সংস্কার নিয়ে ঐক্য কতদূর?
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিয়েছে রাষ্ট্র কাঠামোর বিভিন্ন খাত সংস্কারে। এ লক্ষ্যে দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। সেগুলো হলো- সংবিধান, বিচার, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শ্রম, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম ও নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
এরই মধ্যে এসব সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে। তবে এসব সংস্কার বাস্তবায়ন নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে সংস্কার কমিশনগুলোর বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। তবে ওই বৈঠকের পর নতুন বৈঠকের তারিখ ঘোষণা বা এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জানিয়েছিলেন তারা বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের লিখিত কপি হাতে পাননি। লিখিত কপি হাতে পাওয়ার পর তারা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত জানাবেন। এরপর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় বৈঠক কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হবে সে সম্পর্কে দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি।
রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তাবিত বিভিন্ন সংস্কারের বিষয়ে একমত হতে পারে, কিছুটা সংশোধন সাপেক্ষে একমত হতে পারে অথবা তারা একমত না-ও হতে পারে। কিছু সংস্কার এ মুহূর্তে না-ও চাইতে পারে। তবে সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে একমত হওয়া জরুরি।
-প্রধান উপদেষ্টা
তবে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল শনিবার (১ মার্চ) জানান, শিগগির দ্বিতীয় দফার বৈঠক শুরু হবে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলের নেতাদের জানান, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জনসাধারণকে জানাতে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
- আরও পড়ুন
রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেই জাতীয় ঐকমত্য সম্ভব
জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত হবে জুলাই সনদ-নির্বাচনের দিনক্ষণ
জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র
সেসময় তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তাবিত বিভিন্ন সংস্কারের বিষয়ে একমত হতে পারে, কিছুটা সংশোধন সাপেক্ষে একমত হতে পারে অথবা তারা একমত না-ও হতে পারে। কিছু সংস্কার এ মুহূর্তে না-ও চাইতে পারে। তবে সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে একমত হওয়া জরুরি। একমত হলে কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সে উপায় বেরিয়ে আসবে। একমত না হলে আমাদের মুক্তি নেই।

গত সপ্তাহে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের কাছে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক জানতে চান, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের কপি পাঠানো হয়েছে কি না? জবাবে শফিকুল আলম বলেন, এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে রিপোর্টের কপি পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে জুলাই সনদ ঘোষণার চেয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে বেশি আলোচনা চলছে। এমনকি জুলাই সনদ ঘোষণার দাবি তোলা শিক্ষার্থীরাও নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে এখন দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জুলাই সনদ ঘোষণার দাবি জানিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুরুর দিকে তারা নিজেরাই রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জুলাই সনদ ঘোষণা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে সব রাজনৈতিক দল ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী অংশীজনের সর্বসম্মতিক্রমে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে বলে জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের এ সিদ্ধান্তের পর শিক্ষার্থীরা তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে বৈঠক করে সরকার। ওই বৈঠকে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদে সই করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
তবে বর্তমানে জুলাই সনদ ঘোষণার চেয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে বেশি আলোচনা চলছে। এমনকি জুলাই সনদ ঘোষণার দাবি তোলা শিক্ষার্থীরাও নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে এখন দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
- আরও পড়ুন
আবারও বলছি নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে: প্রেস সচিব
কমিশনের পর কমিশন হয় প্রশাসন থাকে সেই তিমিরেই
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ঘিরে জনপ্রশাসনে ফের অসন্তোষ
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন ও হাল ধরেছেন সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জনসমাবেশের মাধ্যমে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ বা এনসিপি নামে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চায় নতুন এ দল। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের জনগণ তাদের পক্ষে থাকবে কি না এ নিয়েও আলোচনা রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
অন্তর্বর্তী সরকার বারবার বলেছে, সব রাজনৈতিক দল যদি মনে করে কম সংস্কার করে দেশ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হবে- তাহলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলো যদি আরও সংস্কার করে পরে নির্বাচন করতে চায়, সেক্ষেত্রে আরও তিন মাস দেরি হতে পারে।
-প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল শনিবার দলীয় এক সভায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান। তার এ বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শনিবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম বলেন, আমরা আবারও বলছি নির্বাচনের রোডম্যাপ কিন্তু দেওয়া হয়েছে। বিএনপি হয়তোবা নির্দিষ্ট তারিখ চাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা কিন্তু বলে দিয়েছি, অন্তর্বর্তী সরকার বারবার বলেছে, সব রাজনৈতিক দল যদি মনে করে কম সংস্কার করে দেশ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হবে- তাহলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলো যদি আরও সংস্কার করে পরে নির্বাচন করতে চায়, সেক্ষেত্রে আরও তিন মাস দেরি হতে পারে। তবে এপ্রিল থেকে কালবৈশাখী ঝড় ও বর্ষা শুরু হয়, সেই সময়টা নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় না।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ আবার কবে অনুষ্ঠিত হবে- এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, আশা করছি সংলাপ খুব শিগগির শুরু হবে।
এমইউ/কেএসআর/জেআইএম