বেইলি রোডে রিকশা গুঁড়িয়ে দেওয়া গাড়িটি সেই কিশোরের নয়
রাজধানীর বেইলি রোডে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে রিকশাচালক, আরোহী বাবা ও তার কোলের পাঁচ মাসের শিশুকে আহত করা প্রাইভেটকারটি জব্দ করেছে পুলিশ। ধাক্কা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ওই কিশোর বা তার পরিবার এই গাড়িটির মালিক নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। গাড়িটির মালিক ওয়ারী থানার এক বাসিন্দার।
রোববার (২১ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা ফখরুল হাসান ও তার পাঁচ মাসের শিশুপুত্রকে নিয়ে বের হন। তিনি একটি রিকশা নিয়ে মগবাজার থেকে বেইলি রোড হয়ে রমনা পার্কের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বেইলি রোডে একটি বেপরোয়া গতির প্রাইভেটকার তাদের বহনকারী রিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে রিকশাচালক আনোয়ার ইসলামসহ গুরুতর আহত হন ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার পাঁচ মাসের শিশু পুত্র ইব্রাহিম মোহাম্মদ বিন হাসান।
দুর্ঘটনার পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।
ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, বেপরোয়া গতিতে ধাক্কা দেওয়ায় ফখরুল হাসানের ডান হাত ভেঙে যায়। আর তার পাঁচ মাস বয়সী সন্তানের ডান পা ভেঙে গেছে। রিকশাচালকও পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। এছাড়া ফখরুল ও তার ছেলের মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তারা সবাই এখন চিকিৎসাধীন।
তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার আরও বলেন, ঘটনার পর প্রাইভেটকারচালক ওই কিশোর গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরে যান। পরের দিন শনিবার (২০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওই কিশোর মাকে নিয়ে বাসে করে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় তার দাদার বাড়ি চলে যায়। সেখান থেকে আবার চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গায় তার খালার বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপনে থাকে। পরে দুই উপজেলার থানা পুলিশের সহায়তায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা এখন পথে আছে, তাদের ঢাকায় আনা হচ্ছে।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ঘটনার পর হাতিরঝিল থানার মীরবাগ এলাকায় ওই কিশোরের বাসা থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়। গাড়ির কাগজপত্র চেক করে দেখা গেছে, গাড়ির মালিক ওয়ারী এলাকার এক বাসিন্দা।
ওই কিশোরের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার জন্ম ২০০৬ সালে। সে হিসাবে তার বয়স ১৫ বছর। এই বয়সে তার লাইসেন্স থাকার কথা না। সে রাজধানীর একটি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সেখান থেকে ভর্তি বাতিল করে অন্যত্র ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। তার বাবা একজন আইনজীবী বলে আমরা জানতে পেরেছি।

গাড়ি চালানোর সময় সে মাদকাসক্ত ছিল কি না জানতে চাইলে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তাকে এখনও আমরা হাতে বুঝে পাইনি। আমাদের একটি টিম তাদের নিয়ে আসছে। বুঝে পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যাবে এবং তার ডোপ টেস্ট করা হবে। বিষয়টি রমনা থানা তদন্ত করে আপনাদের জানাতে পারবে। কারণ এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছে।
গাড়ির ধাক্কায় আহত ব্যাংক কর্মকর্তা ফখরুল হাসান বলেন, বাসা থেকে আমার ছেলেকে নিয়ে রমনা পার্কে যাওয়ার জন্য রিকশা নিয়েছিলাম। বেইলি রোডে যাওয়ার পরে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে আমিসহ আমার পাঁচ মাসের শিশু সন্তান পড়ে যাই। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। রাত ১০টার দিকে চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে। আমার ডান হাত ভেঙে গেছে। মাথায় আঘাত লেগেছে। আমি অনেক কিছু ভুলে গেছি। আমার পাঁচ মাস বয়সী ছেলের ডান পা ভেঙে গেছে। তার পায়ে আজ (রোববার) বিকেলে অপারেশন করা হয়েছে। আমাদের বহনকারী রিকশারচালকও পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি। আমার ছেলেও মাথায় ব্যথা পেয়েছে ডাক্তার সিটি স্ক্যান করতে বলেছে। এখনও করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনি পেশাগত কাজে ব্যস্ত থাকায় আমি আমার শিশুপুত্রকে নিয়ে ছুটির দিনে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি মামলা করেছি।
টিটি/এআরএ