ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

কোন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক কোনটা অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাখ্যা প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৩৭ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য/ফাইল ছবি

জাতীয় ঐক্য ছাড়া গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, নির্বাচন কোনটা অংশগ্রহণমূলক আর কোনটা অন্তর্ভুক্তিমূলক; এ নিয়ে রহস্য এখনো রয়ে গেছে। এগুলোর ব্যাখা না হলে পরবর্তীকালে নির্বাচনের গুণমান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হবে। এজন্য এখন জাতীয় ঐক্য অনেক বেশি জরুরি। ঐক্য ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার : অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকটির আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমান সময়ে নির্বাচনই উত্তরণের প্রধান স্তম্ভ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তবে মানুষের মনে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে, নির্বাচন আদৌ হবে কি না এবং হলেও তার গুণমান কেমন হবে। কতটি বুথ দখল হলে বা কত শতাংশ ভোট হলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে এমন প্রশ্ন সবার।

‘আগামী তিন-চার মাস দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে দেশের নাগরিকরা দেশের বিষয়ে অনেক বেশি সজাগ। আমি দেশের আট বিভাগে গিয়েছি। শুনেছি মানুষের কথা’—যোগ করেন তিনি।

কোন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক কোনটা অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাখ্যা প্রয়োজন

নির্বাচনী ব্যয় কমানো না গেলে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতি কমানো যাবে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যয় কমানো না গেলে নির্বাচন-উত্তর দুর্নীতি কমানো যাবে না। কারণ, এই ব্যয় পরে জনগণের কাছ থেকে আদায়ের চেষ্টা করা হয়। এরই মধ্যে মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয় বাড়া এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের আশঙ্কা রয়েছে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের যে দায়িত্ব উভয়ের দিক থেকে অবহেলা করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন তার সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারবে কি না, এটিই এখন দেখার বিষয়।

তিনি বলেন, নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে ‘রিফর্ম ট্র্যাকার’ নামে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে; যেখানে নির্বাচন, দুর্নীতি দমন, মিডিয়া এবং শ্রমসহ মোট ১৮টি ডোমেইনের সংস্কারকাজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। নির্বাচন সংক্রান্ত প্রায় ৫০টি ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, ৩১টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে মাত্র দুটি বাস্তবায়নের পর্যায়ে আছে—যার একটি হলো জেন্ডার গ্যাপ কমানো এবং অন্যটি নির্বাচনের প্রাক্কালে যারা ১৮ বছরে উপনীত হবেন তারা যেন ভোটার তালিকায় যুক্ত থাকতে পারেন সেটার ব্যবস্থা করা।

শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা থেকেও সুরক্ষা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কার্যকরভাবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পরে যেই পরিমাণ অস্ত্র লুট হয়ে গেছিল, তার বহু অংশ এখনো বাইরে রয়ে গেছে। এছাড়া সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্র আসছে।

‘এরকম ক্ষেত্রে অস্ত্র উদ্ধার যদি কার্যকরভাবে না হয় তাহলে যে নিরাপত্তার কথাটা আমরা বলছি সেটা হবে না। সেনাবাহিনী ও সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে—এমন গুজব ঘুচানোর ক্ষেত্রে বিপন্ন জনগোষ্ঠী যেন এই ভোটদানের থেকে বঞ্চিত না হয়’—বলেন তিনি।

জাতীয় ঐক্য ছাড়া গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় জানিয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, বর্তমানে নিবন্ধিত নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকার, রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী এবং সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

সুজন সম্পাদক ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিচারপতি এম এ মতিন, ইসির সাবেক অতিরিক্তি সচিব জেসমিন টুলি, ডাকসুর সাবেক প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য মীর নাদিয়া নিভিন ও নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়ারেসুল করিম প্রমুখ।

আরএএস/এমকেআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।