মাতৃদুগ্ধ পানের হার বাড়ানোর পথে বাধা শিশুখাদ্য কোম্পানি


প্রকাশিত: ০৪:১৫ পিএম, ০৯ জুলাই ২০১৫

গুঁড়াদুধ ও অন্যান্য শিশুখাদ্য উৎপাদনকারী বহুজাতিক ও দেশি কোম্পানিগুলোর দৌরাত্ম্যই এখন দেশে শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লোভনীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ব্যবস্থাপত্রে গুঁড়োদুধ ও অন্যান্য শিশুখাদ্যের নাম লেখানোর জন্য চিকিৎসকদের প্রলুব্ধ করা, পত্রিকায় ও টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচুর বিজ্ঞাপন প্রচার, গণমাধ্যম মালিক ও কর্মীদের বিজ্ঞাপন ও সুবিধাদি প্রদান করে এসব কোম্পানির দৌরাত্ম্য সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত রাখা, সমাজসেবামূলক কাজের আড়ালে নিজেদের বিজ্ঞাপন প্রচার এসবের মধ্য দিয়ে গুঁড়োদুধ ও অন্যান্য শিশুখাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো দেশে জেঁকে বসেছে।

ফলে জাতীয় ‘মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প ও শিশুখাদ্য বাজারজাতকরণ নিয়ন্ত্রণ আইন’ লঙ্ঘিত হলেও এই বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বরং কোম্পানিগুলোর বিপুল অর্থ ব্যয় ও শক্তিশালী বিপণন প্রক্রিয়ার কারণে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর বদলে গুঁড়ো দুধের দিকেই সাধারণ মানুষসহ শিশুর মা ও অভিভাবকরা আকৃষ্ট হচ্ছেন।  

রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ‘মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প ও শিশুখাদ্য বাজারজাতকরণ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩-এর আলোকে গ্রামাঞ্চলে অংশীদারদের ভূমিকা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনকালে বক্তারা এসব তথ্য দেন।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যশোরের সদর, শার্শা ও অভয়নগর এবং সিলেটের বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানিবাজারে গবেষণাটির জরিপ কাজ পরিচালিত হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক ডা. কাওসার আফসানা। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের স্টাফ গবেষক ফাহমিদা আকতার।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল হান্নান। এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন, ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন (আইপিএইচএন)-এর উপ-পরিচালক ডা. তপন কুমার বিশ্বাস।

ব্র্যাকের ভাইস চেয়ারপারসন আহমেদ মোস্তাক রাজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন (আইপিএইচএন)-এর সাবেক পরিচালক ডা. মো. শাহ নেওয়াজ, বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ডা. এস কে রায়, সিএসএ ফর সান বাংলাদেশ-এর চেয়ারপারসন ডা. রোখসানা হায়দার, ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেইঞ্জের কর্মসূচি সমন্বয়ক সদরুল হাসান মজুমদার প্রমুখ।

গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়- চিকিৎসকরা, স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা মাতৃদুগ্ধ বিকল্প বাজারজাতকরণ সংক্রান্ত আইন আছে তা জানলেও আইনের বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত নন। এতে আরো বলা হয়, গুঁড়োদুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের দিয়ে এমন কৌশলে মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প ও শিশুখাদ্যের ব্যবস্থাপত্র দিতে প্রলুব্ধ করে যাতে কোন চিকিৎসক তা করছেন তা বোঝা না যায়।

এ প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, প্রবল প্রচারণা ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মা ও শিশুর পরিবারকেও বিভ্রান্ত করছে কোম্পানিগুলো। এর ফলে মা ও শিশুর পরিবারের সদস্যরা মায়ের দুধই যে শিশুর সবচেয়ে উত্তম খাদ্য এবং গুঁড়োদুধ যে শিশুর বুদ্ধি ও শরীরের বিকাশের অন্তরায় এ কথা বুঝতে পারছেন না। এক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অবস্থা সবচেয়ে শক্তিশালী এবং তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করাও অত্যন্ত কঠিন।  

জরিপে বলা হয়, মাতৃদুগ্ধ বিকল্প ব্যবহার শুরু হওয়ার দুটি মোক্ষম সময় হচ্ছে - সন্তান প্রসবের পর পর যখন মায়ের বুকে দুধ আসতে দেরি হয় এবং কর্মজীবী মায়েরা যখন কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেন।  

ব্র্যাকের ভাইস চেয়ারপারসন আহমেদ মোস্তাক রাজা চৌধুরী আগত অতিথিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আশা করছি এ সেমিনার মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প ও শিশুখাদ্য বাজারজাতকরণ নিয়ন্ত্রণ আইনটি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে’।

এমইউ/এসএইচএস/একে/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।