দুদকের ১৩ অভিযোগের জবাবে যা বললেন শরীফ উদ্দিন

সাইফুল হক মিঠু
সাইফুল হক মিঠু সাইফুল হক মিঠু
প্রকাশিত: ০১:০২ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
মো. শরীফ উদ্দিন সম্প্রতি দুদক থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন

বিধিমালা ভঙ্গসহ একাধিক অভিযোগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরদিন (১৭ ফেব্রুয়ারি) এ ঘটনার প্রতিবাদে প্রথমবারের মত মানববন্ধন করেন ঢাকাসহ ২১ জেলার দুদক কর্মকর্তারা।

সেদিন জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন দাবি করেন, দুদকের বিধিমালা ভঙ্গ করায় শরীফের বিরুদ্ধে এই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও ৭ থেকে ১০টি অভিযোগ থাকলেও তা জনসম্মুখে বলা সম্ভব না।

চার দিন পর গত রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) রীতিমত সংবাদ সম্মেলন করে শরীফের বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগ জানান দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

তার সেসব অভিযোগের জবাব দিয়ে জাগো নিউজের কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন শরীফ উদ্দিন।

তিনি বলেছেন, ‘কমিশন যে অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে এনেছে, তা প্রমাণিত হলে তো আমার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মিসকনডাক্টের অভিযোগ আসবে। অথচ বরখাস্ত করা হয়েছে অসদাচারণের দায়ে। কিন্তু সেটার জন্য দুদকের কর্মচারী বিধির ৩৮ ধারা রয়েছে।’

শরীফ বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সবগুলো অভিযোগের অভিযোগকারীরা হলেন অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা তো অভিযোগ করবেনই। এমন হলে সংক্ষুব্ধদের বিপক্ষে গেলে দুদকের অনেকেরই চাকরি যাবে। এসব ক্ষেত্রে আপস করলে এগুলোর কিছুই হতো না।’

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে একের পর এক দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন শরীফ উদ্দিন। চাকরিচ্যুত করার আগে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তাকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়।

দুদক সচিব তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছেন, তার জবাব জাগো নিউজকে দিয়েছেন শরীফ।

প্রথম অভিযোগ: শরীফ কোনো অনুসন্ধান বা তদন্তের দাবি পাওয়া মাত্র দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তের নির্দেশিকা অনুসরণ না করে নিজের খেয়ালখুশি মতো কাজ করতেন।

শরীফ উদ্দিন: অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট ও সত্য নয়। সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বে উপ-পরিচালক (ডিডি) থাকেন। কাউকে তলব করলে নোটিশের একটি কপি ডিডিকে দিতে হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগ: অনুসন্ধান বা তদন্ত করার সময় শরীফ উদ্দিন অভিযোগের সঙ্গে সরাসরি সংশিষ্ট নন, এমন বহু ব্যক্তিকে নোটিশ বা টেলিফোনের মাধ্যমে ডেকে এনে হয়রানি করতেন।

শরীফ উদ্দিন: অভিযোগটি সত্য ও সুনির্দিষ্ট নয়। চট্টগ্রাম-২ কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালে অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট বেলায়েত হোসেন এমন একটি অভিযোগ করেছিলেন। পরে তদন্তসাপেক্ষে আমার পক্ষেই রিপোর্ট করা হয়েছে।

তৃতীয় অভিযোগ: অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে কোনো ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (জব্দ) বা নো ডেবিট করার প্রয়োজন হলে আইন ও বিধিতে তার সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। শরীফ ওই নিয়মের তোয়াক্কা করতেন না এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতেন না। তিনি কমিশনকে পাশ কাটিয়ে এবং আদালতের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও তা না করে দুদক বিধিমালা ২০০৭-এর বিধি ১৮ লঙ্ঘন করে লিখিতভাবে ১৫টি ব্যাংক হিসাব ও মৌখিকভাবে আটটিসহ মোট ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছেন।

শরীফ উদ্দিন: আমি ব্যাংকে টাকা জব্দ করার আদেশ দেইনি। তদন্তের স্বার্থে ব্যাংকে অনুরোধপত্র দিয়েছিলাম। অনুরোধপত্রে এটাও লেখা ছিল যে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে এ ব্যাপারে শিগগির অবহিত করা হবে। তাৎক্ষণিকভাবে এটা করা হয়েছিল শুধু অপরাধলব্ধ টাকাগুলো উত্তোলন সাময়িকভাবে বন্ধ করার জন্য। এখানে আমার ক্রিমিনাল ইন্টেনশন (অপরাধের ইচ্ছা) ছিল না।

চতুর্থ অভিযোগ: কক্সবাজারে একজন সার্ভেয়ারের বাসায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব ঘুষের ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করে। জব্দকৃত অর্থ ২০২০ সালের ১০ মার্চ আলামত হিসাবে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে শরীফকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে দীর্ঘ এক বছর চার মাস ওই অর্থ নিজের হেফাজতে রেখেছেন। বিষয়টি হাইকোর্ট বিভাগের দৃষ্টিগোচরে এলে সুয়োমোটো রুল জারি করা হয়। এ বিষয়ে শরীফের ব্যাখ্যা আদালত গ্রহণ করেনি।

শরীফ উদ্দিন: জব্দ করা আলামত তদন্তকারীর কাছে রাখার ক্ষেত্রে আইনগত বাধা নেই। জব্দ করা আলামতের টাকা তদন্তকারীর কাছে রাখা যাবে না, এমন বাধ্যবাধকতার কথা আইনে নেই। জব্দকৃত আলামতের টাকা অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার কাছে ছিল, এমন নজির দুদকে প্রচুর আছে।

দুদকের ১৩ অভিযোগের জবাবে যা বললেন শরীফ উদ্দিন

সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন

পঞ্চম অভিযোগ: শরীফ উদ্দিন একটি মামলায় ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে অত্যন্ত নির্মমভাবে প্রহার করেছেন। যা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ ধরনের বহু অভিযোগ রয়েছে।

শরীফ উদ্দিন: মোহাম্মদ ইদ্রিস নামে একজনকে এল এ মামলায় তদন্তে আগত আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আদালতের আদেশে রিমান্ড কার্যক্রম গ্রহণ করেছি এবং তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে মারধর করা হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়। আর কাকে রিমান্ডে এনে বা ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়েছে, তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হোক।

ষষ্ঠ অভিযোগ: শরীফ উদ্দিনের কর্মকাল তিন বছরের অধিক হওয়ায় অন্য আরও ২০ কর্মচারীর সঙ্গে তাকে বদলি করা হয়। এ বদলি আদেশ সবাই যথাসময়ে কার্যকর করেন। কিন্তু এই বদলির আদেশের বিরুদ্ধে শহিদুল ইসলাম লিটন নামের একজন মানবাধিকারকর্মীর ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে হাইকোর্ট বিভাগে রিট করা হয়। বদলির আদেশ স্থগিত করার অসত্য সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু এ ধরনের কোনো আদেশ হাইকোর্ট দেননি।

শরীফ উদ্দিন: আমার বদলির আদেশের বিরুদ্ধে শহিদুল ইসলাম নামে যে ব্যক্তি রিট করেছিলেন, তাকে আমি চিনি না। এমনকি আমার চাকরিচ্যুতির পর ১০ জন আইনজীবী উচ্চ আদালতে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে আমার নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে চিঠি দিয়েছেন, সেটাও আমার জানার বাইরে ছিল। কেউ যদি নিজ উদ্যোগে আমাকে নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেন, সে ক্ষেত্রে আমার কী করণীয় থাকতে পারে?

সপ্তম অভিযোগ: জনস্বার্থে ২০২১ সালের ১৬ জুন সমন্বিত জেলা কার্যালয় (সজেকা) চট্টগ্রাম-২ হতে সজেকা, পটুয়াখালীতে শরীফকে বদলি করার দীর্ঘ একমাস পর (১৭ জুলাই) ইমেইলযোগে পটুয়াখালীতে যোগদানপত্র প্রেরণ করেন। আর ১০ আগস্ট স্বশরীরে দুদকের পটুয়াখালী অফিসে উপস্থিত হন। এই বিলম্বের কারণ হিসেবে লকডাউন বলে তিনি উল্লেখ করেন। কিন্তু লকডাউনের মধ্যেও স্বশরীরে পটুয়াখালীতে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ ছিল। বিলম্বে যোগদান করে তিনি কমিশনের আদেশ অবজ্ঞা করেছেন।

শরীফ উদ্দিন: তখন আমি করোনায় আক্রান্ত ছিলাম, যা দুদককে লিখিতভাবে জানিয়েছি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি চাকরিবিধি অনুযায়ী অনিবার্য কারণবশত বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানকাল সর্বোচ্চ ৩০ দিন বর্ধিত হতে পারে। করোনায় আক্রান্ত থাকার সনদ (চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের সত্যায়িত করা) জমা দেওয়ার পরও আমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল।

অষ্টম অভিযোগ: শরীফ উদ্দিনকে পটুয়াখালীতে বদলির পর কর্মস্থল ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে সব রেকর্ডসহ নথিপত্র বুঝিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। নথি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য কখনোই পৃথক আদেশ জারি করা হয় না। তা সত্ত্বেও তিনি তা না করায় দীর্ঘ প্রায় তিন মাস পর নথিপত্র বুঝিয়ে দিতে তাকে পটুয়াখালী থেকে ডেকে নিয়ে আসা হয়।

শরীফ উদ্দিন: করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে সমগ্র দেশে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়। এমতাবস্থায় কর্মস্থলে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সম্ভবপর হয়নি। পরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (মানবসম্পদ) মো. রফিকুল ইসলামের নির্দেশে সজেকা, পটুয়াখালীতে অফিসিয়াল ই-মেইল প্রেরণ করি। কর্মস্থলের তাড়নায় শারীরিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ থাকার পরও ঈদের দুই দিন পূর্বে গত বছরের ১৮ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে বরিশাল পর্যন্ত আমার উড়োজাহাজের টিকিট অনেক চেষ্টার পর জোগাড় করি। সেদিন বিমানবন্দরে যাওয়ার প্রাক্কালে অজ্ঞান হয়ে পড়ি এবং পরে আত্মীয়-স্বজনরা চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার হাসপাতালে আমাকে ভর্তি করলে কর্মরত চিকিৎসক কোভিড পরীক্ষার পরামর্শ দেন। এমতাবস্থায় বিগত ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে কোভিড পরীক্ষা করালে তা পজিটিভ আসে। ডাক্তারের পরামর্শে বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকি এবং চিকিৎসা নেই। করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (মানবসম্পদ) মো. রফিকুল ইসলামএবং সজেকা, পটুয়াখালীর উপ-পরিচালক মো. ওয়াজেদ আলী গাজীকে অবগত করার নিমিত্তে মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা প্রেরণ করি।

যেহেতু গত বছরের ১৬ জুন বদলির আদেশ এবং ৩০ জুন অবমুক্তির আদেশে নথি হস্তান্তরের কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ছিল না; যেহেতু আমার নিকট হতে নথি বুঝে নেওয়ার জন্য আমার অবমুক্তির প্রাক্কালে ৩০ জুন বিকেল ৫টায় তিন সদস্য বিশিষ্ট টিম গঠন করা হয়; যেহেতু করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবে সমগ্র দেশে বিগত ২০২১ সালের ১ আগস্ট হতে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়; যেহেতু বিগত ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়ন অনুযায়ী উক্ত দিন হইতে করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত হই; সেহেতু আমার বিরুদ্ধে ২২ আগস্ট নির্দেশপ্রাপ্তির পর নথি হস্তান্তরে দুই মাস ২১ দিন বিলম্ব করার অভিযোগ ভুল ও ভ্রান্তিকর।

নবম অভিযোগ: শরীফ জনৈক ব্যক্তির হুমকি দেওয়ার কথিত অভিযোগে গত ৩০ জানুয়ারি থানায় জিডি করেন। বিষয়টি তিনি কাউকে অবহিত করেননি। গণমাধ্যম সূত্রে জেনে ব্যবস্থা নিতে চাইলে তিনি কোনো সহযোগিতা নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেননি।

দুদকের ১৩ অভিযোগের জবাবে যা বললেন শরীফ উদ্দিন

দুদক থেকে চাকরিচ্যুত শরীফ উদ্দিন

শরীফ উদ্দিন: জিডি করার পর ৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের সচিব ও ৯ ফেব্রুয়ারি দুদকের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এছাড়া মোবাইলে দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে হুমকির বিষয়টি জানিয়েছি। ওই কর্মকর্তারাই জিডি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

দশম অভিযোগ: রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট প্রদান বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করেছেন শরীফ উদ্দিন। এ ধরনের অভিযোগ সংক্রান্ত পরিচালকের নেতৃত্বে ঢাকা ও চট্টগামের ৬ সদস্যের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়। শরীফ উদ্দিন টিমের সর্বকনিষ্ট সদস্য হওয়া সত্ত্বেও বিভ্রান্ত করে চলেছেন যে, তিনি সব উদঘাটন করেছেন।

শরীফ উদ্দিন: রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট প্রদান সংক্রান্তে অনুসন্ধান টিমে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলাম। উক্ত অনুসন্ধানের সব কার্যক্রম দুদকের সাবেক পরিচালক টিম লিডার মো. জহিরুল ইসলামের স্বাক্ষরে অনুমোদনপূর্বক প্রেরণ করা হতো। তিনিই সব নোটিশে স্বাক্ষর করতেন। এ বিষয়ে টিম লিডারের বক্তব্য নেওয়ার অনুরোধ করছি।

একাদশ অভিযোগ: কক্সবাজার জেলার জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ২০২০ সালের ১৫ মার্চে দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি-১০(বি) এর নির্দেশনা অনুসৃত হয়নি। বিশেষ করে প্রতিটি এল এ মামলার বিপরীতে কে, কখন, কীভাবে, কী অপরাধ করেছেন এবং অপরাধটি সংগঠনের সঙ্গে আসামিদের দায় সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। আসামিদের বিরুদ্ধে উথাপিত ক্রিমিনাল চার্জ সমর্থনে সাক্ষ্য-প্রমাণাদি সুস্পষ্টকরণ করা হয়নি।

শরীফ উদ্দিন: দাখিল করা প্রতিবেদনে ভুলত্রুটি থাকলে তদারককারী কর্মকর্তা সংশোধনের জন্য নির্দেশনা দেননি কেন? তারপরও দুদকের অফিস আদেশ অনুযায়ী যদি কোনো জিজ্ঞাসা বা অনুসন্ধান থাকতো, তাহলে তা আমাকে দিয়েই সংশোধন করানো যেতো।

দ্বাদশ অভিযোগ: স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, বদলি, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্লিনিক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে শরীফের দাখিলকৃত অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সঙ্গে তদারককারী কর্মকর্তাই দ্বিমত পোষণ করেছেন। তার প্রতিবেদন কমিশন কর্তৃক বিবেচিত না হওয়ায় দুই সদস্যের টিম গঠন করে পুনরায় অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো হয়েছে।

শরীফ উদ্দিন: চট্টগ্রাম বিএমের দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট দাখিল করেছি। সেখানে কোয়ারি করেছেন পরিচালক। অথচ তার কোয়ারির সব জবাবই রিপোর্টে রয়েছে।

ত্রয়োদশ অভিযোগ: শরীফ উদ্দিন ২০১৭ সালে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর ওই কোম্পানির কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে সেখানে তার আপন ছোট ভাই শিহাব উদ্দিন সবুজকে কোনো বিজ্ঞাপন ছাড়াই ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চাকরি দেন। বর্তমানে শিহাব আইটি ডিপার্টমেন্টে কর্মরত আছেন।

সেখানে তার আত্মীয় মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিনকেও জাল সনদের মাধ্যমে ড্রাইভার পদে চাকরি দিয়েছেন, যা বর্তমানে তদন্তাধীন। তার নিজের ভাই ছাড়াও নিকটাত্মীয়কে প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

শরীফ উদ্দিন: বাবার কর্মসূত্রে আমরা চট্টগ্রামের ষোলশহরে রেলওয়ে কলোনিতে থাকতাম। তার পাশেই কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। ১৯৯২ সাল থেকে সেখানে বড় হয়েছি। আমার ছোট ভাই শিহাব উদ্দিনসহ এলাকার শিক্ষিত অনেক বেকার যুবক ২০১৭ সাল থেকে দুই বছরের চুক্তিতে আউটসোর্সিং ঠিকাদারের মাধ্যমে সেখানে চাকরি করছেন। যখন শিহাব সেখানে নিয়োগ পেয়েছেন, তখন কর্ণফুলী গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন খায়েজ আহম্মদ মজুমদার। তাকে (খায়েজ আহম্মদ) জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে, আমি তাকে আমার ভাইয়ের চাকরির জন্য কোনো অনুরোধ করেছি কি না। আর শাহাব উদ্দিন নামে কাউকে আমি চিনি না, এ নামে আমার কোনো আত্মীয়ও নেই।

এসএম/এইচএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।