কাদামাটিতে টমেটো চাষ করে জসিমের সাফল্য


প্রকাশিত: ০৬:৩৭ এএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

কাদামাটিতে শীতকালীন সবজি টমেটো চাষ ও উৎপাদন পদ্ধতিতে দ্বিগুণ লাভজনক ফলনের উদ্ভাবন করেছেন নোয়াখালীর কৃষক জসিম উদ্দিন। চাষবিহীন পরিত্যক্ত ও কাদামাটিতে টমেটো চাষ এবং কীটনাশক ছাড়া অল্প খরচে এ নতুন পদ্ধতি এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে।

সরেজমিনে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বারেগাঁও ইউনিয়নের কাশীপুর বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি পুকুরের তলানির কিছুটা উপরে টমেটোর ক্ষেত। খানিকটা আরো কাছে গিয়ে দেখা গেলো কাদামাটিতে লাগানো টমেটো গাছগুলো এখন ফলনের ভারে নুইয়ে পড়েছে মাটির সঙ্গে। তাই গাছগুলোকে বাঁশের পরিবর্তে বিভিন্ন শুকনো গাছের ডাল দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। আর কয়েকদিন পর টমেটোগুলো বাজারজাত করা হবে।

কথা হয় কৃষক জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। টমেটো গাছগুলো পরিচর্যার কাজের ফাঁকে জাগো নিউজকে তিনি জানান, কাশীপুর বাজারে তিনি দীর্ঘ দিন থেকে সার, বীজ, বিভিন্ন কীটনাশক ওষুধের ব্যবসা করে আসছেন। বর্তমানে বি.এ.ডি.সি’র একজন তালিকাভুক্ত ডিলার তিনি। এরই মধ্যে তিনি চট্টগ্রাম খুলশী বীজ গবেষণাগার, ঢাকার গাজীপুর ধান গবেষণাগার, গাবতলী বীজভবনসহ বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান বীজ ও সবজি বীজ কৃষি গবেষণাগারে সরকারি আয়োজনে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রশিক্ষণ নেয়ার পর থেকেই তাঁর মাথায় একটি চিন্তা আসতে এত টাকা খরচ করে তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে কিন্তু দেশ ও জাতির জন্য তো কিছুই করতে পারছেন না।

Noakhali-Agriculture
২০১৪ সালের দিকে জসিম উদ্দিন তার গ্রামের বাড়ি বারোগাঁও ইউনিয়নের ওয়াসেকপুর গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে কাদামাটিতে কিছু টমেটো চারা রোপণ করে দেখতে পান প্রচুর ফলন হয়েছে। সে ফলন দেখে গত বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে লিজ নেয়া জমির পুকুর পাড়ে কাদা মাটিতে দেড়  বিঘারও বেশি জমিতে ইরি চাষের ন্যায় চারা থেকে চারার দেড় ফুট ও সারি থেকে সারির তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে সারিবদ্ধভাবে প্রায় ৪ হাজার ২০০টি উচ্চফলনশীল উন্নত জাতের টমেটোর চারা রোপণ করেন। চারা রোপণের আগে অন্যত্র বীজতলায় প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক ব্যবহার করা হলেও কাদামাটিতে রোপণের পর সেচ ছাড়া আর কোন সার কিংবা কীটনাশক ব্যবহার করেননি। সব মিলে ৫০ হাজার টাকা খরচে দেড় বিঘা জমি থেকে তিনি প্রায় তিন লাখ টাকার টমেটো বিক্রয় করে মুনাফা আয় করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। আর এখন তার একটাই প্রত্যাশা তার উদ্ভাবিত এ টমেটো চাষের নতুন পদ্ধতিটি তিনি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিবেন।

এদিকে নতুন পদ্ধতি কাদামাটিতে টমেটো চাষে সাফল্যের খবর শুনে প্রতিদিন তার চাষকৃত জমি দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে অনেকে আসছেন। এ সময় কথা হয় অম্বরনগর গ্রাম থেকে আসা ফারুক ফয়সাল নামে একজনের সঙ্গে। তিনি জানান, কৃষক জসিম উদ্দিনের উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতিটি জানার পর তিরি তার গ্রামের বাড়িতে ও কাদামাটিতে টমেটো চাষ করবেন।আর এভাবে সবাই পরিত্যক্ত জমিতে টমেটো চাষাাবাদে আগ্রহী হলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যতে এখানকার উৎপাদিত টমেটো রফতানি করা সম্ভব হবে। এজন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

সোনাইমুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, টমেটো চাষে কৃষক জসিম উদ্দিনের উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতিটি একটি ব্যয় সাশ্রয়ী পদ্ধতি। এছাড়া পরিত্যক্ত ও কাদামাটিতে শুন্য চাষে টমেটো চাষের এ নতুন পদ্ধতিটি সম্প্রসারণযোগ্য। তাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে তারা গোটা জেলায় এটি ছড়িয়ে দিবেন। যাতে আগামীতে অনাবাদি জমিগুলোতে এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করা হয়।

এসএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।