অনলাইনের সুবাদে ছাপানো বইয়ের পাঠক বাড়ছে


প্রকাশিত: ০৬:৪৫ এএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অগ্রগণ্য তৌহিদুর রহমান। তিনি যখন ক্লাস থ্রিতে, তখন তার প্রথম লেখা ছাপা হয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়। সরকারি চাকরিজীবী বাবার বদলির সুবাদে দশ স্কুল, তিন কলেজ আর আট জেলায় তার শিক্ষাজীবন কেটেছে। পরবর্তীতে পিএইচডি করেন হিসাববিজ্ঞানে। পেশায় শিক্ষক হলেও লেখক হিসেবেই বিচরণ ও পরিচিতি। স্বপ্ন দেখেন দেশে একটি স্বতঃসাহিত্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। তার ইচ্ছা নিজ জেলা কুড়িগ্রামের নিভৃত গ্রাম মধুপুরের আপন আঙিনায় তৌহিদুর রহমান সাহিত্য পরিষদ গড়ার। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বসেছিলেন এই লেখক। সঙ্গে ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক সরকার।

জাগো নিউজ : এবারের বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে?
তৌহিদুর রহমান : মোট ৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত `আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ`, অনন্যা থেকে প্রকাশিত `বাবা আমার একলা বাবা` ও `বসন্ত কারাগারে বারোমাস` এবং অন্বেষা থেকে প্রকাশিত `শুধু তোমার জন্য`। এর মধ্যে বাবা আমার একলা বাবা ও আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ এ বই দু’টির তৃতীয় সংস্করণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

Touhid

জাগো নিউজ : মেলায় পাঠকদের সাড়া কেমন পাচ্ছেন?
তৌহিদুর রহমান : অতীতের তুলনায় বর্তমানে পাঠকরা অনেক সচেতন। তারা না বুঝে কোনো বই কেনেন না। কেবল যে লেখকের বই পড়া আছে এবং যার লেখা ভালো শুধু সেসব লেখকদের বই কিনছেন তারা। সেদিক বিবেচনায় পাঠকদের সাড়া অভূতপূর্ব। পাঠকদের দিক থেকে বাংলাদেশে নতুন সাহিত্যিক তৈরির জন্য এই সময়টা সবচেয়ে ভালো।

জাগো নিউজ :  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার পরিধি অনেক বেড়ে যাওয়ায় অনেকে বলছেন মেলা এবার জমেনি, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মেলা। আপনি বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
তৌহিদুর রহমান : মেলার পরিধি বেড়ে যাওয়ায় যথেষ্ট লোকের সমাগম হয়েছে। বিক্রিও বেড়েছে। মেলা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়নি। বরং পাঠকদের জন্য এটি আরো ভালো হয়েছে। তারা ঘুরে ঘুরে অনেক সময় নিয়ে বই কিনতে পারছেন। তাই আমি মনে করি, মেলার পরিধি যদি এভাবে আরো বাড়ে, তাহলে সেটি বাংলা সাহিত্যের জন্য সুখকর হবে। তবে পরিধি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মেলা যেন অগোছালো হয়ে না যায় সেদিকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে আয়োজকদের। এবার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে অন্তত একটি খাবারের দোকান রাখা উচিত ছিল আয়োজকদের।

Touhidজাগো নিউজ : এখন অনলাইনের যুগ। অনলাইনে অনেকেই বই পড়েন। অনলাইনে বই পড়ার কারণে ছাপানো বইয়ের পাঠক কমছে কি?
তৌহিদুর রহমান : অনলাইনের কারণে ছাপানো বইয়ের পাঠক কমছে না বরং বাড়ছে। পাঠক একটিকে অন্যটির সম্পূরক মনে করছেন। কোনো পাঠকের যখন অনলাইনে একটি বই পড়ে ভালো লাগে তখন তিনি আবার ছাপানো বইটি কিনতে আসেন। অনলাইনের কারণে পাঠক অতিদ্রুত বইটি সম্পর্কে জেনে যাচ্ছেন। তারা জানাতে পারছেন নতুন নতুন কি কি বই মেলায় আসছে। অনলাইনে এসব তথ্য তারা আগে জেনেই নতুন বই কিনতে আসেন। অনলাইন কথনো ছাপানো বইয়ের বিকল্প নয়, এটি একটি সম্পূরক মাত্র।

জাগো নিউজ : আমরা জানি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রকাশকরাই বইমেলার আয়োজন করে থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি বইমেলার আয়োজন করে। আপনি কি মনে করেন আমাদের প্রকাশকদের বইমেলার আয়োজন করা উচিত?
তৌহিদুর রহমান : এ বইমেলা বাংলা একাডেমিরই আয়োজন করা উচিত। কারণ আমি মনে করি যতদিন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান এর আয়োজনে থাকবে ততদিন এটি নির্দিষ্ট নিয়মকানুনের মধ্যে থাকবে, সুশৃঙ্খল থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসের এই মেলাটি প্রকাশকদের হাতে ছেড়ে দেয়ার মতো সময় এখনো আসেনি। আমার মনে হয় প্রকাশকরা চাইলে তারা অন্য মাসে অপর একটি বইমেলার আয়োজন করতে পারেন, যেটি আমাদের সাহিত্যের জন্য অনেক ভালো হবে। দেশে দু’তিনটা বইমেলা করা যাবে না এমনতো কোনো আইন নেই। প্রতিটি জেলায় জেলায় বইমেলার আয়োজন করা যেতে পারে। শুধু প্রকাশক কেন পাঠকরাও বইমেলার আয়োজন করতে পারেন।

Touhid

জাগো নিউজ : আমাদের দেশের বইয়ের মান সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।
তৌহিদুর রহমান : বাইন্ডিং থেকে শুরু করে প্রিন্টিং পর্যন্ত আমাদের বইয়ের যে মান তা পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের চেয়ে ভালো। আমরা বই ছাপানোর ক্ষেত্রে যে উন্নতমানের কাগজ ব্যবহার করি তা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ব্যবহার করা হয় না। আমরা যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করি তা ইংল্যান্ডেও ব্যবহার করা হয় না। এজন্য আমাদের দেশে বইয়ের দাম একটু বেশি। তবে এ দাম কমানো উচিত। আর বইয়ের লেখার মান নির্ভর করে লেখকের উপর। একেকজন লেখকের লেখা একেকরকম হবে এটাই স্বাভাবিক।

জাগো নিউজ : একেবারেই নবীন লেখকদের প্রতি আপনার পরামর্শ।
তৌহিদুর রহমান : আমি নিজেও যে বৃদ্ধ হয়ে গেছি তাতো নয়। তবে যারা নতুন লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেছেন তাদেরকে আমি বার্ট্রান্ড রাসেলের বিখ্যাত উক্তিটি স্মরণ করে দিতে চাই। ``এক লাইব্রেরি বই না পড়ে এক লাইনও লেখা সম্ভব নয়"। নতুন বই লেখার আগে তাকে অনেক বেশি বই পড়তে হবে। যে জাতীয় বই লেখতে চান তাকে অন্তত সেরকম ১০০টি বই পড়তে হবে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে অনেকেই বই না পড়ে লেখালেখির জগতে আসছেন এটি তাদের নিজেদের জন্য যেমন অপমানজনক, তেমনি বাংলা সাহিত্যের জন্যও ক্ষতিকর।

এআরএস/এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।