জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বাধা
কাগজে বহিষ্কার বাস্তবে বহাল রামেক চিকিৎসকরা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বাধা দেওয়া ও শান্তি সমাবেশের আয়োজন করাসহ নানা অভিযোগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ছাত্রলীগ নেতাসহ ২০ শিক্ষার্থী ও আওয়ামীপন্থি ১২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। রামেক প্রশাসন এ-সংক্রান্ত একটি আদেশও জারি করে। তবে সেই আদেশ কার্যকর হয়নি আজও।
ছাত্রদের রাখা হয় ইন্টার্নশিপের বাহিরে। শিক্ষকদের একাডেমি কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এখনো ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা।
রামেক সূত্র জানায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তদন্তে গঠন করা হয় ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলে। পরে আওয়ামীপন্থি ১২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাদের মধ্যে ছয় শিক্ষককে একাডেমি কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
‘মার্শাল, পলাশ ও শাহিন স্যার একদিনও ক্লাস বন্ধ রাখেননি। তারা নিষেধাজ্ঞা আমলে না নিয়ে শুরু থেকেই ক্লাস ও পরীক্ষা নিচ্ছেন। তারা আমাদের পরীক্ষাও নিচ্ছেন। তারা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সক্রিয় নেতা। ঘৃণা হয় তাদের ক্লাস করতে। তারপরও আমরা বাধ্য হচ্ছি তাদের ক্লাস করতে।’
তারা হলেন রামেকের চিকিৎসক রোকেয়া খাতুন, অধ্যাপক হাসিবুল আহসান মার্শাল, আবুল কালাম মোহাম্মদ আসাদ পলাশ, সুব্রত ঘোষ, আসিফ ইকবাল ও শাহিন অহম্মেদ। কাগজে-কলমে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাস্তবে ক্লাস নেওয়াসহ সব একাডেমি কার্যক্রমে সক্রিয় তারা। কেউ কেউ এখনো রয়েছেন বিভাগীয় প্রধান হিসেবে।
- আরও পড়ুন:
ইন্টার্নশিপ না করে বেতনও তুলে নিয়েছেন সেই ছাত্রলীগ নেতা
রামেক হাসপাতালের আইসিইউ যেন আরেক সন্তান ডা. আবু হেনার
রাজশাহী বিভাগে করোনা টেস্টে ভরসা রামেক
রামেকে রোগীর চাপ, অলস পড়ে আছে শিশু হাসপাতাল
রামেক হাসপাতালে ৯ নকল এসি লাগালেন ঠিকাদার
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ডেন্টাল ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক হাসিবুল আহসান মার্শাল, আবুল কালাম মোহাম্মদ আসাদ পলাশ ও শাহিন আহম্মেদ এখনো ক্লাস নিচ্ছেন। এদের মধ্যে আবুল কালাম মোহাম্মদ আসাদ পলাশ পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট্রি বিভাগের প্রধান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, ‘মার্শাল, পলাশ ও শাহিন স্যার একদিনও ক্লাস বন্ধ রাখেননি। তারা নিষেধাজ্ঞা আমলে না নিয়ে শুরু থেকেই ক্লাস ও পরীক্ষা নিচ্ছেন। তারা আমাদের পরীক্ষাও নিচ্ছেন। তারা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সক্রিয় নেতা। ঘৃণা হয় তাদের ক্লাস করতে। তারপরও আমরা বাধ্য হচ্ছি তাদের ক্লাস করতে।’
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে ডেন্টাল ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক হাসিবুল আহসান মার্শালকে ফোন করা হলেও তিনি জানান, তিনি পরীক্ষা নিচ্ছেন। কীভাবে পরীক্ষা নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামনাসামনি আসেন কথা হবে।
‘রাজশাহী মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তদন্তে গঠন করা হয় ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলে। পরে আওয়ামীপন্থি ১২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাদের মধ্যে ছয় শিক্ষককে একাডেমি কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম মোহাম্মদ আসাদ পলাশ বলেন, তিনি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না। ইউনিট হেডই সব বলতে পারবেন।
সকালে রামেক ডেন্টাল ইউনিট প্রধান ডা. আবুল হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তারা সবাই দু-একটি করে ক্লাস নিচ্ছেন।
- আরও পড়ুন:
৫ আগস্ট সকালে সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে ঘুম ভাঙে: অধ্যাপক ইয়াসমিন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থান
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আগে কোনো দল ক্ষমতায় আসতে পারবে না
মিডিয়ায় আওয়ামী লীগকে প্রাসঙ্গিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও কেন দিল্লি-পিন্ডি স্লোগান দিতে হচ্ছে
ট্রেন ছাড়ার পর স্টেশন মাস্টারকে বলে ট্রেনে ওঠার সুযোগ নেই
কীভাবে ক্লাস নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রিন্সিপাল এখনো লিখিত কোনো চিঠি দেননি। তাই বিষয়টি কার্যকর করা হয়নি। বিষয়টি তিনিই (প্রিন্সিপাল) বলতে পারবেন।’
তবে দুপুরে আবার ফোন করে ডা. আবুল হোসেন বলেন, তারা স্বেচ্ছায় ক্লাস নিচ্ছেন। পরীক্ষা নেন না। তবে বিষয়টি তিনি দেখছেন। পাশাপাশি ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে রামেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. ফয়সাল আলম বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে। তবে বাস্তবে কী অবস্থা সেটি জানি না। ডেন্টাল আলাদা একটি ইউনিট। তাই তারাই এটি সমাধান করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেন্টাল ইউনিট প্রধানই নিষেধাজ্ঞা কমিটিতে ছিলেন। তার এটি কার্যকর করার কথা। কেন তিনি এটি করেননি, সে বিষয়ে আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এসআর/জেআইএম