হবিগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্ব হস্তান্তর নিয়ে আইনি জটিলতা


প্রকাশিত: ১২:১৯ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

হবিগঞ্জ পৌরসভায় নব-নির্বাচিত মেয়র জি কে গউছ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সিলেট কারাগারে আটক থাকায় দায়িত্ব হস্তান্তর নিয়ে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। যদি সোমবারের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর না হয়, তবে জটিলতা আরো ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পৌরসভার কার্যক্রমে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। নির্বাচনী আইনেও এর কোনো সমাধান দেয়া নেই। এ অবস্থায় পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানতে চেয়ে ইতিমধ্যেই ঊর্ধ্বতন বিভিন্ন দফতরে চিঠি চালাচালি শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। তারাও জানেন না এর সমাধান কি ?

স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী, ২০০৯ সালের যে আইন রয়েছে তার ৮ এর ৩ (উপধারা ১)-এ বলা আছে একটি পরিষদ গঠিত হওয়ার পর তারা পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। সে হিসেবে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হবিগঞ্জ পৌরসভায় পুরোনো পরিষদ কাজ চালিয়ে যেতে কোনো আইনগত বাধা নেই। আবার ধারা ৮ এর উপধারা-৩ এ বলা আছে- গেজেট প্রকাশের পর ৩০ দিনের মধ্যে প্রথম সভা অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) নির্ধারিত তারিখ শেষ হচ্ছে। এ উদ্ভূত জটিলতায় জেলা প্রশাসন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা চেয়ে পত্র দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে পৌরসভার নব-নির্বাচিত কাউন্সিলর আবুল হাসিম জানান, রোববার তাদের নতুন পরিষদের দায়িত্ব নেয়ার কথা। ভারপ্রাপ্ত মেয়র নব-নির্বাচিত মেয়রের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু নব-নির্বাচিত মেয়র সিলেট কারাগারে আটক থাকায় আইনি কিছু জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে যদি দায়িত্ব হস্তান্তর সম্ভব না হয় তবে কি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে সে সম্পর্কে তার জানা নেই বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানান, রোববার বেলা ১১টায় হবিগঞ্জ পৌর পরিষদের নব-নির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু কিছু আইনি জটিলতার কারণে তা পিছিয়ে গেছে। মেয়র জি কে গউছ বর্তমানে সিলেট কারাগারে আটক আছেন। পৌর পরিষদের প্রথম সভায় উপস্থিত থেকে দায়িত্ব নেয়ার জন্য তার কাছে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। উক্ত সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আইনি পদক্ষেপ নিতে তিনি আবার জেল সুপারের মাধ্যমে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু জি কে গউছ সিলেট জেলা কারাগারে আটক রয়েছেন এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত দরকার। এজন্য আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তার আবেদনটি পাঠিয়েছি। তারা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের ভুলের কারণে এটি হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এবং আইন মন্ত্রণালয়ে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে সে মোতাবেক আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

হবিগঞ্জ পৌরসভার সচিব মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, আইনি কিছু জটিলতা রয়েছে। তবে পৌরসভার প্রথম সভা অনুষ্ঠানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে আপাতত পুরোনো পরিষদ চলছে।

এদিকে, রোববার নব-নির্বাচিত মেয়র জি কে গউছকে হবিগঞ্জে আনা হচ্ছে- বলে কয়েকদিন ধরেই খবর চাউর হচ্ছে। এ খবরে সকাল থেকেই দলীয় নেতাকর্মীসহ পৌর এলাকার অনেক বাসিন্দাই পৌরসভায় জড়ো হন। স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও। পৌরসভায় ছুটে যান গণমাধ্যম কর্মীরাও।

প্রসঙ্গত, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার সর্বশেষ অধিকতর তদন্তের চার্জশিটে আসামিভুক্ত হওয়ায় হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছ ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলে তখন থেকেই তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন। একই ঘটনায় বিস্ফোরক মামলার চার্জশিটেও তিনি আসামিভুক্ত হয়েছেন। হত্যা মামলাটি বর্তমানে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আছে। কারাগারে আটক থাকা অবস্থায়ই তিনি হবিগঞ্জ পৌরসভায় তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এআরএ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।