দুই স্ত্রীর সংসারে পরকীয়ার জেরে খুন হন নিখোঁজ সেলিম
স্ত্রীর পরকীয়া আর সম্পদ দুটোই কাল হলো সেলিমের জীবনে। স্ত্রীর পরকীয়ার কথা জেনে যাওয়া এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম একটি কারণ হলেও এর পেছনে সেলিমের সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার লোভও কাজ করেছে। আর এসব বিষয় সামনে রেখে নিজের প্রেমিককে দিয়ে স্বামী সেলিমকে খুন করান স্ত্রী শাহনাজ। শাহনাজের প্রেমিকের স্বীকারোক্তিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সীতাকুণ্ডের পন্থিছিলা স্কুলের পাশের একটি পুকুর পাড়ের মাটির নীচ থেকে চার মাস ধরে নিখোঁজ সেলিমের লাশ উদ্ধার করা হয়। এয়াকুব নগরে প্রথম স্ত্রীসহ থাকতেন তিনি।
সীতাকুণ্ড থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইফতেখার হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, স্ত্রী শাহনাজের প্রেমিক রাসেলের স্বীকারোক্তি মোতাবেক লাশটি উদ্ধার করা হয়।
সেলিমের বড় ভাই আবদুল গফুর বাবুল জানান, ২২/২৩ বছর আগে সীতাকুণ্ডের এয়াকুব নগর এলাকার মেহেরুল্লার মেয়ে শাহনাজকে বিয়ে করেন ব্যবসায়ী সেলিম। তাদের সংসারে ১৯ বছরের একটি ছেলে ও ১৩ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। সাত বছর আগে কুমিল্লার চাঁদপুরে রাহেনা নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন সেলিম। দ্বিতীয় সংসারে ছয় বছরের একটি ছেলেও রয়েছে তার। 
শাহনাজ প্রথম থেকেই স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। এরই মধ্যে শাহনাজের সঙ্গে রাসেল নামে এক ছেলের পরকীয় প্রেমের সঙ্গে গড়ে ওঠে। বিষয়টি সেলিম বুঝে ফেলে স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর রাসেল সেলিমকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। ১৮ অক্টোবর সেলিমের সীতাকুণ্ডের বাড়িতে কে বা কারা আগুন লাগিয়ে দেন। গত বছরের ২০ অক্টোবর সীতাকুণ্ড থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন তিনি।
আবদুল গফুর বাবুল জানান, সেলিম নিখোঁজ হওয়ার পর মামলা করার জন্য সীতাকুণ্ড থানায় গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। বলেছে রাসেল খুব প্রভাবশালী। তার বিরুদ্ধে মামলা নেয়া যাবে না। এছাড়া সেলিমের স্ত্রী শাহনাজের কথাবার্তা এবং গতি বিধি সন্দেহজনক মনে হয়। সেলিমের বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাইলে তিনি রেগে যেতেন। এক পর্যায়ে তাকেও এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে নিষেধ করে।
এরপর গত বছরের ১৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আালতে মামলা করেন সেলিমের মা নূরজাহান বেগম। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সীতাকুণ্ড থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) কামাল উদ্দিনকে। এরআগে ৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সেলিমের ভাই আবদুল গফুর।
তদন্তে নেমে প্রথমে সেলিমের ব্যবহৃত সিমটি উদ্ধার করে পুলিশ। সেলিম নিখোঁজের পর সিমটি আল আমিন নামে এক রেস্টুরেন্ট কর্মচারী ব্যবহার করছিলেন। গত মাসের শেষের দিকে তাকে আটক করে রিমান্ডে নেয়ার পর মামলার জট কিছুটা খুলতে থাকে বলে জানান এসআই কামাল।
আল আমিনের কাছ থেকে রিমান্ডে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। বর্তমানে আল আমিন জেল হাজতে রয়েছে।
এরপর পুলিশ বুধবার এ ঘটনার মূল আসামি শাহনাজের প্রেমিক রাসেল (৩২), সেলিমের শ্যালক মো. হাশেম উল্লাহ (৩৬) ও শাহনাজের ভগ্নিপতি মহিউদ্দিনকে আটক করে। আটকের পর তাদের আলাদা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সেলিমকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
সেলিমের দ্বিতীয় স্ত্রী রাহেনা জানান, সর্বশেষ ২৯ অক্টোবর স্বামীর রাত ৯টায় স্বামীর সঙ্গে শেষ কথা হয় তার। পরের দিন বাসায় আসবেন বলেছিলেন কিন্তু সেদিন সকাল থেকে মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় বিষয়টি সবাইকে জানায় সে।
জীবন মুছা/এনএফ/পিআর