বঙ্গবন্ধু টানেল ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:০৩ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০২৩
ফাইল ছবি

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২৫ অক্টোবর) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকারদলীয় সংসদ সদস এম আব্দুল লতিফের এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ২৫-২৬ অক্টোবর দুদিনব্যাপী ‘গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে’ যোগ দিতে বর্তমানে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশের অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ টানেল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর আনোয়ারা প্রান্তে আবাসন ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ, কলকারখানা স্থাপন ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে আবর্তিত ব্লু ইকোনমির নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। চট্টগ্রামে ওয়ান সিটি টু মডেল টাউন-এ গড়ে উঠবে।

এমপি খালেদা খানমের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান জানান, জাতির পিতা ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময়েই নারীদের ক্ষমতা ও মর্যাদা বাড়ানোর জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৬৫(৩) এ নারীদের বিশেষ অধিকারের কথা বলা হয়েছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আসার পরপরই নারীদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছে। বর্তমান জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতাসহ একজন পূর্ণমন্ত্রী, দুজন প্রতিমন্ত্রী ও একজন উপমন্ত্রী রয়েছেন যারা নারী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে নারীদের পদায়ন করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে কর্মক্ষেত্রের উপযোগিতা বিবেচনা করে নারীদের জন্য বিশেষ কোটার ব্যবস্থাও রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর নারীদের ক্ষমতা ও সম্মান বাড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত আইনগুলো প্রণয়ন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে- স্থানীয় সরকার, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ আইন-২০০৯ এর ৭, ৩০ ও ১০ ধারা অনুযায়ী নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট-২০০৯ অনুযায়ী বিভিন্ন ক্ষেত্রে সন্তানের বাবার নামের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের নামও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, নারীদের উত্ত্যক্ত করা রোধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা আইন-২০১০-এর আওতায় নারীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে (৬৫ এর ৩ ধারা মতে) জাতীয় সংসদে নারী এমপিদের সংরক্ষিত আসন ৪৫টি থেকে বাড়িয়ে ৫০টি করা হয় এবং সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসন আরও ২৫ বছর নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আইন করে নারীপাচার বন্ধ করার হয়েছে। হিন্দু নারীদের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অন্যথায় ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও ৩ মাসের কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাল্যবিবাহ রোধে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যৌতুক নিরোধ আইন করা হয়েছে, নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে, কর্মজীবী নারীর শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন-২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে, জেলা পরিষদ আইন-২০২২ মাধ্যমে এক তৃতীয়াংশ নারী সদস্য রাখার বিধান রাখা হয়েছে।

শেখ হাসিনা জানান, এছাড়া অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট-২০২২ সংশোধন করে ধর্ষণ মামলায় ভিকটিমকে জেরাকালে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে, পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩ পাস করে মহিলাদের বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, দেনমোহর, ভরণ-পোষণ ইত্যাদি নিশ্চিত করা হয়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনের মাধ্যমে নারী অভিবাসীদের মর্যাদা রক্ষা করা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় নারীদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে, নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন হয়রানি রোধে কমিটি গঠন করা হয়েছে, নারীদের হয়রানি বন্ধে বিভাগীয় শহরে নারী সহায়তা কেন্দ্রে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার কাজ করছে।

তিনি আরও জানান, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে নারী-শিশুদের স্বাস্থ্য সহায়তা বাড়ানো হয়েছে। সংবিধানের ৩১ অুনচ্ছেদে নারীদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ বিচারে ১০১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গড়া হয়েছে।

সরকারপ্রধান জানান, নারীদের উচ্চ বিচারালয়ে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। পাঁচজন নারী বিচারক জাতিসংঘে কাজ করছেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় নারীদের নানা ধরনের সুবিধা-সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ, সেলাই মেশিন, স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতির মধ্যে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। দুঃস্থ, নারী ও শিশুদের জন্য তহবিল গঠন করা হয়েছে, নানা ধরনের দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নারীর ক্ষমতায়ন ও সম্মান বাড়াতে নানাবিধ পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বর্তমান সরকারের আমলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ানো হয়েছে। নারী স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তারা সুবিচার পাচ্ছেন, নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করা হচ্ছে।

আইএইচআর/এমকেআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।