নারীদের উন্নয়নে কাজ করছেন রোমেনা বেগম
২০০৪ সালের কথা। মাত্র ২০ গজ কাপড়, একটি সেলাই মেশিন আর একজন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের গৃহবধূ রোমেনা বেগম। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেকার নারীদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি সংস্থা। নাম দেন শেল্টার সমাজ কল্যাণ সংস্থা।
২০১০ সালে যুব উন্নয়ন অধিদফতর তাদের কাজ দেখে ১০ হাজার টাকা অনুদানও দেয়। এই অনুদানে উদ্যোগ ও মনোবল দ্বিগুণ বেড়ে যায় তার। বিভিন্ন বাজার ঘুরে নিজের চেষ্টায় শুরু করেন ডিজাইন সংগ্রহ। তৈরি করেন থ্রিপিচ, শাড়ি, নকশিকাঁথা, বেডসিট, বাচ্চাদের পোশাক ও কাঁথা, সোফার কুশন।
ক্ষুদ্র পরিসর থেকে শুরু করে আজ শতাধিক নারী নিয়মিত কাজ করছে সেখানে। তাদের সঙ্গে জড়িত আছে জেলার বিভিন্ন উপজেলার কয়েক’শ বেকার নারী। এখান থেকে ১০০ জন নারীকে দেয়া হয়েছে দর্জি বিজ্ঞানে প্রশিক্ষণ যারা আজ স্বাবলম্বী। 
ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মিম্মা খাতুন জানান, তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে কাজ করে সংসারেও কিছু অর্থনৈতিক সহযোগিতা করছেন।
আরিফুুন্নেছা নামের আরেক কর্মী জানান, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও ওই প্রতিষ্ঠানের প্রথম কর্মী সখিনা খাতুন জানান, তিনি দশ বছর আগে এখানে এসেছেন। তার মালিক ভাল হওয়ায় তিনি দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাজ করে ন্যায্য মূল্য পেয়ে শহরের লক্ষ্মীকোল এলাকায় দুই শতক জমি কিনে বাড়ি করে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করছেন। 
তিনি আরও জানান, ইতোপূর্বে অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন কিন্তু এ রকম সুুযোগ সুবিধা পাননি।
সুলতানা পারভিন নামের এক ক্রেতা জানান, শহরের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এই প্রতিষ্ঠানের সকল মালামালের মান ভাল দামও কম। ফলে বেচাকেনাও হয় বেশি, ভিড় লেগেই থাকে। 
প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী রোমেনা বেগম জানান, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫২ শতাংশ নারী অথচ এই নারীরাই জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে বৈষ্যমের শিকার হচ্ছেন। নারীদের প্রতিটি পদক্ষেপে অপেক্ষা করে অনেক বাধা, অনেক সীমাবদ্ধতা অনেক প্রতিকূলতা। 
সরকার নারীদের উন্নয়নে কাজ করে গেলেও যতদিন বেসরকারি উদ্যোগে কাজ করা হবে না ততদিন নারীরা অবহেলিতই রয়ে যাবে। তাই সরকারের সাহায্যে পেলে এই প্রতিষ্ঠানটি আরও বড় করে এলাকার বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি জানান। পাশাপাশি প্রত্যেক নারী যেন স্বনির্ভরশীল হয় এবং পরিবার, সমাজে নিজের পরিচয়ে আত্মসম্মান মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে এই আশা রোমেনা বেগমের।
এসএস/এমএস