ইটভাটায় বছরে পোড়ে ৫৬ লাখ টন কয়লা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:২৯ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ফাইল ছবি

দেশে ইটভাটায় বছরে প্রায় তিন হাজার ৫০০ কোটি ইট তৈরি হয়। এই ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ১২ কোটি ২৫ লাখ টন কৃষি মাটি। এরপর এগুলো পোড়াতে ব্যবহার করা হয় ৫৬ লাখ টন কয়লা। পাশাপাশি ব্যবহার হচ্ছে কাঠ ও গাছের গুঁড়ি। এতে একদিকে যেমন উজাড় হচ্ছে বন, অন্যদিকে পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় নির্মাণকাজে ব্লক ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

মূলত শুষ্ক মৌসুমে ইট তৈরি ও পোড়ানো হয়। নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে ঢাকার অদূরে সাভার ও আশুলিয়ায় গেলে মনে হবে যেন আকাশ ছেয়ে আছে কালো মেঘে। তবে সেটা মেঘ নয়, সেগুলো আসলে ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কালো ধোঁয়া।

এ বিপুল সংখ্যক ইট তৈরিতে কেটে নেওয়া হচ্ছে কৃষি জমির টপ সয়েল (ভূ–উপরিস্থ মাটি)। এতে উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি। একই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানি ও জ্বালানির অপচয় হচ্ছে। এ অবস্থায় ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি নির্মাণকাজে ব্লক ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং এ সংক্রান্ত খসড়া রোডম্যাপ তৈরি করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ নজমুল আহসান বলেন, পুরোনো পদ্ধতিতে (পুড়িয়ে) ইট তৈরির মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি করছে। একই সঙ্গে কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি বিনষ্ট করছে। পোড়ানো ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লক ব্যবহারে জোর দিচ্ছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ব্লক ব্যবহার শতভাগ বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি নির্মাণকাজে ব্লক ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং এ সংক্রান্ত খসড়া রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। ব্লক ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে খসড়া রোডম্যাপ পর্যালোচনা করে বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কীভাবে সমন্বয় করলে তা বাস্তবায়ন করা সহজ হবে- সে বিষয়ে সবার মতামত নেওয়া প্রয়োজন।

হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) প্রিন্সিপাল রিসার্চ অফিসার স্থপতি মো. নাফিজুর রহমান বলেন, বিকল্প ইটের গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনসচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে আমরা কাজ করছি। বিকল্প ইটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে, যা অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয়েছে। বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে বিকল্প ইট প্রস্তুত সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে এবং অনেকগুলো চলমান রয়েছে। এছাড়াও বিকল্প ইটের প্রসারে এইচবিআরআই নিয়মিত মেলা আয়োজন করছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ইট পোড়ানোর ফলে বায়ুদূষণে বছরে এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে, যা মোট মৃত্যুর ১৯ শতাংশ। এ বায়ুদূষণের কারণে ২৮ কোটি দিন কর্মসময় নষ্ট হয়, যা দেশের জিডিপির ৭ দশমিক ৭ থেকে ৯ শতাংশ। তবে এ ক্ষতি পরোক্ষভাবে হয় বিধায় আমরা সরাসরি দেখতে পাই না। কিন্তু এটি আমাদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে।

এমওএস/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।