মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড

পরিচয় লুকিয়ে মাদরাসা শিক্ষক বনে যান আব্দুল মজিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:১০ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সাতটি অভিযোগে মো. আব্দুল মজিদকে (৮০) ২০১৫ সালে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৪ সালে এ মামলা দায়ের হয়। পরে বিচারকাজ চলাকালে গা ঢাকা দেন আব্দুল মজিদ। ধারণ করেন ছদ্মবেশ।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে নিজ এলাকা নেত্রকোনার পূর্বধলা ছেড়ে ঢাকার ফকিরাপুলে গোপনে অবস্থান নেন। পরে চলে যান মাদারীপুরে। সেখানে গিয়ে পরিচয় গোপন করে একটি কামিল মাদরাসায় শিক্ষক বনে যান একাত্তরের রাজাকার আব্দুল মজিদ।

এরপর নিয়মিত বাসা পরিবর্তন, অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ড দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার, জনসমাগম ও সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতেন তিনি। দীর্ঘ আট বছরের বেশি সময় পলাতক থাকার পর অবশেষে বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে মাদারীপুর সদর এলাকা থেকে মজিদকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, গ্রেফতার আব্দুল মজিদ ১৯৭০ সালে জামায়াতে ইসলামীর পূর্বধলা থানার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মজিদ রাজাকারদের প্রধান বাহিনী আল-বদর পূর্বধলা রামপুর থানা কমিটির প্রধান হন। একাত্তরের ২১ আগস্ট দুপুরে রামপুরে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের বাড়িতে খালেকসহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর খালেকের মরদেহ পাশের কংস নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মরদেহ বস্তাবন্দি অবস্থায় কোকখালী নদীতে ফেলা হয়। ওইদিন আল-বদর বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মজিদ পূর্ব মৌদাম গ্রামে একটি মুক্তি কয়েদখানা গড়ে তোলেন। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন ও নৃশংসভাবে হত্যা করতেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ৩৬তম রায়ের বিষয়ে র‌্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন পালিয়ে বেঁচে যাওয়া আব্দুল কাদের ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আব্দুল মজিদসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করেন।

হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৯ সালে আরও তিনজনসহ মোট সাত আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। বিচার চলাকালে এ মামলার দুজন আসামি আহম্মদ আলী ও আব্দুর রহমান মারা যান এবং রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় মারা যান আরও দুই আসামি রদ্দিন মিয়া ও আব্দুস সালাম বেগ। অন্য দুই আসামি আব্দুল খালেক তালুকদার ও কবির খাঁ বর্তমানে পলাতক।

অন্যদিকে মামলার বিচারকাজ চলাকালে কোনো হাজিরা না দিয়ে ২০১৫ সালে আব্দুল মজিদ তার নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় এসে ফকিরাপুল এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন। এরপর এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় মাদারীপুরে গিয়ে আত্মগোপন করেন এবং সেখানকার একটি কামিল মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে পলাতক জীবন শুরু করেন।

র‌্যাব জানায়, ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলার শুনানিতে হাজিরা না দেওয়ায় আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এর পরই তিনি প্রথমে ঢাকায়, পরে মাদারীপুরে চলে যান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন। এসময় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে অন্যের রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ড দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন।

র‌্যাব জানিয়েছে, পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকায় নিয়মিত মজিদকে বাড়ি থেকে টাকা পাঠানো হতো। আত্মগোপনে থাকাকালে মজিদ সাধারণত জনসমাগম, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলতেন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

আরএসএম/এমকেআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।