চার শিশু হত্যা মামলার আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত


প্রকাশিত: ০২:৩৮ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

হবিগঞ্জের বাহুবলে ৪ শিশু হত্যাকান্ডের অন্যতম আসামি সিএনজি অটোরিকশা চালক বাচ্চু মিয়া র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টায় চুনারুঘাট উপজেলার দেওরগাছ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি ৯ এমএম পিস্তল ও ২ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

তাকে দুপুরে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কাউছার আলমের আদালতে নিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়।

শুনানি শেষে বিচারক তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে বাচ্চুর মৃত্যুর খবরে নিহত শিশুদের পরিবারে এসেছে স্বস্তী। অপরদিকে বাচ্চুর পরিবারের অভিযোগ বিচারের সুযোগ না দিয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

আটক সাহেদ আলীকে দুপুরে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব। বেলা ২টায় পুলিশ তাকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কাউছার আলমের আদালতে নিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চায়। শুনানি শেষে বিচারক তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে মোট ৭ জন গ্রেফতার হয়েছে। এর আগে ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর মাঝে ঘটনার অন্যতম নায়ক আব্দুল আলী বাগালের ছেলে রুবেল মিয়া ও জুয়েল মিয়া এবং সর্বশেষ তার অন্যতম সহযোগী হাবিবুর রহমান আরজু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। আর রিমান্ডে আছে আব্দুল আলী বগাল ও বশির মিয়া। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার র‌্যাবের হাতে আটক সাহেদ আলীকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে সুন্দ্রাটিকি গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সুনসান নিরব। রাস্তাঘাটেও তেমন কোনো মানুষ নেই। নিহত শিশুদের বাড়ির সামনে রাস্তায় অবস্থান করছেন পুলিশ সদস্যরা। বাচ্চু মারা যাওয়ার খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে কিছু আশপাশের বাসিন্দসহ বেশকিছু মানুষ নিহত শিশুদের বাড়িতে ভিড় করেন। তারা এ ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করে হত্যাকাণ্ডের অন্য আসামিদের ফাঁসি দাবি করেন। নিহত শিশুদের দাদি মরম চান কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, শুনেছি বাচ্চু র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। এতে আমরা খুশি হয়েছি। তবে আমার অবুঝ নাতিদের যারা হত্যা করেছে তাদের সবারই ফাঁসি চাই।

নিহত শুভর মা পারুল বেগম, তাজেলের মা আমিনা খাতুন ও মনিরের মা সুলেমা খাতুন জানান, আমাদের সন্তানদের যারা নির্মমভাবে মেরেছে তাদের বিচার যেন তেমনি হয়। তাহলেই আমাদের সন্তানদের আত্মা শান্তি পাবে। নিহত আরেক শিশু ইসমাইলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার মা মিনারা খাতুন সন্তানের বই হাতে নিয়ে কাঁদছেন।

তিনি বলেন, আমি সব হত্যাকারির ফাঁসি চাই।

অপরদিকে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত বাচ্চু মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে কোনো পুরুষ নেই। বাড়ির চারপাশ নিরব। এসময় বাচ্চুর মা আয়েশা খাতুন ও স্ত্রী রিনা বেগম বাচ্চু মৃত্যুর জন্য ৪ শিশু হত্যার অন্যতম নায়ক পুলিশ রিমান্ডে থাকা আব্দুল আলীকে দোষারাপ করে জানান, তার দলে না যাওয়ায় আব্দুল আলীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে বাচ্চুসহ তার ভাইয়েরা।

এ ব্যাপারে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত দলের প্রধান সমন্বয়কারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, বাচ্চু না থাকলে বা মারা গেলে এ মামলার তদন্তে কোনো প্রভাব পড়বেনা। এ পর্যন্ত যে ৩ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তারা সবাই বাচ্চুর সম্পৃক্ততার কথা বলেছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, এ পর্যন্ত আদালতের কাছে দেয়া ৩ জনের দেয়া স্বীকারোক্তিতে জানা গেছে বাচ্চু শুধুমাত্র একজন বাহক ছিল। সে মারা যাওয়ায় হত্যাকাণ্ডের মূল বিষয়টির বিচারে কোনো প্রভাব পড়বেনা।

র‌্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের কমান্ডার কাজী মনিরুজ্জামান জানান, প্রযুক্তির সবধরণের সহায়তা এবং নিজেদের গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাতের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সুন্দ্রাটিকি গ্রামের বাসিন্দা সাহেদ আলীকে সিলেটের বিশ্বনাথ থেকে আটক করা হয়। সে র‌্যাবকে জানায়, হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার সম্পৃক্ততা ছিল। র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, সাহেদের দেয়া তথ্যে জানতে পারি হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি সিএনজি অটোরিকশা চালক বাচ্চু মিয়া চুনারুঘাট উপজেলার চাকলাপুঞ্জি সীমান্ত দিয়ে ভারত পালাচ্ছে। এমন খবরে সেখানে অভিযান চালায় র‌্যাব সদস্যরা। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বাচ্চুসহ তার সঙ্গে থাকা আরও ২/৩ জন র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এসময় র‌্যাব পাল্টা গুলি ছুড়লে বাচ্চু গুরুতর আহত হয়। তাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। এতে আহত হন র‌্যাবের কনস্টেবল রুকনুজ্জামান ও কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম। তাদেরকে আমাদের নিজেদের হেফাজতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ৯এমএম পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে সিলেটের বিশ্বনাথ থেকে সাহেদ আলী নামে আরও একজনকে আটক করা হয়।

বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের চার শিশু অপহরণের পর থেকেই তাদের পরিবার সন্দেহের তীর ছুড়ে একই গ্রামের বাসিন্দা সিএনজি অটোরিকশা চালক বাচ্চুর দিকে। বার বারই নিহত শিশুদের পরিবার বলছিল এ বাচ্চুই তাদের সন্তানদের অটোরিকশায় করে অপহরণ করেছে। বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে বালুর নিচ থেকে ৪ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হলে সন্ধ্যার পর থেকেই নিখোঁজ ছিল বাচ্চু।

বৃহস্পতিবার ভোর রাত সাড়ে ৪টায় চুনারুঘাট উপজেলার দেওরগাছ নামক স্থানে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে সে মারা যায়।

১২ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হয় সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মো. ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার দুই চাচাতো ভাই আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭) এবং তাদের আত্মীয় আবদুল কাদিরের ছেলে ইসমাঈল হোসেন (১০) অপহরণ হয়।

১৩ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন জাকারিয়া শুভর বাবা ওয়াহিদ মিয়া। ১৬ ফেব্রুয়ারি থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন নিহত মনির মিয়ার বাবা আব্দাল মিয়া।

১৭ ফেব্রুয়ারি বাড়ির পার্শ্ববর্তী ইছাবিল নামক স্থান থেকে ওই চার শিশুর মাটিচাপা দেয়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থেকে বিষয়টি দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এআরএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।