ভাঙা সড়ক, ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ পুরান ঢাকাবাসী

আশিকুজ্জামান
আশিকুজ্জামান আশিকুজ্জামান , নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশিত: ০২:৪৮ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে পুরান ঢাকার সুভাষ বোস অ্যাভিনিউ, ছবি: জাগো নিউজ

পুরান ঢাকার সুভাষ বোস অ্যাভিনিউ দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। ভাঙাচোরা রাস্তা, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা খোঁড়াখুঁড়ি, ফুটপাতে ফেলে রাখা ইট-পাথর সব মিলিয়ে প্রতিদিনই দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সড়কের দুই পাশে থাকা স্কুল-কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী।

এই সড়কের পাশেই সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রতিদিন ছোট মেয়েকে আনা-নেওয়া করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। স্কুলের পাশেই ঋষিকেশ দাস লেনে তাদের বাসা।

রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিন ভাঙা রাস্তায় মেয়ের হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যাই। ফুটপাতজুড়ে ইট আর ভাঙা অংশ। একটু হাত ফসকালেই পড়ে যাওয়ার ভয়। বৃষ্টি হলে পুরো রাস্তা নোংরা পানিতে ভরে যায়। স্কুল ড্রেস প্রতিদিন কাদা-ময়লায় ভিজে যায়।’

ভাঙা সড়ক, ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ পুরান ঢাকাবাসী

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকা থেকে লক্ষ্মীবাজার পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৫৮০ মিটার। এ সড়ক ও দুপাশের ড্রেন এবং ফুটপাত সংস্কারে গত জুনে কাজ শুরু করে ডিএসসিসি। এ কাজের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই কাজের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ। আগামী মে মাসে এ সড়কের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুভাষ বোস অ্যাভিনিউয়ের দুই পাশে রয়েছে অন্তত নয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ, সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা গভর্নমেন্ট মুসলিম হাই স্কুলসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। পাশের অলিগলিতেও রয়েছে আরও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

সড়কে খানিকটা এগোলেই চোখে পড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, পাশাপাশি রয়েছে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল ও বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। যেখানে প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থী এই ভাঙাচোরা সড়ক দিয়েই যাতায়াত করে।

ভাঙা সড়ক, ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ পুরান ঢাকাবাসী

এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন কাদা, পানি ও ধুলাবালির মধ্য দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। সদরঘাট, ইসলামপুর ও নবাবপুরের বাণিজ্যিক এলাকাগুলোয় যাতায়াতকারী সাধারণ পথচারী এবং যানবাহনও একইভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

সড়কজুড়ে কোথাও খানাখন্দ, কোথাও নর্দমা সংস্কারের জন্য খোলা ঢাকনা। সব মিলিয়ে পুরো এলাকায় তৈরি হয়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের সামনে ও পাশে একাধিক খোলা নর্দমা দেখা যায়, যার অনেকগুলোতেই সতর্কতা চিহ্নও নেই। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের সামনেও রয়েছে এমন বিপজ্জনক খোলা ঢাকনা। ফুটপাত দখলকারী কয়েকজন ব্যবসায়ী লাঠি ও কাঠি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে দেন।

বিষয়টি নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাইসুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এভাবে পথের মাঝখানে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে বা পাশে নর্দমার ঢাকনা খোলা অবস্থায় পড়ে থাকা পরিস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কারণ সামান্য অসতর্কতায়ই শিক্ষার্থী, অভিভাবক বা সাধারণ পথচারী যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। এত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থাকা সত্ত্বেও মানুষ প্রতিদিন এ সড়ক ব্যবহার করছে। এটি একদিকে দুঃখজনক, অন্যদিকে নগর ব্যবস্থাপনার চরম অব্যবস্থাপনার স্পষ্ট উদাহরণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনই কার্যকর ও জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’

সরকারি কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার কাজ চলমান থাকলেও কোনো অগ্রগতি নেই।

ভাঙা সড়ক, ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ পুরান ঢাকাবাসী

কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মৌসুমি আক্তার বলেন, ‘মাসের পর মাস ধরে রাস্তার কাজ চলছে। এখন এমন অবস্থা, রাস্তাই ব্যবহার করা যায় না। বৃষ্টি হলেই কাদা আর পানি জমে থাকে। হাঁটার মতো পরিবেশ থাকে না। প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়।’

সড়কের পাশে খাবারের দোকান চালানো মামুন হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টি হলে পানি দোকান পর্যন্ত উঠে আসে। আর বৃষ্টি না থাকলে এত ধুলো ওঠে যে দোকান খোলা রাখা যায় না। ব্যবসা করতে খুবই কষ্ট হয়। সড়কের মাঝখানে কাটাকাটিতে মাঝেমধ্যেই এসব খানাখন্দে রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন আটকে পড়ে আরও যানজট লাগে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে কোনো সড়ক একবার কাটলে বছর পার হয়ে যায়। শুকনো দিনে ধুলায় মুখে হাত বা মাস্ক পরেও চলা যায় না। আর বৃষ্টির দিনে কাদা-নোংরা পানি মাড়িয়ে চলতে হয়। আর যতটুকু ভালো জায়গা দুই পাশের হকারদের দখলে।

সড়ক সংস্কার কাজের প্রকল্প পরিচালক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল) রাজীব খাদেম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে ওই প্রকল্পের কাজ করা যায়নি। এ কারণে কাজটা একটু পিছিয়ে গেছে। তবে গত নভেম্বর থেকে কাজের গতি বেড়েছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারবো।’

ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আজিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংস্কার কাজ কিছুটা ধীরগতিতে হচ্ছে বলে জেনেছি। তাই বলে জনগণের দুর্ভোগ করে তো উন্নয়ন কার্যক্রম হবে না। সংস্কার কাজের সময় অবশ্যই শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পথচারী সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তায় গুরুত্ব দিতে হবে। আইন মেনেই সবাইকে কাজ করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আজিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পরে সড়কের কয়েকটি স্থানে ম্যানহোলের পাশে ঢাকনা রাখতে দেখা গেছে নির্মাণসংশ্লিষ্টদের।

এমডিএএ/এমএমএআর/এমএফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।