টগি ফান ওয়ার্ল্ডে শিশু-কিশোরদের ঈদ আনন্দ
ঈদের চারদিন আগে থেকেই স্কুলপড়ুয়া আয়ান রায়হানের বায়না, ছুটিতে তাকে টগি ফান ওয়ার্ল্ডে নিয়ে যেতে হবে। তার বায়না ফেলতে পারেনি বাবা রায়হান রাজু। ঈদের দ্বিতীয় দিন বুধবার (৪ মে) দুপুরে চলে যান বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের টগি ফান ওয়ার্ল্ডে। টিকিট কেটে নানান রাইডে চড়ে আনন্দে মেতে উঠে আয়ান রায়হান।
আলাপকালে রায়হান রাজু বলেন, টগি ফান ওয়ার্ল্ড শিশুদের আনন্দ বিনোদনের ভিন্ন এক জগত। এখানে নাগরদোলায়, ঘোড়ার পিঠে, বাম্পার কারে চড়ে উল্লাসে মেতে উঠেছে শিশু-কিশোরেরা। টিকিট কেটে ঢুকলেও বাচ্চার আনন্দ দেখে আমার খুব ভালো লাগছে।

রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের আট থেকে ১৮তলা পর্যন্ত ১১টি ফ্লোর (এক লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট) নিয়ে টগি ফান ওয়ার্ল্ড। প্রতিটি ফ্লোর যেন শিশু-কিশোরদের এক ভিন্ন রাজ্য। বুধবার (৪ মে) বিকেলে টগি ফান ওয়ার্ল্ড ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
টগি ফান ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার (৩ মে) ঈদ জামাতের পর টগি ফান ওয়ার্ল্ডে সাত হাজার ৪৩৬ জন শিশু-কিশোর ও তাদের বাবা-মা টগি ফান ওয়ার্ল্ডে গেছেন। আজ বিকেল চারটা পর্যন্ত ৬ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ টগিতে ঢুকেছেন। রাত পর্যন্ত তা ১০ হাজার হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে স্বাভাবিক সময়ে দিনে গড়ে এক হাজার শিশু-কিশোর টগিতে যায়।

আধুনিক রাইড ও গেমের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের আনন্দ বিনোদনের জন্য ২০১৭ সালে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের অষ্টম ও নবম ফ্লোরে চালু হয় টগি ওয়ার্ল্ড। তখন থেকেই টগি জনপ্রিয় হতে শুরু করে। চাহিদা বাড়ায় গত ২ মার্চ আরও রাইড স্থাপন ও গেম নিয়ে চালু হয় টগি ফান ওয়ার্ল্ড। এখন এখানে ১৫০টির বেশি রাইড ও গেম চালু রয়েছে। প্রবেশ ফি ১০০ টাকা। সেখানে বিভিন্ন প্যাকেজ বা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে রাইডগুলো ব্যবহার ও গেম খেলার সুযোগ মিলবে।
টগি ফান ওয়ার্ল্ড সংশ্লিষ্টরা জানান, এখানে থাকা ১৫০টি রাইড ও গেমের জন্য কয়কটি প্যাকেজ রয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ টাকায় শিশু-কিশোরদের জন্য সবচেয়ে পছন্দের প্যাকেজ ‘কিডো আনলিমিটেড প্যাকেজ’। স্বাভাবিক সময়ে ছুটির দিনে এই প্যাকেজ ৬০০ টাকা।

এছাড়া বড়দের জন্য বিভিন্ন রাইড ও গেম রয়েছে। ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায় তারা এই সুযোগ পাবেন। প্রতি রোববার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে টগি ওয়ার্ল্ড। শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত খোলা। এখন ঈদের ছুটি উপলক্ষে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সাপ্তাহিক বন্ধ মঙ্গলবার।
করোনার কারণে ২০২০-২০২১ সাল পর্যন্ত দেশের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে নানান বিধিনিষেধ ছিল। তখন টগি ওয়ার্ল্ডও বন্ধ ছিল। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আবার এটি চালু হয়। এখন এর পরিধি বাড়ায় শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণও বেড়েছে।

বুধবার বিকেল তিনটায় সরেজমিনে দেখা যায়, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের সামনে স্বাভাবিক সময়ের মতোই ভিড়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে টগি ফান পয়ার্ল্ডে ঢুকছেন অভিভাবকেরা। পৃথক চারটি টিকিট কাউন্টারে ভিড়।
নির্দিষ্ট প্যাকেজের টিকিট কেটে টগিতে ঢুকেছে তারা। এর মধ্যে অষ্টম, নবম, দশম ফ্লোরে শিশু-কিশোরদের চাপ বেশি দেখা গেছে। এ দুটি ফ্লোরে জাইরোস্কোপ, মিনি টাওয়ার, বাম্পার কার, লিটল প্লেনসহ প্রায় ১৫টি রাইড, ২৩টি গেমস, ৩টি সফট প্লে গ্রাউন্ড ও একটি ৮ লাইনের কিডস বোলিং রয়েছে।

ঢাকার ধানমন্ডি থেকে দুই স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েকে নিয়ে টগিতে যান ফয়সাল আহমেদ দম্পতি। ফয়সাল বলেন, মাস দুয়েক আগেও তারা টগি ফান ওয়ার্ল্ডে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে আসছিলেন। এখন ঈদের ছুটিতে আবার বাচ্চারা আবদার করায় নিয়ে আসছি। তারা ভালোই উপভোগ করছে।
উত্তরা-৬ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা মো. সোলাইমান। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। তিনিও তার এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে টগিতে বেড়াতে যান। আলাপকালে সোলাইমানের স্কুল পড়ুয়া ছেলে নাঈম হাসান বলে, স্কুলে ক্লাস থাকায় অন্যান্য সময় এদিকে আসার সুযোগ থাকে না। এখন ঈদের ছুটি চলছে। তাই বাবাকে নিয়ে চলে আসছি। বিভিন্ন রাইডে চড়ে মজা পাচ্ছি।

টগি ফান ওয়ার্ল্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ইনচার্জ মাসুদুর রহমান মান্না জাগো নিউজকে বলেন, রাজধানীতে চার দেয়ালে বন্দি থাকে শিশু-কিশোরেরা। বিদ্যালয়গুলোতেও মাঠ নেই। এমন শিশুদের আনন্দ দিতে টগি ফান ওয়ার্ল্ডের যাত্রা।
এটি এখন শিশুদের বিনোদনের অন্যতম প্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে। টগি ফান ওয়ার্ল্ডে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। টগি ফান ওয়ার্ল্ড এখন আবদ্ধ, ভবনের ভেতর। আমরা এটিকে উন্মুক্ত জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। হয়তোবা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ চলছে।
এমএমএ/এমআরএম/জিকেএস