আরেক দফা বাড়ল জেট ফুয়েলের দাম

রফিক মজুমদার
রফিক মজুমদার রফিক মজুমদার , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩৪ এএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েলের দাম আবারও বাড়িয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। অভ্যন্তরীণ রুটের ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্সগুলোকে প্রতি লিটার জেট ফুয়েল কিনতে এখন গুনতে হবে ৭৩ টাকা। আন্তর্জাতিক রুটের ক্ষেত্রে জেট ফুয়েলের দাম পড়বে লিটারপ্রতি দশমিক ৭১ ডলার। বিপিসি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা গেছে, চলতি বছর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বাড়ল জেট ফুয়েলের দাম, যা আগে ছিল ৭২ টাকা। গত মার্চে এটি বিক্রি হয় ৬৭ টাকায়। নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ রুটের ক্ষেত্রে জেট ফুয়েলের দাম পড়ছে লিটারপ্রতি ৭৩ টাকা।আন্তর্জাতিক রুটের ক্ষেত্রে জেট ফুয়েলের দাম পড়ছে লিটারপ্রতি দশমিক ৭১ ডলার, যা আগে ছিল দশমিক ৬৮ ডলার। এছাড়া মার্চে দাম ছিল দশমিক ৬২ ডলার।

বিপিসি সূত্র জানায়, সম্প্রতি সবগুলো এয়ারলাইন্সকে জেট ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি অবহিত করে চিঠি দিয়েছে বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড।

চিঠিতে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেট এ-১ তেলের বিক্রয়মূল্য বাড়ানো হয়েছে, যা ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে।

মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিপিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করা হয়। জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করে বিপিসির মূল্য নির্ধারণ কমিটি। এ কমিটি সব সময়ই জেট ফুয়েলের আন্তর্জাতিক বাজার মনিটরিং করেই মূল্য সমন্বয় করে।

এদিকে জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানোয় অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন দেশীয় বিভিন্ন এয়ারলাইন্স।

তারা বলছেন, জেট ফুয়েলের দাম বাড়ালে এয়ারলাইন্সের পরিচালন ব্যয় বাড়বে। এতে বিদেশি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা সম্ভব হবে না। কারণ এমনিতেই মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইন্স অনেক কম মূল্যে জ্বালানি পায়। এভাবে চললে দেশীয় এয়ারলাইন্সের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।

বেসরকারি এয়ারলাইন্স সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজের চিফ অপারেশন অফিসার (সিওও) আশীষ রায় চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, দফায় দফায় জেট ফুয়েলের দাম বাড়া বাংলাদেশের এভিয়েশন ব্যবসার জন্য বড় ধরনের হুমকি। অপারেশনে অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে দেশে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো ন্যুব্জ হয়ে পড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন করে জেট ফুয়েলের দাম বাড়া মানে আরও ক্ষতি। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বেশির ভাগ দেশীয় এয়ারলাইন্সে বোয়িং ৭৩৭ এবং ৭৭৭ উড়োজাহাজ ব্যবহৃত হয়। এ বিমানগুলোর গড়ে তেল ধারণক্ষমতা প্রায় ৪০ হাজার গ্যালন। বিদেশি এয়ারলাইন্সের তুলনায় যদি জ্বালানির দাম লিটারে এক ডলার করেও বেশি হয়, তাহলে প্রতিটি ফ্লাইটে দেশীয় এয়ারলাইন্সের বাড়তি খরচ গুনতে হয় প্রায় ৩২ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে জেট ফুলের দাম বেশি। এমনিতেই লাভ নেই তার ওপর জেট ফুয়েলের দাম দফায় দফায় বাড়ানোর কারণে বেসরকারি এয়ারলাইন্সের ব্যয় বাড়ছে। সবমিলে দিশেহারা অবস্থা।

এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, জেট ফুয়েলের দাম বাংলাদেশেই বেশি এ কথা ঠিক নয়। কেননা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করা হয়। এ সংক্রান্ত কমিটি জেট ফুয়েলের দাম পুনর্নির্ধারণ করে।

উল্লেখ্য, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জেট এ-১ জ্বালানি তেলের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ চাহিদা ছিল ২ লাখ ৭৯ হাজার ১৪২ টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ লাখ ৮৫ হাজার ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৩ লাখ ৯ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে জেট এ-১ জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়ে ৩ লাখ ২৮ হাজার ৮২২ টনে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরএম/এএইচ/এমএস

দাম বৃদ্ধি বাংলাদেশের এভিয়েশন ব্যবসার জন্য বড় ধরনের হুমকি। লিটারে এক ডলার বেশি হলে প্রতিটি ফ্লাইটে বাড়তি খরচ হয় প্রায় ৩২ লাখ টাকা

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।