আসেন। এরপর থেকে কোনো রাতেই যন্ত্রে সমস্যা হয়নি। চলছে নিখুঁতভাবে। কুদ্দুস আলীর তেলেসমাতি কারবার দেখে মতিন মিয়া মুগ্ধ। হাতের কাজের সঙ্গে জাদুবিদ্যার খোঁজও রাখেন ভেবে মতিন মিয়ার মুখে বিস্ময়ের হাসি ফুটে উঠলো।

ঠিক করলেন কুদ্দুস আলীর দোকানে আরেকবার গিয়ে এক গ্লাস দুধ পান করবেন। কারণ সেলুনে চুল কাটাতে গিয়ে কাঁচির কুছকুছ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন না তিনি। এভাবে চুল কেটে শান্তি পাচ্ছেন না। তাই মতিন মিয়া আবারও চললেন কুদ্দুস আলীর দোকানে দুধ পান করতে।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।