করোনার মধ্যেই জন্ম প্রতিষ্ঠানের, তৈরি করে নকল-মানহীন স্যানিটাইজার
মহাখালীর ডিওএইচএস এলাকায় অভিযান শেষে রাজধানীর আদাবর শ্যামলী হাউজিং এলাকায় নকল ও মানহীন হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ সুরক্ষা সামগ্রী তৈরির একটি কারখানায় অভিযান পরিচালনা করেছে র্যাব।
এমএস রোজমারি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান পরিচালনার পর বিপুল পরিমাণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার, খালি বোতল এবং স্যানিটাইজার তৈরির বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল জব্দ করা হয়।
অভিযান শেষ র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোজমারি নামের ওই প্রতিষ্ঠানটির জন্ম করোনার মধ্যেই। মাত্র দেড় মাস আগে একটি ভবনের নিচতলা ভাড়া নিয়ে তৈরি করা হয় প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে তৈরি করা হয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার। যা আবার বাজারজাতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রিও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এজন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুস সামীকে (৩৬) এক বছরের কারাদণ্ড ও কর্মচারী মো. হাফিজুর রহমানকে (২৮) এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রোববার (১২ জুলাই) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত র্যাব-১ এর একটি দল সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আখতারুজ্জামান।
র্যাব-১ এর এএসপি কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস সামী-এর বাড়ি গাইবান্ধা সদরের বড় দুর্গাপুরে। তার বাবার নাম মঞ্জুর মোর্শেদ। করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি হঠাৎ গজিয়ে ওঠে। তাদের পূর্বের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও মাত্র দেড় মাস আগে একটি আবাসিক ভবনের নিচতলা ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির কারখানা।
তারা হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির বিভিন্ন প্রক্রিয়া রপ্ত করে সেই অনুযায়ী কেমিক্যালের কাঁচামাল কিনে আনে। এরপর তারা একটি মিক্সার মেশিনে প্রক্রিয়াজাত শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন নেই। হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে কোন ধরনের কেমিক্যাল কী পরিমাণ ব্যবহার করতে হয়, সে ধরনের অভিজ্ঞতাও তাদের নেই। তবে প্রতিষ্ঠানটি ঠিকই আন্দাজের উপরে ভিত্তি করে বিপুল পরিমাণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি ও বাজারজাত করেছে।
এ সময় প্রতিষ্ঠানটি থেকে অনুমোদনহীন ৫ হাজার ৩৫০ পিস হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ২ হাজার খালি বোতল এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল জব্দ করা হয়।
এর আগে, রোববার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে নিউ ডিওএইচএস এলাকার ইনার বিটস অ্যান্ড কিউএস বিডির কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার জব্দ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শাহ জাফর আহম্মেদ (২৮) জানান, তারা মূলত ওই শ্যামলীর রোজমারি লিমিটেডের কাছ থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে এনে নিজেদের নামে ব্র্যান্ডিং করে বাজারজাত করে আসছিল। এ জন্য শাহ জাফর আহমেদকে ৪ লাখ টাকা এবং রায়হান কবিরকে (৩৫) ৬ লাখ টাকা মোট ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
র্যাব-১ এর কর্মকর্তা এসপি কামরুজ্জামান আরও জানান, রোজমারির আব্দুস সামী হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির পাশাপাশি বাজারজাত প্রক্রিয়া সম্পন্নে কোনো ডকুমেন্টও রাখেননি।
সবমিলিয়ে র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৯৪০ সালের ড্রাগ আইনের ১৮ ও ২৭ ধারা মোতাবেক অনুমোদনহীন নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের অপরাধে এমডি সামীকে এক বছরের কারাদণ্ড ও কর্মচারী হাফিজুর রহমানকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন।
জেইউ/এফআর