‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সমাজে অন্যায্য বোধকেই প্রশ্রয় দেয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১৪ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ফাইল ছবি

 

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সমাজে অন্যায্য বোধকে প্রশ্রয় দেয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার যে কাজটি হচ্ছে এটা নীতি না বরং ব্যতিক্রম। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া সংবিধান ও সাম্যের পরিপন্থী।

মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে নাগরিক প্লাটফর্মের ভার্চুয়াল সংলাপে এমন মন্তব্য করেছেন বক্তারা। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের উপস্থাপনায় সংলাপে ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

রাজনৈতিক অঙ্গীকার, গণতান্ত্রিক চর্চা, তথ্যের অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের প্রতিহত করে প্রত্যেককে সৎ কর ব্যবস্থার অধীনে আনার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

আলোচনায় জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেকর্ড পরিমাণ ১০ হাজার ২২০ কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে।

করদাতারা তাদের আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত আয়ের নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য যেকোনো সম্পদের ওপর ১০ শতাংশ কর দেয়ার মাধ্যমে বৈধ করতে পারবেন বলে নতুন বিধানে বলা হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে প্রদর্শিত আয়ের ওপর সর্বোচ্চ প্রদেয় কর ২৫ শতাংশ। কিন্তু সেখানে অপ্রদর্শিত আয়ের ওপর এই হার মাত্র ১০ শতাংশ।

আলোচনায় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কালো টাকা সাদা করার অনৈতিক এই সুযোগ দ্রুতই বন্ধ করা উচিত। আমরা আশা করবো, সাম্য ও উন্নয়নবিরোধী এই সুযোগ আগামী অর্থবছর থেকে বাতিল হবে।

jagonews24

সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকেই ক্ষমার নামে নামমাত্র কর প্রদানের সুযোগ ছিল। এতে করে অর্থনীতি কোনোকালেই লাভবান হয়নি। ক্ষমার নামে নামমাত্র কর দিয়ে অবৈধ অর্থ বৈধ না করার সুযোগ বন্ধের পরামর্শ দেন তিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত দুর্নীতিজাত অনুপার্জিত উৎস, উপায় ও উপলক্ষ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধ করা। তিনি আরও বলেন, কোনো উদীয়মান অর্থনীতিতে উন্নয়ন অর্জনে সফল হওয়ার পর যদি আয় সম্পদ বৈষম্য না কমে বরং বাড়ে তাহলে বুঝতে হবে সেই অর্থনীতিতে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, হুন্ডি ও ট্রেডের মাধ্যমে কালোটাকা বিদেশে পাচার হয়। কিন্তু ট্রেড বেজড মানি লন্ডারিং ঠেকাতে দুদক, রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই।

তিনি বলেন, কালো টাকা লালনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে না চাইলে সমস্ত ট্রানজেকশনকে তদারকির আওতায় আনতে হবে।

ব্যবসায়ী তাবিথ আওয়াল মনে করেন, প্রতিবছর কালো টাকা সাদা করার দুষ্টচক্র বন্ধে সরকারি প্রতিষ্ঠান কার্যত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন বলেন, রাজস্বের পরিমাণ বাড়াতে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন দরকার। কেননা এখনো কর ফাঁকি দিতে পারাটাকে অনেকেই গর্বের বিষয় মনে করেন।

এসএম/এমআরআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।