অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে জুলাই সনদ প্রকাশ করবো: প্রধান উপদেষ্টা

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:৪৯ পিএম, ১৭ জুন ২০২৫
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার নতুন হাইকমিশনার সুসান রাইল

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আগামী মাসে ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে আমরা ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ করবো।

মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার নতুন হাইকমিশনার সুসান রাইল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে এ কথা বলেন তিনি। সাক্ষাতে অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার কার্যক্রম, নির্বাচন প্রস্তুতি, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অনেক বছর পর মানুষ, বিশেষ করে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাওয়া তরুণরা, একটি বাস্তব ও মুক্ত ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবে। আমি বিশ্বাস করি এটি একটি উৎসবমুখর এবং আশাব্যঞ্জক উপলক্ষ হবে।’

অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কার্যক্রম পুনরায় চালুর জন্য দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ভিসার আবেদন অনলাইনে জমা দেওয়া যাবে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় ৬৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছেন, যার মধ্যে ১৪ হাজার শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন

তার সরকারের সংস্কার উদ্যোগগুলো তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি বিশৃঙ্খল সময়ের পর আমরা এখন ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মনোযোগ রয়েছে সাংবিধানিক, বিচারিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের ওপর— যা একটি শক্তিশালী বাংলাদেশের ভিত্তি গঠনে সহায়ক। আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি, যাতে একটি মসৃণ ও শান্তিপূর্ণ উত্তরণ সম্ভব হয়। আগামী মাসে ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে আমরা ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ করবো।’

এসময় নির্বাচনী সহায়তা বিষয়ে হাইকমিশনার রাইল বলেন, অস্ট্রেলিয়া জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক, কারিগরি ও পরিচালনাগত সক্ষমতা বাড়াতে ২০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার অনুদান দেবে।

বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পৌঁছেছে, যা গত পাঁচ বছরে গড়ে বার্ষিক ১৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।’

হাইকমিশনার রাইল আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও অভিবাসীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।’ তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস কর্মসূচির মাধ্যমে তৈরি হওয়া তিন হাজারের বেশি বাংলাদেশি অ্যালামনাই এখন দেশের অগ্রগতিতে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখছে।’

জবাবে অধ্যাপক ইউনূস অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি স্কলারশিপ দেওয়ার আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশে বসবাসরত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য মানবিক সহায়তা আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন

জবাবে হাইকমিশনার রাইল বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি আরও ৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে বিভিন্ন অংশীদার সংস্থার মাধ্যমে। এর ফলে ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য অস্ট্রেলিয়ার মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে।’

তিনি বলেন, ‘যখন মিয়ানমারে পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে, তখন রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিতে অস্ট্রেলিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।’

বাংলাদেশে নতুন দায়িত্ব নিয়ে হাইকমিশনার রাইল বলেন, ‘এখানে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের প্রাণবন্ত সংস্কৃতি ও গতিশীল রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি মুগ্ধ।’

সাক্ষাতে আরও উপস্থিত ছিলেন এসডিজি সমন্বয়কারী ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক উইংয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম।

এমইউ/এমএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।