আইএস জীবিত ছাড়বে ভাববার পাই নাই : হেলাল উদ্দিন

লিবিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হাতে অপহৃত হেলাল উদ্দিন মঙ্গলবার ভোরে জামালপুরে নিজ গ্রামে এসে পৌঁছেছেন। এর আগে সোমবার বিকাল ৫টায় লিবিয়া থেকে একটি বিমানে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি।
আইএস জঙ্গিদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে হেলাল উদ্দিন বাড়িতে ফিরে আসায় খুশি তার পরিবার। হেলাল উদ্দিনকে একনজর দেখতে আর তার মুখ থেকে জঙ্গিদের হাতে অপহরণ কাহিনী শুনতে ভিড় করছেন এলাকাবাসী।
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের মৃত আমাত শেখের ছেলে হেলাল উদ্দিন অভাবের সংসারে একটু স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ২০০৯ সালে পাড়ি জমায় লিবিয়ায়। বিদেশে গিয়ে হেলাল উদ্দিনের উপার্জিত টাকায় স্ত্রী আর দুই ছেলে, তিন মেয়ের বড় সংসারে অভাব কিছুটা কমে আসায় স্বচ্ছল ভাবেই চলছিলো সংসার। প্রায় দশ মাসে আগে লিবিয়া থেকে পরিবারের সাথে দেখা করতে দুই মাসের জন্য বাড়িতেও এসেছিলেন হেলাল উদ্দিন।
কিন্তু লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সিরতে শহরের একটি তেলের খনি থেকে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) সদস্যরা গত ৬ মার্চ হেলাল উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। লিবিয়ায় আইএস জঙ্গিদের হাতে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হেলাল উদ্দিনের অপহরণের খবর শোনার পর থেকেই তার পরিবারের মধ্যে অজানা আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করে আসছিল।
গত ২৪ মার্চ অপহরণের ১৮ দিন পর হেলাল উদ্দিনকে মুক্তি দেয় আইএস জঙ্গিরা। মুক্তির পর হেলাল উদ্দিন লিবিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন। হেলাল উদ্দিনের মুক্তির খবরে পরিবারের অজানা আতঙ্ক কেটে গেলেও দেশে কবে নাগাদ ফিরে আসবে তা নিয়েও ছিল উৎকণ্ঠা।
মঙ্গলবার ভোরে হেলাল উদ্দিন লিবিয়া থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসায় খুশি হেলালের পরিবার। অজানা আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার পরিবর্তে এখন বিরাজ করছে খুশির আমেজ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হেলাল উদ্দিনকে লিবিয়া থেকে সুস্থ অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরিয়ে আনায় বর্তমান সরকার, সংশ্লিষ্ট দুতাবাস এবং মিডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে হেলালের পরিবার।
এদিকে আইএস জঙ্গিদের হাতে অপহরণের পর মুক্তি পাওয়ায় হেলাল উদ্দিনকে একনজর দেখতে এবং অপহরণের পর কিভাবে দিন কেটেছে তা জানতে হেলালের বাড়িতে ভীড় করছে এলাকাবাসী।
হেলালের স্ত্রী আলেয়া বেগম জানান, ‘ভাবছিলাম হয়তো আর স্বামীরে দেখবার পামুনা। আল্লাহ সহায় আছিল দেখেই সে সুস্থ হালতে বাড়িত ফিরা আইছে।’
হেলাল উদ্দিন বলেন, জীবিত অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরা আসতে পারমু এটা কখনো ভাববার পাই নাই। ৬ তারিখে যখন মুখোশধারী জঙ্গিরা আমাদের অপহরণ কইরা গাড়ি দিয়া মরুভূমির মধ্যে নিয়া যায়, তখন ভাবছিলাম গাড়ি থাইকা নামায়া এখনই বুঝি শিরশ্ছেদ দিবো। পরে মরুভূমির মধ্যে একটা বরফ কলে নিয়া আমাদের কয়েকজনকে আটকে রাখে জঙ্গিরা। খাবার হিসেবে সাতুর মতো কী একটা খাবার দিতো, তাও আবার এক বেলা।
তিনি বলেন, জঙ্গিরা বলে, আমরা মুসমান হলে কী হবো সপ্তাহে নামাজ পড়ি একবার। আমরা নাকি ইসলামরে ধ্বংস করতাছি তাই আমাদেরকে অপহরণ করা হইছে ইসলামের শিক্ষা দেওয়া জন্য। জঙ্গিদের হাতে আটকা থাকা অবস্থায় প্রতিটা সময় খালি নিজের কৃতকর্ম আর বৌ, পোলাপানের কথা মনে হইছে।
হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, আর একটা কইরা রাত পার হইলেই মনে হইতো আজ বুঝি মাইরা ফালাবো। ১৮ দিন পর যখন জঙ্গিরা মুক্ত করে দিলো, মনে হইছিল আমি বুঝি পৃথিবীর মধ্যে আরও একবার নতুন কইরা জন্ম নিলাম। এখন পরিবারের কাছে ফিরা আসতে পাইরা অনেক খুশি আর আনন্দ লাগতাছে। আমার মুক্তির জন্য বর্তমান সরকার, লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস আর সাংবাদিকদের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ থাকমু।
এসএস/বিএ/এমএস