তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন বাস টার্মিনাল
- টার্মিনাল বানাতে ব্যয় হচ্ছে ১৪০ কোটি টাকা
- আগামী বছরের মার্চ মাসে উদ্বোধনের আশা
- সুফল পাবে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির লোকজন
- নিরসন হবে অক্সিজেন মোড়কেন্দ্রিক যানজট
প্রায় ৩৩ বছর পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নতুন বাস টার্মিনাল তৈরি হচ্ছে। নগরীর জালালাবাদ ওয়ার্ডের কুলগাঁও এলাকায় টার্মিনালটি বানাতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। এরই মধ্যে টার্মিনালের ভৌতকাজের বেশিরভাগ শেষের দিকে। এটি হলে নগরীতে বাস টার্মিনালের সংখ্যা দাঁড়াবে তিনটিতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৬ সালের মার্চ মাসে টার্মিনালটি উদ্বোধনের আশা করা হচ্ছে। টার্মিনালটির ব্যবহার শুরু হলে সুবিধা পাবে দেশের দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির লাখো বাসিন্দা। এতে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রবেশমুখ অক্সিজেন এলাকার নিত্যদিনের যানজটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে নগরবাসী।
আরও পড়ুন
৫ বছরেও চালু হয়নি কালকিনি পৌর বাস টার্মিনাল
অব্যবস্থাপনায় নষ্ট হচ্ছে সিলেটের অত্যাধুনিক বাস টার্মিনাল
যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে গাবতলী বাস টার্মিনালে ভোক্তার অভিযান
বাস টার্মিনালের টোলের নামে চলছে চাঁদাবাজি
বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীর মধ্যে দুটি বাস টার্মিনাল রয়েছে। একটি কদমতলীতে। এ বাস টার্মিনাল থেকে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকার বাসগুলো ছেড়ে যায়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-কাপ্তাই রোডের জন্য চান্দগাঁওয়ে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল রয়েছে। কদমতলী বাস টার্মিনালের ব্যবহার এখনো স্বাভাবিক থাকলেও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের ব্যবহার একেবারে কমে গেছে। বিশেষ করে কাপ্তাই ও বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়া সড়কে এখন কোনো বাস চলে না। কদমতলী বাস টার্মিনালটি ১৯৬৬ সালে এবং বহদ্দারহাট টার্মিনালটি ১৯৯৩ সালে তৈরি হয়।

অন্যদিকে কক্সবাজার, বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ১৯ রুটের গাড়ির বেশিরভাগই ছাড়ে বাকলিয়া এলাকার নতুন ব্রিজ গোলচত্বর এলাকা থেকে। তবে চট্টগ্রাম মহানগরীর তিন প্রবেশদ্বারে বৈধ কোনো বাস টার্মিনাল নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে নগরীতে প্রবেশদ্বার অলংকার, চট্টগ্রাম কক্সবাজার থেকে শাহ আমানত সেতু হয়ে প্রবেশে বাকলিয়ায় এবং চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক দিয়ে প্রবেশমুখ অক্সিজেন এলাকার মোড়গুলো টার্মিনালে রূপান্তর করে ব্যবহার হয়ে আসছে। এতে নগরীর প্রবেশমুখগুলোতে যানজট লেগেই থাকে।
নগরীর প্রবেশমুখের যানজট সমস্যা নিরসনে কুলগাঁও এলাকায় বাস টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৮ সালের শুরুতে। সিটি বাস টার্মিনাল প্রকল্পটি ওই বছরের জুলাইয়ে একনেকে অনুমোদিত হয়। এরপরে জমি অধিগ্রহণসহ নানান জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে কাজ চালু করা যায়নি। তিন দফা সময় বাড়িয়ে সাত বছরে টার্মিনাল নির্মাণের কাজটি শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যেই টার্মিনালটি চালুর বিষয়ে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন
ঠাকুরগাঁও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে উদ্বোধনের পর থেকেই ঝুলছে তালা
দিনাজপুর বাস টার্মিনালের বেহাল দশা, ক্ষুব্ধ শ্রমিক-যাত্রী
দুই বছর পর চালু বেনাপোল পৌর বাস টার্মিনাল, যানজট কমার আশা
চসিক সূত্রে জানা গেছে, কুলগাঁওয়ে নির্মাণাধীন টার্মিনালটিতে বাসের পাশাপাশি ট্রাকও রাখা হবে। ৮ দশমিক ১০ একর জায়গাজুড়ে টার্মিনালটি নির্মিত হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্প প্রস্তাবনায় প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের জন্য ২৬০ কোটি টাকা, ভূমি উন্নয়নে ৩ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা, অবকাঠামো উন্নয়নে ৭ কোটি ৫০ লাখ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ ইয়ার্ড নির্মাণে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও প্রকল্পটিতে সাকুল্যে ১৪০ কোটি টাকার কাছাকাছি অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মোহাম্মদ রিফাতুল করিম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘কুলগাঁও বাস টার্মিনালটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইয়ার্ডের ম্যাকাডাম হয়ে গেছে। এখন ব্লক বসানোর কাজ হবে। পাশাপাশি টার্মিনালের অন্য স্থাপনাগুলোর নির্মাণ কাজ চলছে। যেহেতু বালু দিয়ে পুরো জায়গাটি ফিলিং করা তাই ইয়ার্ড বানাতে কার্পেটিং কিংবা ঢালাইয়ের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ইয়ার্ডের কোথাও ডেবে গেলেও সহজে মেরামত করার সুযোগ থাকবে।’
প্রকল্পের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, টার্মিনালের মধ্যে একটি তিনতলা ভবন থাকবে। টার্মিনালটিতে সিটি ও আন্তঃজেলার জন্য আলাদা টার্মিনাল রাখা হচ্ছে। এতে ২৫টি যাত্রী বোর্ডিং লেন, ১৪টি অতিরিক্ত ওয়েটিং লেন, একটি বড় খোলা হল রুম এবং তথ্যকেন্দ্র, পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা গণশৌচাগার, ২২টি টিকিট কাউন্টার ও যাত্রীদের বসার জায়গা থাকবে। থাকবে ওয়াইফাই সুবিধাও। এছাড়া লাগেজ রুম, ট্যাক্সি বুকিং রুম, ফাস্ট এইড স্টেশন, রেস্তোরাঁ, এসি বাসের যাত্রীদের বসার আলাদা জায়গা এবং বাস-ট্রাক মালিক-শ্রমিকদের অফিস ও চালক-হেলপারদের আবাসন কক্ষ রাখা হচ্ছে।

রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি বাস মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কে অক্সিজেন হয়ে প্রতিদিন রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি বাদেও উত্তর জেলার বিভিন্ন রুটে ৫০০ থেকে ৬০০ বাস চলাচল করে।
চট্টগ্রাম-নাজিরহাট-খাগড়াছড়ি বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহাজাহান জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাঙামাটি-খাগড়াছড়িসহ উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটে দৈনিক নিয়মিত পাঁচ শতাধিক বাস চলাচল করে। কিন্তু স্থায়ী টার্মিনাল নেই। তাই মুরাদপুর কিংবা অক্সিজেন এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে হয় বাসগুলোতে। এতে নগরীর অন্য রুটে চলাচলকারী যানবাহনকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। কিন্তু উপায় না থাকায় যাত্রী নেওয়ার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়াতে হয়। এখন কুলগাঁও এলাকায় বাস টার্মিনাল হচ্ছে। এটি আমাদের মালিক-শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এখন কুলগাঁও নতুন টার্মিনাল চালু হলে উত্তরের রুটগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। অক্সিজেনসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি রুটে যানজট কমে আসবে।’

আরও পড়ুন
জরাজীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী ভোলা বাস টার্মিনাল
কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের অবস্থা বেহাল, যাত্রীদের দুর্ভোগ
চট্টগ্রামে টার্মিনাল সংস্কার না করার প্রতিবাদে বাস চলাচল বন্ধ
প্রকল্প পরিচালক চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) জসীম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কুলগাঁও বাস টার্মিনালটির এখন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। ড্রেনেজ নির্মাণ শেষ হয়েছে। ইয়ার্ড, বোর্ডিং লেন, ওয়েটিং লেনগুলো তৈরি করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি না হলেও মার্চে টার্মিনালটি উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।’

জসীম উদ্দিন বলেন, ‘নির্মাণ কাজ শেষ হলে টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এতে টার্মিনালটি সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয়ের একটি খাত হবে।’
টার্মিনালটিতে একত্রে ২০০ বাস ও ট্রাক পার্কিংয়ের সুযোগ থাকবে বলে জানান তিনি।
এমডিআইএইচ/এমএমএআর/এমএফএ/এএসএম