রাত পোহালেই আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার ভোট
রাত পোহালেই মঙ্গলবার তৃণমূলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোটের লড়াই। প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে নির্বাচন হওয়ায় বেশির ভাগ এলাকায় আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে।
এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। ভোট উপলক্ষে এদিন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় থাকছে সাধারণ ছুটি। তফসিলে প্রথম ধাপে ৭৫২টি ইউপিতে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হলেও নানা জটিলতায় স্থগিত ও পিছিয়েছে ৩১টির ভোট। টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ১১ ইউপির ভোট ২৩ মার্চ ও কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দুটি ইউপির ভোট ২৭ মার্চ হবে। আর বাদ বাকি ইউপিতে মঙ্গলবার নির্বাচন। তবে ইসি সূত্র জানায় বিভিন্ন কারণে আরো তিনটি ইউনিয়নের ভোট স্থগিত হতে পারে।
প্রার্থীদের প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১২টায়। এখন শুধু ভোটের হিসেবের পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে শঙ্কায় গ্রামাঞ্চলের নাগরিকরা। তবে এ নিয়ে চিন্তিত নয় ইসি। এমনকি সহিংসতা কমানো যাচ্ছে না বলেও স্বীকার করেছেন খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
প্রথম ধাপের ইউপি ভোটে ১৪টি দল অংশ নিচ্ছে। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরষ্পরকে দোষারোপ করে আসছে। প্রতিদিনই প্রভাব বিস্তার ও সহিংসতার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এমন একাধিক অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের জমা দিয়েছেন বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এসবের মধ্যেও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে আশাবাদী ইসি।
সোমবার পর্যন্ত সব মিলিয়ে নিহত হয়েছেন ১০ জন। সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আহত প্রায় দুই হাজার। এমন গোলযোগ-সহিংসতার মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় এ নির্বাচনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রোববার মাঠে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রচারের সময় শেষ হওয়ার আগে বহিরাতগতদের ছাড়তে হবে নির্বাচনী এলাকা।
প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটার ১ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৭৪১ জন। ভোটকেন্দ্র ৬ হাজার ৯৮৭টি। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন ৩ হাজার ৪৩ জন। সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৭ হাজার ৫৭৫ জন আর সাধারণ আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৫ হাজার ৮৪৭ জন।
তবে এরই মধ্যে ৫৪ জন চেয়ারম্যান, ১৭৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৫৪ জন সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ৬২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও আদালতের নির্দেশে আট ইউপিতে প্রার্থী যোগ হওয়ায় বাকি ৫৪ জন নির্বাচিত হন।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব সামসুল আলম জানান, ভোট শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে সব ধরনের প্রচার, সভা-সমাবেশ ও শোডাউন নিষিদ্ধ। ভোটের পরে ৪৮ ঘণ্টাও কোনো মিছিল করা যাবে না।
নির্বাচন উপলক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ২২ জন করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রাখা হচ্ছে এবার। ভোটের আগের দুই দিন থেকে ভোটের পরদিন পর্যন্ত চারদিন থাকবে তারা। পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা সদস্য বাড়াবে স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে মাঠ পর্যায়ের রির্টানিং কর্মকর্তারা কাঙ্খিত সহযোগিতা করছে না জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ বলেছেন, নির্বাচনী সহিংসতা আমরা কমিয়ে আনতে পারছি না।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ভোট চলাকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্ব করলে আমরা তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। কোনো কেন্দ্রে ভোট কারচুপি ও সহিংসতা হলে ওই কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়ী হবে। আপনারা আপনাদের সর্বশক্তি দিয়ে সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করবেন।
এরপর আরও পাঁচ ধাপে দেশের বাকি সাড়ে তিন হাজার ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা। ছয় ধাপে ৪ হাজার ২৭৯ ইউনিয়নে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে ইসি। গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপের ৭৫২ ইউপির তফসিল ঘোষণা করা হয়। সে অনুসারে পরবর্তীতে ৩১ মার্চ ৭১০টি ইউপি, ২৩ এপ্রিল ৭১১টি ইউপি, ৭ মে ৭২৮টি ইউপি, ২৮ মে ৭১৪টি ইউপি এবং ৪ জুন ৬৬০টি ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা।
এইচএস/বিএ