সিন্ডিকেটে আটকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৪৫ এএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

নীতিগত সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নগত দুর্বলতার কারণে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার সিন্ডিকেটের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। যার ফলে অভিবাসন ব্যয় বেড়েছে এবং শ্রমিকরা প্রতারণা, ঋণ ও নির্যাতনের ঝুঁকিতে পড়ছে।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ মালয়েশিয়া শ্রম অভিবাসন করিডোর: কেন সিন্ডিকেট টিকে থাকে এবং নিয়োগে শোষণ অব্যাহত থাকে!’ শীর্ষক একটি জাতীয় সংলাপে এসব কথা তুলে ধরেন বক্তারা।

এছাড়া বক্তারা শ্রমবাজারে অস্বচ্ছ নিয়োগ ব্যবস্থা ও নীতিগত ব্যর্থতার ফলে অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের ওপর পড়া সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যয়ের বিষয়টিও তুলে ধরেন।

সংলাপে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিএমইটি, বোয়েসেল, পিকেবি, রিক্রুটিং এজেন্সি, জাতিসংঘ সংস্থা, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা, সিভিল সোসাইটি সংগঠন, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, অভিবাসন বিশেষজ্ঞ, অভিবাসী শ্রমিক এবং মালয়েশিয়ার সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

সংলাপের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ মালয়েশিয়া শ্রম অভিবাসন করিডোরের দীর্ঘদিনের কাঠামোগত ব্যর্থতাগুলো পর্যালোচনা করা, বিশেষ করে ধারাবাহিক নীতিগত সংস্কার সত্ত্বেও কীভাবে নিয়োগ সিন্ডিকেটের আধিপত্য অব্যাহত রয়েছে এবং অভিবাসী শ্রমিকদের শোষণ চলমান আছে তা বিশ্লেষণ করা।

স্বাগত বক্তব্যে ওকাপের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন নাসিম এবং হেলভেটাস সুইস ইন্টারকো অপারেশন বাংলাদেশের অ্যাডভোকেসি বিশেষজ্ঞ শামায়লা মাহবুব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও বিভিন্ন নিয়োগ মডেল কেন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ ভাঙতে এবং অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে, সে বিষয়ে সৎ ও সমালোচনামূলক গুরুত্ব তুলে ধরেন।

নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা অভিবাসী শ্রমিক নিরঞ্জন বলেন, ‘আমি দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাই এবং তাকে ৫ লাখ টাকা দিই। বিমানবন্দরে সে আমাকে এবং অন্য শ্রমিকদের বাধ্য করে কর্তৃপক্ষকে জানাতে যে আমরা আরও বেশি টাকা দিয়েছি। সেখানে কয়েক মাস কাজ করার পর হঠাৎ মালিক পালিয়ে যায় এবং আমরা বেকার হয়ে পড়ি। প্রতিবাদ করলে মালয়েশিয়া সরকার আমাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এ ব্যবস্থা শ্রমিকদের জীবন ধ্বংস করে দেয়।

মালয়েশিয়ার একজন সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধি বলেন, দেশটিতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি নারী অভিবাসী শ্রমিক অনানুষ্ঠানিক ও অনিবন্ধিত খাতে কাজ করছেন। তিনি তাদের অবদানকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং রেমিট্যান্সে তাদের ভূমিকা নথিভুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ভবিষ্যৎ করণীয় প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পলিসি অ্যাডভাইজর জিয়া হাসান বলেন, আজকের সংলাপের সুপারিশগুলোকে বাস্তব নীতিগত পদক্ষেপে রূপান্তর করা এবং প্রেরণ ও গন্তব্য দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করতে হবে। এই করিডোরটি এখন একটি সংগঠিত অপরাধ কাঠামোতে পরিণত হয়েছে। আমাদের প্রকৃত সমস্যাগুলো স্বীকার করতে হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতায় বিনিয়োগ করতে হবে।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শীপা হাফিজা বলেন, বাংলাদেশ মালয়েশিয়া শ্রম অভিবাসন করিডোরের ক্ষেত্রে সামগ্রিক সমাধানের পরিবর্তে কাঠামোগত ব্যর্থতাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। এজন্য অভিবাসনের এই পথ গভীর তদন্ত পরিচালনার জন্য সরকার কে কাজ করতে হবে।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, নিয়োগ ব্যবস্থায় যে সব গোষ্ঠীর স্বাস্থ্য রয়েছে তার বিরুদ্ধে কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। ফেরত আসা অভিবাসী শ্রমিকদের পুনঃএকত্রীকরণ সহায়তা করতে হবে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার যৌথ অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে এ শ্রমবাজারে একটি দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন খুবই জরুরি।

সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে ওকাপের চেয়ারপারসন ও সামাজিক গবেষক শাকিরুল ইসলাম সব অংশীজনকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি মালয়েশিয়া শ্রম বাজার সংস্কার ও অভিবাসী শ্রমিকদের মর্যাদা, অধিকার ও কল্যাণ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে গুরুত্ব দেন। এই জাতীয় সংলাপ শ্রম অভিবাসন শাসনব্যবস্থায় প্রমাণভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিগত আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আরএএস/আরএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।