জঙ্গি ছিনতাই

ফের আলোচনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি মেজর জিয়া

তৌহিদুজ্জামান তন্ময়
তৌহিদুজ্জামান তন্ময় তৌহিদুজ্জামান তন্ময় , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০২ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২২

আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে ঘটনাটি। এই ঘটনায় আবারও সামনে এসেছে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়ার নাম।

জানা গেছে, আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বা মূল পরিকল্পনাকারী মেজর জিয়া। ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার দুই জঙ্গি এমন তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের ওপর স্প্রে করে দুই আসামি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নিয়ে যান জঙ্গিরা। এসময় ঘটনাস্থল থেকে আসামি মো. আরাফাত রহমান (২৪) ও মো. আ. সবুর ওরফে রাজ ওরফে সাদ ওরফে সুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেরকেও ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করেন জঙ্গিরা।

এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।

মামলায় পুলিশের ওপর হামলা করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনায় নাম আসে মেজর জিয়ার। গ্রেফতার দুই জঙ্গি আরাফাত ও সবুর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে মেজর জিয়ার বিষয়ে জানান।

ব্যর্থ অভ্যুত্থানের চেষ্টায় ২০১২ সালে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন মেজর জিয়া। এই অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত থাকায় দুই সেনা কর্মকর্তা গ্রেফতার হলেও পালিয়ে যান জিয়া। এরপর তিনি যুক্ত হন জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে। বহিষ্কৃত জিয়ার পরিকল্পনা ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ঘটে একের পর এক হত্যাকাণ্ড। আনসার আল ইসলামের বেশিরভাগ নেতাকর্মী গ্রেফতার হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে তিনি। এরই মধ্যে কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ হয়েছে।

আরও পড়ুন: আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিলো জঙ্গিরা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, প্রায় এক দশকে তারা অন্তত চারবার জিয়ার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারলেও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় তার অবস্থান শনাক্ত করতে পেরেছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। তবে তাকে গ্রেফতারে বাহিনীর সদস্যরা পৌঁছানোর আগেই পালিয়ে যান তিনি।

মেজর জিয়া দেশেই আছেন, নাকি দেশের বাইরে পালিয়েছেন, তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সম্পৃক্ত পুলিশের একাধিক ইউনিটের দায়িত্বশীলরা। তবে তাকে গ্রেফতারে চেষ্টা কখনই থেমে ছিল না এবং সামনের সময়েও চলমান থাকবে বলে জানান তারা।

২০১২ সালে অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে সেনাবাহিনী। ওই বছরের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সৈয়দ জিয়াউল হক পালিয়ে গেছেন। তাকে ধরিয়ে দিতে ছবিসহ পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয় সেসময়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াসের অন্য পরিকল্পনাকারী মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক গত ২২ ডিসেম্বর (২০১১) অন্য এক কর্মরত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে তাকেও রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড তথা সেনাবাহিনীকে অপব্যবহার করার কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে প্ররোচনা দেন। ওই কর্মকর্তা বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানালে সদ্য দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী মেজর জিয়ার ছুটি ও বদলি আদেশ বাতিল করে তাকে দ্রুত ঢাকার লগ এরিয়া সদরদপ্তরে যোগ দিতে বলা হয়। বিষয়টি টেলিফোনে গত ২৩ ডিসেম্বর তাকে জানানো হলেও তিনি পলাতক থাকেন।’

‘জিয়া পালিয়ে যাওয়ার পরের বছর জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১৩ সাল থেকে একে একে হত্যার শিকার হন ব্লগার রাজীব হায়দার, ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান, ব্লগার অনন্ত দাস, ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ব্লগার নাজিম উদ্দিন, সমকামীদের অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়।’

পুলিশ বলছে, এই ৯ হত্যাকাণ্ডের আটটিতেই জড়িত আনসার আল ইসলামের সদস্যরা। এর মধ্যে ছয়টি হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক।

জিয়ার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুরে। পড়াশোনা করেছেন সিলেট ক্যাডেট কলেজে। কলেজ জীবন শেষে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।

জিয়ার বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকতেন সৌদি আরবে। সেই সুবাদে ক্যাডেট কলেজে ভর্তির আগেই কয়েকবার ওমরাহ করেছিলেন জিয়া। তিনি বরাবরই শিক্ষা জীবনে মেধাবী ছিলেন। কলেজ জীবনে তিনি ছিলেন সেরা অ্যাথলেট।

আরও পড়ুন: জঙ্গি ছিনতাই: আদালতের গেটে নেই সিসি ক্যামেরা!

সৈয়দ জিয়াউল হক ১৯৯৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ক্যাডেট জীবনে তিনি ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুশাসন মেনে চলতেন বলে জানিয়েছেন তার স্কুলের বন্ধুরা।

২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সঙ্গে জিয়ার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায় পুলিশ। জিয়া জঙ্গিদের যুদ্ধ ও বোমা তৈরিসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।

পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালে এবিটি প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানী গ্রেফতার হওয়ার পর এই নিষিদ্ধ সংগঠনের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসেবে জিয়ার নাম সামনে আসে।

২০১৬ সালে ২ আগস্ট মেজর জিয়া ও তামিম চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা দেন তৎকালীন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক।

জঙ্গি ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তি শনাক্ত

আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। সোমবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তিনি বলেন, গতকাল রোববার আদালত থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তির নাম আমরা পেয়েছি। তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও কারা কারা ছিলেন এরকম বেশ কয়েকজনের নাম আমরা পেয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে ব্যক্তির নাম পরিচয় আমরা বলতে চাচ্ছি না।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা কীভাবে হয়েছে সেটাও আমরা গোয়েন্দার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। পরিকল্পনা ও অপারেশনে কারা কারা ছিলেন এরই মধ্যে গোয়েন্দা তথ্যে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। তাদের যতদ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করা আমাদের মূল লক্ষ্য।

জঙ্গিদের টার্গেট শুধু চারজনই ছিল নাকি আরও জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার টার্গেট ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, চারজনকে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, তবে দুজনকে তারা নিয়ে যান। প্রথমে চারজন নেমেছেন, তাদেরই তারা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। যদি একসঙ্গে বেশি নামতো তাদেরও নিয়ে যেতো হয়তোবা, এমন পরিকল্পনা থাকতে পারে। অপারেশনে যারা ছিলেন তাদের গ্রেফতার করলে পুরো পরিকল্পনা জানা যাবে।

তাদের আরও বড় পরিকল্পনা থাকলেও থাকতে পারতো বলে জানান তিনি।

সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়াকে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, অপারেশনের নেতৃত্ব জিয়া দেননি। যে অপারেশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তাকে আমরা শনাক্ত করেছি। তবে তার নামটি এই মুহূর্তে প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।

জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নতুন জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা আছে কি না- এমন এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম, জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের নিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনটি তৈরি হয়েছে। আনসার আল ইসলামেরও নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগসূত্র পেয়েছি। তবে গতকালের জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার অপারেশনে নতুন জঙ্গি সংগঠনের কোনো হাত নেই।

সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা যায়

জঙ্গিদের মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যাওয়ার দুটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পেয়েছে জাগো নিউজ। এতে দেখা যায়, ১ নম্বর রঘুনাথ দাস লেনের রায় সাহেব বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে লাল রঙের একটি মোটরসাইকেলে তিনজন পালিয়ে যান। তাদের পিছু পিছু আরও কয়েক যুবক দৌড়াচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে একজনের হাতে হেলমেট, দুজনের হাতে ব্যাগ ও দুজন খালি হাতে ছিলেন।

ছিটানো হয় পিপার স্প্রে

আদালত প্রাঙ্গণে দায়িত্বরত পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, অন্যান্য দিনের মতো আজকেও (রোববার) ডিউটিরত ছিলাম। হঠাৎ পিপার স্প্রে ছিটানোর পর চারদিক ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, আদালতের শুনানি শেষে প্রথমে চারজনকে নিচে নামিয়ে আনা হয়। দুটি হাতকড়া দিয়ে দুজনকে আটকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। বাকি আসামিরা তখন উপরে ছিলেন।

তিনি বলেন, চারজনের মধ্যে মইনুল হাসান ও আবু সিদ্দিককে জঙ্গিরা ছিনিয়ে নিয়ে যান। তবে মো. আরাফাত ও মো. সবুজকে নিতে পারেননি।

আদালতের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

জঙ্গিদের আদালতে আনার দিন নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির।

আদালতের নিরাপত্তার ঘাটতি আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলতে পারবে। তবে অবশ্যই নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার হওয়া উচিত ছিল। তাদের কীভাবে নামিয়ে আনা হয়েছিল তা জানি না।

আদালত এলাকা পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়েছি। আমাদের ডিবির প্রত্যেকটা টিম কাজ করছে। আশা করছি তাদের (পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি) দ্রুত গ্রেফতার করতে পারবো।

‘জঙ্গিরা বিভিন্ন কৌশল নিয়ে কাজ করেন। এবার তারা নতুন একটি কৌশল নিয়েছেন। আমরা শুনেছি আদালতের গেটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চোখে স্প্রে করে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছেন অপর জঙ্গিরা। চোখে স্প্রে করার কারণে দায়িত্বরতরা কিছু দেখতে পারেননি।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।

কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা

আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তিনি বলেন, বিচারের মাধ্যমে দুই জঙ্গির ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ দুজন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। তাদের আনা হয়েছিল, কোর্ট হাজতে তাদের রাখা হয়েছে, তাদের ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে প্রডিউস করার পর আবার নির্দিষ্ট রুমে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন আমরা জানলাম যে পুলিশরা তাদের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের ওপর কেমিক্যাল ছুড়ে, অজ্ঞান করে কয়েকজন তাদের সমর্থকদের নিয়ে পালিয়ে যান।

তিনি বলেন, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা রেড অ্যালার্ট জারি করেছি। আমাদের পুলিশ তাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে, তাদের খুব শিগগির ধরতে পারবো বলে আমরা বিশ্বাস করছি। আমরা বর্ডার এলাকাগুলোতেও বলে দিয়েছি, তারা যেন দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারেন।

‘এ ঘটনাটি দুঃখজনক। আমরা মনে করি যদি কারও অবহেলা থাকে, যদি কারও গাফিলতি থাকে যদি কেউ ইচ্ছা করে এ কাজটি ঘটিয়ে থাকেন, তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করবো।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, এটা নিয়ে নিশ্চয়ই আমরা তদন্ত কমিটি করবো। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। সচিব, কারা মহাপরিদর্শক, ডিএমপি কমিশনার সবাই এটা নিয়ে মিটিং করছেন। আমরা খুব সহসাই পরবর্তী নির্দেশনা জানাবো।

রাজধানীতে রেড অ্যালার্ট

আদালত থেকে ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে গ্রেফতারে রোববারই রাজধানীতে রেড অ্যালার্ট জারি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রাজধানীর প্রতিটি থানা ও অন্যান্য ইউনিটকে চেকপোস্ট বসানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ধরিয়ে দিলে পুরস্কার ২০ লাখ

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।

৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি, প্রতিবেদন তিনদিনের মধ্যে

দুই জঙ্গি পালানোর ঘটনায় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম আ্যন্ড অপস) এ কে এম হাফিজ আক্তারকে সভাপতি করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রোববার (২০ নভেম্বর) ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির সদস্যরা হলেন- ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস), যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি), লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ও ডিএমপির সিআরও’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ফিল্মি স্টাইলে জঙ্গি ছিনতাই, ২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি

এমন ফিল্মি স্টাইলে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ এর ২০ নভেম্বরের পার্থক্য প্রায় নয় বছর। তবে ঘটনা একই রকম। ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত। দীর্ঘসময় নিয়ে জেএমবি সদস্যরা ওই অপারেশনের ছক আঁকে। এজন্য জেএমবির শীর্ষ তিন নেতাকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার দিনকেই বেছে নেওয়া হয়।

পলাতকদের দ্রুত গ্রেফতারের আশা ডিএমপির

রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গেট থেকে দুই আসামিকে কারা ছিনিয়ে নিয়েছেন, তাদের সম্পর্কে তথ্য পেয়েছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হব।

টিটি/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।