চাই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং সমন্বয়
এটা খুবই উদ্বেগজনক যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যাও। বলা হচ্ছে, দেশ থেকে এ ভাইরাস যেতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে। এ অবস্থায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা যেমন নিশ্চিত করতে হবে তেমনি নিতে হবে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে জানানো হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৮ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ৩৪৩ জনের। একই সময়ে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৮০৩ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ দুই হাজার ২৯২ জনে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা অনলাইনে বুলেটিন পড়েন।
এছাড়া দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, সহজে যেন করোনা পরীক্ষা করা যায়, এমন পদ্ধতি চালু করা হবে। উপজেলা হাসপাতাল পর্যন্ত এ ধরনের ব্যবস্থা চালুর প্রচেষ্টা নেয়া হবে। পাশাপাশি সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায়ে আরটি পিসিআর পরীক্ষা যত দ্রুত সম্ভব সম্প্রসারিত হবে।
এছাড়া সব জেলা হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) সুবিধা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। জেলা পর্যন্ত সব সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা, অক্সিজেন কনসেন্টেটরসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব রোগের যেন ভালোভাবে চিকিৎসা সেবা দেয়া যায়, সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘করোনা শুধু স্বাস্থ্যগত বিষয় নয়, এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, ধর্ম, বাণিজ্য অর্থাৎ জীবনের সব কিছুকে ঘিরে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে অধিকতর জোরালো নজর দিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি দুই হাজার চিকিৎসক, পাঁচ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তার নির্দেশে এখন দীর্ঘস্থায়ী সক্ষমতার কাজ দ্রুতগতিতে শুরু হয়েছে। করোনা পরীক্ষার কাজ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সম্প্রসারিত হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায় পর্যন্ত আরটি পিসিআর পরীক্ষা যত দ্রুত সম্ভব সম্প্রসারিত হবে। আরও নতুন নতুন সহজে করা যায়, এমন কোভিড পরীক্ষা চালু করা হবে। উপেজেলা হাসপাতাল পর্যন্ত এ ধরনের পরীক্ষা চালুর প্রচেষ্টা নেয়া হবে।’
বেসরকারি হাসপাতালের বিষয়ে মূল্য নির্ধারণ যখন যেমন প্রয়োজন তেমন করে তা করা হবে। এ ব্যাপারে একটি বিশেষজ্ঞ গ্রুপ কাজ করছে বলেও জানান আবুল কালাম আজাদ। চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘কারও করোনা সন্দেহ হলে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসা দিন। যেকোনো মূল্যে মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাসে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতেই হবে।’
করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আক্রান্তদের সহজে চিকিৎসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। সহজলভ্য করতে হবে শনাক্তকরণ। এছাড়া ভাইরাস প্রতিরোধে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সবার আগে যেটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়।
এইচআর/বিএ/এমএস