তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দ্রুত আইন পাসের আহ্বান

শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর হলে বাংলাদেশ তামাকমুক্ত হবে বলে মনে করছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান)। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দ্রুত খসড়া আইন পাসের আহ্বান জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
সংস্থাটি বলছে, পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশে প্রায় ৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ভুক্ত, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশ বিশ্বের ৯ম বৃহত্তম তামাক ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করেন। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বছরে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস সামনে রেখে মঙ্গলবার (৩০ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় প্রজ্ঞা।
আগামীকাল ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিকল্প খাদ্য ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাক চাষিদের উৎসাহিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘গ্রো ফুড, নট টোব্যাকো’। একই সঙ্গে তামাক উৎপাদনে কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচনও এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হতে যাচ্ছে ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে।
বিজ্ঞপ্তিতে প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধসহ একটি খসড়া সংশোধনী মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খসড়াটি যত দ্রুত চূড়ান্ত হবে, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ ততই ত্বরান্বিত হবে।
তিনি বলেন, গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি-২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তবে তামাকের এই ক্ষতি আড়াল করতে কোম্পানিগুলো তথাকথিত সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচিকে (সিএসআর) প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
সর্বশেষ কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ (২০২১) অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণ ৯৯ হাজার ৬০০ দশমিক ২৪ একর। তামাকের পরিবর্তে এ পরিমাণ জমিতে বোরো ধান আবাদ করলে এক লাখ ৬৭ হাজার ৪২৮ টন বোরো উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়াও গম বা আলু চাষ করলে এক লাখ ৩২ হাজার ৯৬৬ টন গম বা ৮ লাখ ৫০ হাজার ৩৮৭ টন আলু উৎপাদন করা সম্ভব।
প্রজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ এবং নানাবিধ বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে বাংলাদেশের জন্য খাদ্য নিরাপত্তার বিষয় ক্রমশ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে তামাকের মতো একটি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিধ্বংসী ফসল উৎপাদনের বিপরীতে এই বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য হারানোর ক্ষতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
আরএসএম/কেএসআর/এএসএম