উপজেলা নির্বাচন

তৃতীয় ধাপে কোটিপতি ১০৬ প্রার্থী, সাড়ে ৬৬ শতাংশই ব্যবসায়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪৪ পিএম, ২৭ মে ২০২৪
ছবি সংগৃহীত

উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ৪১৯ প্রার্থীর মধ্যে ১০৬ জনই কোটিপতি। আর ১০ লাখ টাকার ওপরে আয় করেন এমন সংখ্যা ১৬০ জন। ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন ৬৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ প্রার্থী। যদিও আয়ের বিবেচনায় প্রার্থীরা ৭১ দশমিক ৮৮ শতাংশ ব্যবসা থেকে আয় দেখিয়েছেন।

সোমবার (২৭ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে গবেষণা প্রতিবেদন প্রস্তুত করে সংস্থাটি।

হলফনামা বিশ্লষণ করে দেখা যায়, প্রার্থীদের আয় ও সম্পদের পরিমাণ অস্বাভাবিক বেড়েছে। রয়েছে আয়কর রিটার্নের তথ্যের সঙ্গে হলফনামার গরমিল। করজাল বাড়াতে জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের জমা দেওয়া এই হিসাব বিবরণী খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছে টিআইবি।

টিআইবির গবেষক রিফাত রহমান গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন। এসময় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সম্পদ বিবরণী খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, তৃতীয় ধাপে ১১২টির মধ্যে ১১১টি উপজেলার প্রার্থীর হলফনামা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এসব প্রার্থীর হলফনামায় দেওয়া আট ধরনের তথ্যের বহুমাত্রিক ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীদের আয় বৃদ্ধির বিষয়টি ইসি ও এনবিআরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যাদের সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়েছে তার উৎস খতিয়ে এবং আয়ের সঙ্গে সম্পদের বিকাশ সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না সেটা আইন অনুযায়ী খতিয়ে দেখা উচিৎ।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের যেমন প্রার্থী বাতিলের এখতিয়ার আছে, তেমন আইনগত প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করারও দায়িত্ব রয়েছে। আবার করের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিৎ। আয়কর রিটার্নের তথ্যের সঙ্গে হলফনামার গরমিল রয়েছে সেটাও খতিয়ে দেখা উচিৎ। জনপ্রতিনিধি ও প্রার্থীরা যে হিসাব জমা দিয়েছেন সুষ্ঠ প্রক্রিয়ায় তা যদি আইনগতভাবে এনবিআর অনুসন্ধান করে তাহলে করনেট বৃদ্ধির কথা বলে সেখানে সাফল্যজনক ফলাফল পাওয়া সম্ভব।

প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যারা নির্বাচিত হননি তাদের তুলনায় নির্বাচিত ছিলেন সেই ধরনের প্রার্থীদের আয় ও সম্পদ বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের আধিক্য দেখতে পাচ্ছি। আয় বৃদ্ধি হোক আমরাও চাই। অস্বাভাবিক হারে আয় বৃদ্ধি পচ্ছে, এমনকি পরিবারের আয়ও অস্বাভাবিক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্বিকভাবে প্রার্থীদের প্রায় ৩৭ শতাংশ আয় দেখিয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে, অর্থাৎ করযোগ্য আয় নেই তাদের। সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় দেখিয়েছেন ১০ দশমিক ৫ শতাংশ প্রার্থী। চেয়ারম্যান ও অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আয় বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ২৪ দশমিক ২১ শতাংশ এর আয় সাড়ে ১৬ লাখ টাকার ওপরে। অন্যান্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে এ হার ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। প্রায় ১৯ দশমিক ৫ শতাংশের আয় সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে, অন্যান্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এ হার ৪৫.৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ চেয়ারম্যান পদে অপেক্ষাকৃত ধনীরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

আরও পড়ুন

এতে আরও বলা হয়, প্রার্থীদের মধ্যে ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ বা ১০৬ প্রার্থীর কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে। ৫ বছরে প্রায় চার গুণ হয়েছে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা। প্রায় ২২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রার্থীর ঋণ/ দায় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮৫ কোটি টাকা ঋণ/ দায় রয়েছে একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর। ১৬ শতাংশ প্রার্থী বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত।

অন্যদিকে ১০ বছরে একজন চেয়ারম্যানের আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮৮৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ৫ বছরে এ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৪২২ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে ১০ বছরে অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৭৯৩ শতাংশ, ৫ বছরে স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৪০০ শতাংশ।

এতে আরও বলা হয় ৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা পেছনে ফেলেছেন সংসদ সদস্যদের। একজন সংসদ সদস্যের অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৫ শতাংশ, যেখানে একজন চেয়ারম্যানের বেড়েছে সাড়ে ৯ হাজার ৮৫০.৬২ শতাংশ।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচিত হননি এমন প্রার্থীদের আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, যেসব জনপ্রতিনিধি দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন তাদের আয় ও সম্পদ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।

এছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১০ বছরের হিসাবে অনির্বাচিতদের তুলনায় নির্বাচিতদের আয় বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ ও সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৩৭ গুণ। অর্থাৎ ক্ষমতায় থাকার সঙ্গে দ্রুত আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

এসএম/এমআইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।