জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নওগাঁর মাদুর


প্রকাশিত: ০৩:০১ এএম, ১৯ মার্চ ২০১৬

মাদুরের এলাকা হিসেবে পরিচিত নওগাঁর রাণীনগর। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে মাদুর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। জেলার গ্রামীণ জনপদের ৪০/৫০টি গ্রামের প্রায় চার হাজার দরিদ্র পরিবারের নারী-পুরুষ মাদুর তৈরি করেন। মাদুর তৈরির এই শিল্পকে রক্ষা করতে দরিদ্র পরিবারগুলোকে সহজ স্বর্তে সরকারি ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, জেলায় মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে। আর এ পাতি তিন ধরনের। প্রতি বছর পৌষ-মাঘ মাসে জমি চাষ করে পানি আছে এমন জমিতে জলপাতি ও হোগলাপাতি চাষ করা হয়। আর বনপাতি শুকনা জমিতে লাগাতে হয়। একই জমি থেকে একই মৌসুমে জলপাতি এবং বনপাতি তিনবার পর্যন্ত কাটা যায়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে পাতি কাটার উপযুক্ত হয়ে গেলে তা কেটে রোদে শুকিয়ে সংগ্রহ করা হয়। এরপর শুকনো পাতি দিয়ে সারা বছর মাদুর তৈরি করা হয়।

মাদুর তৈরির সঙ্গে জেলার রাণীনগর উপজেলার ছয়বাড়িয়া, কুবিড়াতলি, করচগ্রাম, কাশিমপুর, বোদলা, বাহাদুরপুর, হরিশপুর, চকমুনু, মিরাট, আতাইকুলা, হামিদপুর, কুজাইল, নওগাঁ সদর উপজেলার চুন্ডিপুর, চুনিয়াগাড়ী গাংজোয়ার, আত্রাই উপজেলার ভবানিপুর, তিলাবাদুড়ী, জামগ্রাম, নলদিঘীসহ ৪০ থেকে ৫০ গ্রামের প্রায় চার হাজার স্বল্প আয়ের দরিদ্র পরিবারের লোকজন জড়িত। এ কাজের সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারী ও শক্ত কাজ করতে পারেন না এমন অক্ষম ব্যক্তি জড়িত।

Madur

এক আঁটি (গাঁট) পাতি বাজার থেকে এক হাজার টাকায় কিনে আরো পাঁচশ টাকা খরচ করলে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার মাদুর বিক্রি হয়। সংসারের কাজের পাশাপাশি মাদুর তৈরি করে বাড়তি আয় করছে নারীরা।  

রাণীনগর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের ফুলি খাতুন ও শেফালি আক্তার জানান, বাড়ির পুরুষরা মাঠের কাজ করেন। নারীরা সাধারণত মাঠে-ঘাটে কাজ করতে পারেন না তাই সংসারের কাজের পাশাপাশি এই মাদুরগুলো তৈরি করে থাকেন। এতে মাসে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা আয় করে থাকেন। এই টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়াপশুনার খরচ, সংসারের অন্যান্য খরচ মেটানো হয়।
 
বোদলা গ্রামের আবুল কালাম জানান, তাদের কোন জমিজমা নেই। মানুষের জমি বর্গা নিয়ে পাতি চাষ করেন। সেই পাতি দিয়ে বছরের ৭/৮ মাস মাদুর তৈরি করে সংসারের খরচ যোগান। বাকি মাসগুলোতে বাজার থেকে পাতি কিনে মাদুর তৈরি করেন।

Madur

ছয়বাড়িয়া গ্রামের রতন প্রামানিক জানান, দুইজন লোক দিনে প্রায় ৮ থেকে ১০টি মাদুর তৈরি করতে পারেন। জলপাতি দিয়ে তৈরি দুই হাত আকারের মাদুর ৪০/৫০ টাকায়, আড়াই হাত ৮০/৯০ টাকা, পৌনে তিন হাত ১১০ টাকা এবং তিন হাত মাদুর ১২০ টাকায় বিক্রি হয়।

চন্ডিপুর গ্রামের আবুল কালাম জানান, নওগাঁয় জলপাতি, হোগলাপাতি ও বনপাতির মাদুর তৈরি করা হলেও বাজারে একই মাপের বনপাতির মাদুর তুলনামূলক স্থায়ী ও শক্ত হওয়ায় বাজারে চাহিদা এবং দামও বেশি। মাদুর শেলাই করলে সুন্দর হওয়ায় ক্রেতার চাহিদাও বেশি হয়। তাই সেলাই করে বিক্রি করা হয় মাদুর।
 
রাণীনগর উপজেলার ত্রিমোহনী বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুস ছালাম জানান, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাদুর কেনা-বেচা হয় এই ত্রিমোহনী বাজারে। সপ্তাহে দুই দিন শনিবার ও মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাদুর কেনাবেচা হয়। এখান থেকে মাদুর ব্যবসায়ীরা মাদুর কিনে রাজধানী ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে।

Madur

রাণীনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রোকনুজ্জামান খান রুকু জানান, মাদুর তৈরির মাধ্যমে সমাজের নিম্ন আয়ের হাজার হাজার মানুষ জীবনধারণ করছেন। এদের সহজ স্বর্তে সরকারি ঋণ দিয়ে এই শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার দাবি জানান তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিফিতরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, জেলার রাণীনগর, আত্রাই ও নওগাঁ সদর উপজেলায় প্রায় ৫শ হেক্টর জমিতে এই পাতি চাষ করা হয়। এই পাতি কেটে রোদে শুকিয়ে কৃষকরা সারা বছর মাদুর তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে অনেকেই সংসারের খরচ মেটাচ্ছেন। অনেকেই স্বাবলম্বীও হয়েছেন।

এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।