লাকি ‘লিপইয়ার বেবিস’ অব ডিএমসি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ২১২ নম্বর লেবার ওয়ার্ডের লম্বা করিডোরের বারান্দায় সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় সদ্য পৃথিবীতে আসা নাতিকে নিয়ে বসেছিলেন নরসিংদী জেলার কোদালিচর গ্রামের বৃদ্ধ হাশেম মিয়া। একবার নাতিকে মুখের কাছে এনে চুমোয় চুমোয় আদর দিচ্ছিলেন আরেকবার রোদ পোহাতে নাতিকে উঁচুতে উঠিয়ে ধরছিলেন।
গতরাত (রোববার দিবাগত) আড়াইটায় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হাশেম মিয়ার ছেলের স্ত্রী জেসমিনের ছেলে শিশুর জম্ম হয়। ছেলের ঘরে প্রথম সন্তানের আগমনে মহাখুশী বৃদ্ধ হাশেম মিয়া। সকাল ১০টার সময় রাউন্ডে এসে এক চিকিৎসক তাকে বলেন, আপনার নাতি তো সৌভাগ্যবান ‘লিপইয়ার শিশু’।
লিপইয়ার শব্দটির অর্থ না বুঝলেও চিকিৎসক যে ভালো কিছু বলেছে এই ভেবে হাশেম মিয়া জি স্যার, জি স্যার, দোয়া করবেন, বলে নাতির জন্য দোয়া চাইতে থাকেন। হাশেম আলীর মতোই নবজাতক শিশুদের নিয়ে মহানন্দে ঘুরছিলেন তানজিলার মামা মোমিন, মালা রানির স্বামী ধণঞ্জয় দাস প্রমুখ।
ইংরেজি বর্ষপুঞ্জি অনুসারে আজ ‘লিপইয়ার ডে’ (২৯ ফেব্রুয়ারি)। প্রতি চার বছর পর পর লিপইয়ার দিবস আসে। ঢামেক লেবার ওয়ার্ডের তথ্যানুসারে হাসপাতালে রোববার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ১২ জন নবজাতক শিশু ভূমিষ্ট হয়েছে। ভূমিষ্ট নবজাতক শিশুদের মধ্যে পাঁচজনকে স্বাভাবিক ডেলিভারি ও সাতজন সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ভূমিষ্ট করান গাইনি চিকিৎসকরা।
নবজাতকদের মধ্যে স্বাভাবিক ডেলিভারিতে রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় বেবী অব রিনা, রাত ২টায় বেবি অব ফরিদা, ভোর ৬টায় বেবি অব ইতি, সকাল সাড়ে ৭টায় বেবী অব রিনা ও সকাল ৮টায় বেবি অব চামেলি জন্মগ্রহণ করে।
এছাড়া সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রাত সাড়ে ১২টায় বেবী অব ফাতেমা, রাত ১টা ৪০মিনিটে বেবি অব হাবিবা, রাত আড়াইটায় বেবি অব জেসমিন, রাত ৪টায় বেবি অব তানিয়া, রাত ৪টা ৫৫ মিনিটে বেবি অব মালা রানি, সকাল পৌনে ৬ টায় বেবি অব বিউটি এবং সকাল ৭টা ১০মিনিটি বেবি অব তানজিলা জন্মগ্রহণ করে।
দেশে লিপইয়ারের দিবসে (২৯ ফেব্রুয়ারি) কত জন শিশু জন্মগ্রহণ করে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে লিপিবদ্ধ করা না হলেও এ দিবসে জন্মগ্রহণকারী শিশুর বাবা মায়ের কাছে দিবসটি স্মরণীয় হয়ে থাকে। বছরের হিসেবে প্রতি চার বছর অর্থাৎ ১ হাজার ৪শ’ ৬০ দিন পর ১ হাজার ৪শ’৬১ তম দিনে লিপইয়ার দিবস আসে।
লিপইয়ার দিবসে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের জন্মদিন কিভাবে পালন করা হবে তা নিয়ে একেক বাবা মায়ের একেক মত থাকে। কেউ কেউ লিপইয়ার দিবসকে বিশেষ দিবস হিসেবে ধরে নিয়ে চার বছর পর পর একবার জন্মদিন পালন করে থাকেন। সময়ের হিসেবে কেউ কেউ সন্তান যদি ২৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টার কাছাকাছি সময়ে জন্মগ্রহণ করে তাহলে তার জন্মদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি ধরে নেন। আবার কারও যদি ২৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টার আগে জন্মগ্রহণ করে তবে তার জন্মদিন ১ মার্চ পালন করে।
এছাড়া কোনো কোনো মা নির্দিষ্ট দিনক্ষণের আগে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ২৯ ফেব্রুয়ারি বিশেষ দিবসে শিশু ভূমিষ্ট করান আবার কেউ কেউ বিষয়টি এড়িয়ে যান।
জানা যায়, খ্রিস্টবর্ষ ৪৬ সালে তৎকালিন সম্রাট রোমানিয়ান সম্রাট জুলিয়াস সিজার বর্ষপুঞ্জিতে লিপইয়ার প্রথা চালু করেন। রোমানিয়ান বর্ষপুঞ্জির বদলে তিনি জুলিয়ান বর্ষপুঞ্জি চালু করেন এবং একটি দিবস যোগ করে প্রতি তিনবছর ৩৬৫ দিন হিসেবে পালন শেষে চতুর্থ বর্ষে ১ দিন যোগ করে ৩৬৬ দিনে অর্থাৎ সেটি লিপইয়ার হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেন।
ঢামেক গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শিখা গাঙ্গুলি বলেন, লিপইয়ার দিবসে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা অন্যসব শিশুর চাইতে একটি ব্যতিক্রম। চার বছর পর পর তাদের জন্মদিনটি আসে। তবে কেউ কেউ আগে পরে জন্মদিবস পালন করে। আবার কেউ কেউ নির্দিষ্ট দিনে জন্মদিন পালনের জন্য দীর্ঘ চার বছর অপেক্ষা করে থাকে।
অন্যান্য দিবসের মতো স্বাভাবিক নিয়মে গাইনি ওটি চলছে বলেও জানান তিনি।
এমইউ/আরএস/আরআইপি