‘জুলাই সনদ’ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে দলগুলোর অঙ্গীকারনামা নেওয়া হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৪ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২৫

জুলাই জাতীয় সনদে থাকা সুপারিশগুলো পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের প্রথম দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা নেওয়া হবে।

সোমবার (২৮ জুলাই) জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের অংশবিশেষের খসড়া পাঠিয়েছে।

খসড়ার একটি কপি জাগো নিউজের হাতে এসেছে। যেখানে জুলাই সনদের পটভূমি, সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন, কার্যক্রম এবং জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা রয়েছে। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যে হওয়া সংস্কার সুপারিশগুলো দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শেষে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে এতে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, খসড়াটি এসেছে মাসব্যাপী রাজনৈতিক সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতে, যা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এই সনদে একটি বাধ্যতামূলক রোডম্যাপ নির্ধারিত হয়েছে যা গণতান্ত্রিক জবাবদিহি পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন নিশ্চিতকরণ এবং দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃত্ববাদ ও পদ্ধতিগত দুর্নীতির কবলে পড়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কারের লক্ষ্য নির্ধারণ করে।

এনডোর্সমেন্ট ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি দেবে যে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণআন্দোলনে নিহত হাজারো নাগরিকের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাবে এবং এই সনদকে একটি সম্মিলিত নৈতিক দায় হিসেবে গ্রহণ করে তা পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে; দেশের সাংবিধানিক কাঠামো, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, পুলিশ এবং দুর্নীতিদমন ব্যবস্থাকে আইনি ও নীতিগত সংস্কারের মাধ্যমে পুনর্গঠন করবে; নির্বাচিত পরবর্তী জাতীয় সংসদের প্রথম দুই বছরের মধ্যে সনদে উল্লিখিত সব আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বাস্তবায়ন করবে; এবং গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য বাধ্যতামূলক আইনি গ্যারান্টি প্রদান করবে।

আরও পড়ুন

এছাড়াও, রাজনৈতিক দলগুলো সনদে বর্ণিত আইনি, ঐতিহাসিক ও সাংবিধানিক সুরক্ষাসমূহের সংরক্ষণ ও শ্রদ্ধা জানাবে; ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আলোকে একটি ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক পদক্ষেপ হিসেবে এই সনদকে স্বীকৃতি দেবে; এবং ঘোষণার শেষাংশে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ করে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলনের লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

জাতীয় সনদের প্রেক্ষাপটের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ এসেছে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়। ওই আন্দোলনের মূল দাবি ছিল ন্যায়বিচার, সুশাসন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা। এতে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং আরও অনেক আহত হন। এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেন এবং ২০২৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। মোট ৩৫টিরও বেশি রাজনৈতিক দল ও জোট এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং ২০টি মূল বিষয়ে আলোচনা করার জন্য মোট ৪৪টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এই প্রক্রিয়ায় ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন।

কমিশনগুলো তাদের সুপারিশ ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সরকারের কাছে জমা দেয়। পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সেই সুপারিশসমূহকে একত্র করে দুটি ধাপে রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে ঐকমত্য তৈরির কাজ চালায়।

খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ’কে অনেকেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সর্ববৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ হিসেবে উল্লেখ করছেন। তবে এর সাফল্য নির্ভর করবে কঠোর বাস্তবায়ন এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর।

সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়ায় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, ভবিষ্যৎ আইন প্রণয়ন এবং ফলোআপ রিপোর্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সনদে বলা হয়েছে, এই সংস্কারগুলোকে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের প্রথম দুই বছরের মধ্যেই কার্যকর করতে হবে।

এনএস/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।