করোনা মহাদুর্যোগ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা
রিপন কুমার পাল
কোভিড-১৯ একটা শুধুই রোগ নাকি একটা মহাদুর্যোগ? এই প্রশ্নটা বারবার মনের কোণে উঁকি দিচ্ছে। এটাকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে দেখা হচ্ছে। সবখানেই কেমন একটা গুমোট অবস্থা। কেউই জানে না- কী হচ্ছে, কী করতে হবে, কী করা উচিত কখন, কোথায়, কার? একসাথে অনেকগুলো জিজ্ঞাসাবোধক শব্দ লিখে ফেললাম। আসলে এখনও পর্যন্ত এই মহাদুর্যোগের ব্যবস্থাপনা যেভাবে চলছে- তাতে এই প্রশ্নগুলো সবার মনেই কম বেশি উঁকি দিচ্ছে।
সত্যি কথা বলতে কী- আমাদের আধুনিক বিশ্ব এর আগে এই ধরনের দুর্যোগের মুখোমুখি কখনও হয়নি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে যেটা হয়েছিল সেই সময় যোগাযোগব্যবস্থা এত উন্নত ছিল না, প্রযুক্তিও এত উন্নত ছিল না। এই যে প্রযুক্তির উন্নতি তার যেমন ভালো প্রভাব আছে- ঠিক তেমনই খারাপ প্রভাবও আছে; সবকিছুই নির্ভর করছে প্রয়োগের ওপর। বিশ্বায়নের কারণে মানুষকে কোনো গণ্ডির মধ্যে রাখা দুস্কর। উড়োজাহাজের কল্যাণে মুহূর্তের মধ্যে এক দেশ থেকে ভাইরাস মানুষের সাথে আরেকদেশে পাড়ি দিচ্ছে। মানবিক কারণেই, মানুষকে আটকানো কঠিন সেইসাথে ভাইরাসকেও। আবার টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে, সত্য-মিথ্যা সব খবরই মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের আসলে কী করা উচিত সেটা ঠিক করতে পারছে না- যার কুফল পড়ছে এই ধরনের মহাদুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে। যারা আমাদের কর্তাব্যক্তি আছেন তাদের জন্যও এই কথা প্রযোজ্য।
যেহেতু এই মহাদুর্যোগটা সংক্রামক রোগ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, তাই যেন মনে হচ্ছে সব দায়দায়িত্ব স্বাস্থ্যবিভাগের। সবার নজর সেইদিকেই। কিন্তু সবার আগে লক্ষ করতে হবে- সমস্যার মূল। সমস্যার মূল কিন্তু রোগ নয়- সমস্যার মূলে রয়েছে একটা জীবাণু যার নাম দেয়া হয়েছে কোভিড-১৯। এটা এক ধরনের ভাইরাস। আর আমরা যতটুকু জানি, “ভাইরাসের কোনো ওষুধ নেই। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই একমাত্র সমাধান”। কিছু কিছু ওষুধ সাময়িক কাজ করছে বটে কিন্তু নির্ভরযোগ্য কিছু নেই।
কিন্তু করোনা খুব ছোঁয়াচে- তাই এটা এত বিপদজনক। আর ক্ষণে ক্ষণে জিন পরিবর্তন করে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। প্রায় ছয় মাস হতে চলল, মাত্র কয়েকদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ‘করোনা নিয়ে এখনও অনেক কিছুই অজানা।’ এই একটা বিবৃতিই অনেকে কিছু বলে দিচ্ছে ‘আমরা কি সঠিক পথে চলছি?’
১. যাদের নেতৃত্ব দেয়ার কথা, তাদের কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ছে না। হ্যাঁ, আমি ভাইরোলজিস্টদের অথবা যারা অণুজীব নিয়ে কাজ করেন তাদের কথা বলছি | যারা ওষুধ তৈরি নিয়ে কাজ করেন- সেই ফার্মাসিস্টদের কথা বলছি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই মহামারি মোকাবিলার দায়িত্ব ডাক্তার আর স্বাস্থকর্মীদের। আমাদের দেশে এমনিতেই ডাক্তার সংকট রয়েছে- তার ওপর এই করোনা সেবা দিতে গিয়ে অনেকেই প্রাণবিসর্জন দিয়েছেন। এইভাবে চলতে থাকলে- আর কিছুদিন পর বিশেষজ্ঞ ডাক্তার খুঁজে পাওয়ায় মুশকিল হয়ে যাবে- তাতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
২. সমস্ত পৃথিবী এখন ব্যস্ত হয়ে আছে প্রতিষেধক আবিষ্কার নিয়ে। হয়তো অনেক আগেই আবিষ্কার হয়ে আছে- একটু অভিনয় চলছে। এখানে যে আছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা! আমরা অনেক সিনেমাতেই এই কাহিনী দেখে অভ্যস্ত। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে সিনেমায় নায়ক এসে সবকিছু থেকে উদ্ধার করে কিন্তু বাস্তবে তা হবার না। প্রতিষেধক যদি আবিষ্কার হয়ে যাই, তাহলে আমরা সাধারণ মানুষ বংশ পরম্পরায় বাকি বছরগুলোর জন্য এই বেড়াজালে বন্দি হয়ে যাব।
৩. এই ভাইরাসের জেনোম নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে- সেটা আশাব্যাঞ্জক। কিন্তু ভাইরাস কী কী ভাবে ছড়াতে পারে, পরিবেশে কীভাবে বেঁচে থাকে ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা মনে হচ্ছে অপ্রতুল- যদিও এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ | সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ২০-৩০ সেকেন্ড হাত ঘষলে, ভাইরাস ধ্বংস হয়ে যাবে। নাকে মুখে হাত দেয়া যাবে না। এগুলো মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। কিন্তু পানিতে এই ভাইরাস কত সময় কার্যকর থাকে কিংবা থাকে না- সেটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কিছু পাইনি। আমার মনে হয় এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহরে যারা থাকি, তাদের তো সাপ্লাই পানির ওপর নির্ভর করে চলতে হয়। পানিতে যদি এটা মিশে আমাদের কাছে পৌঁছে যায়- সেটা কীভাবে ঠেকানো সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র অণুজীববিজ্ঞানীরাই দিতে পারেন। আবার শাকসবজি, মাছ-মাংস কীভাবে জীবাণুমুক্ত হবে সেটা নিয়েও আছে সন্দেহ।
সর্বোপরি এই মহাদুর্যোগ ব্যবস্থাপনার চিত্র যথেষ্ট হতাশাব্যঞ্জক। এখন যেভাবে সাধারণ ছুটি, লকডাউন দেয়া হচ্ছে তাতে কি এই মহাদুর্যোগ থেকে মুক্তি মিলবে? এতকিছুর পরও আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত দিনে দিনে বেড়েই চলেছে |
আসলে সাধারণ ছুটি বা ঢিলেঢালা লকডাউন যতটুকু করোনা ঠেকাতে ভূমিকা রেখেছে বা রাখছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি করছে অর্থনীতির ও শিক্ষাব্যবস্থার। একটা কথা মনে রাখা দরকার- সবকিছুই সাইক্লিক প্রক্রিয়ায় চলে। এই বৃত্তের যেকোনো জায়গায় ছন্দপতন হলে সেটা পুরো বৃত্তকেই ধ্বংস করে ফেলে। লকডাউন যদি দিতেই হয় তবে সারা দেশব্যাপী একসাথে এমনভাবে দেয়া উচিত যেন কেউ বাইরে বের হতে না পারে। তবে এটার জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ দিতে হবে। ত্রাণ যা দেয়ার সেটা লকডাউন শুরু হওয়ার আগেই দিতে হবে। লকডাউন সময়কার স্বাস্থ্যসেবাকেও খুব লিমিটেড করতে হবে। যারা স্বাস্থ্যসেবা দেবেন, ওই সময়ে তাদের সেবাকেন্দ্রেই থাকা-খাওয়ার সুরক্ষিত ব্যবস্থা দিতে হবে। যার যার জরুরি ওষুধ আগেই কিনে রাখবে ওই সময়টার জন্য। কারণ ওষুধের দোকানও খোলা রাখা সমীচীন না। যে যেখানে থাকবে সেখান থেকে বের হতে পারবে না কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে ‘আমাদের দেশে এই মহাদুর্যোগের শুরু একজন মানুষ দিয়েই; তাই একজন রোগীও যদি অবশিষ্ট থাকে সেখান থেকেই পুরা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এইক্ষেত্রে লক্ষণবিহীন রোগীরাই সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক যাদের সংখ্যাই বেশি।’
এখন কিছু সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করা যাক।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ৩১ দফা দিয়েছিলেন, সেটা করোনা মহামারি ঠেকাতে সবসময়ের জন্য একটা পরিপূর্ণ দলিল এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। সেটা ঠিকভাবে পালন করতে পারলে আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আজ আমাদের মাঝ থেকে অনেক নামিদামি মানুষ ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছেন- যেটা জাতির ভবিষ্যতের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। হয়তো আরেকটু সাবধান হতে পারলে, উনাদের সেবা থেকে দেশ বঞ্চিত হতো না। কিন্তু আমাদের তো থেমে গেলে চলবে না। সমস্যা যখন এসেছে, উপায় একটা না একটা আছেই-
এখন করোনা মহামারিকে জাতীয়দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অধীনে পরিচালনা করলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সহজ হবে বলে আশা করা যায়। এটার জন্য একটা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করতে হবে যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞানী, সংক্রামক রোগবিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা (এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি , ইউনানি- ভালো বিষয় হচ্ছে, এখন পর্যন্ত কোনো হোমিওপ্যাথি ডাক্তার মারা যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে না), অর্থনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞ, যোগাযোগ (সড়ক, টেলিকম) বিশেষজ্ঞরা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ প্রমুখ সকলকেই অন্তুর্ভুক্ত করতে হবে। একটা সার্বিক পরিকল্পনা করে সেটাকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ স্ক্রাম মাস্টার নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। যার যার দায়িত্ব ভাগ ভাগ করে, সংক্ষিপ্ত সময়ের লক্ষ্য দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। যেমন, অণুজীব বিজ্ঞানীরা বের করবেন এই ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি, কীসে ধ্বংস হয়, কীসে বিস্তার হয়, আমাদের পরিবেশে সে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে, কী কী ভাবে ছড়াতে পারে, অল্টারনেট হোস্ট আছে কি না, ভাইরাসের জীবনচক্র ইত্যাদি।
এখন পর্যন্ত যেটা দেখা গেছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৮০% মানুষের মৃদু অথবা কোনো লক্ষণ থাকে না। ১৫% রোগীর মাঝারি মাত্রার সমস্যা হচ্ছে আর বাকি মাত্র ৫% রোগীর অবস্থা জটিল হয়ে যাচ্ছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ ২০% রোগী কারা হতে পারেন সেটা মোটামুটি জানা। তাই সারাটা দেশ লকডাউন না করে বরং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী (২০%) শনাক্ত করা দরকার। যেমন বয়স্ক মানুষ, যাদের অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, পূর্বে স্ট্রোকের ইতিহাস, ক্রনিক চর্মরোগ ইত্যাদি আছে তাদের ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে পৃথক করে ফেলতে হবে। যেহেতু রোগটি মানুষের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই তাদের অন্যান্য মানুষ থেকে আলাদা করার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা নিরাপদে থাকেন- পরিবারের সাথে রাখাই মঙ্গল কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থবিধি মেনে চলবেন। এদের মধ্যে যাদের সেবা জরুরি, তারা শুধু ভার্চুয়ালি অথবা ডিজিটালি তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম করতে পারবেন। বাকিদের (৮০%) ক্ষেত্রে এতটা লকডাউন দরকার আছে বলে মনে হয় না। বরং কাজের মধ্যে থাকলে মন ও স্বাস্থ্য দুটোই ভালো থাকবে। আর অর্থনীতির ওপর চাপ কম পড়বে অথবা কোনো চাপই পড়বে না।
সাথে সাথে কর্মক্ষেত্রেও কিছুটা পরিবর্তন আনা জরুরি। যারা গণমানুষের সাথে কাজ করেন তাদের অবশ্যই রোস্টারের আওতায় আনতে হবে। আমরা সবাই জানি, পদার্থবিজ্ঞানে ব্রেকডাউন বলে একটা কথা আছে। আপনি যদি হাতুড়ি দিয়ে একটা দেয়ালকে আঘাত করেন, তবে সেটা প্রথমে কিছু নাও হতে পারে দেয়ালের প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে, কিন্তু যদি আঘাত করতেই থাকেন তখন কী হবে? সেটা আস্তে আস্তে ভেঙে পড়বে- তাই না? কিন্তু এর মাঝে যদি মেরামত করেন তাহলে কিন্তু ভাঙবে না। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কথা না। তাই তাদের যথেষ্ট বিশ্রামের সুযোগ দিতে হবে যাতে তাদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে না পড়তে পারে। স্বাস্থবিশেষজ্ঞরা সর্বোত্তম কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারেন প্রশাসন মন্ত্রণালয় তাদের পরামর্শমতো কাজ করবেন।
আমাদের দেশে ৮০% এর মধ্যে পড়বেন এমন অনেক সুস্থ সবল বেকার যুবক আছে- যাদের সক্ষমতাকে এই সময় ব্যবহার করা যায়। এতে করে ত্রাণের ওপর চাপ কমবে, রাস্তাঘাটে অপ্রয়োজনীয় আড্ডা, ঘোরাফেরাও কমে যাবে। তবে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে- খণ্ডকালীন ( ছয় মাস অথবা এক বছর অথবা দুই বছর) চাকরির ব্যবস্থা করা ভালো হবে। সরকারি যে জটিল নিয়োগ পদ্ধতি আছে, সেটা অনুসরণ না করাই মঙ্গলজনক হবে। এরা প্রধানত মাঠকর্মী (পুলিশের সহযোগী, হসপিটালের ওয়ার্ড বয়, ঘরে ঘরে পণ্য/ত্রাণ বিতরণ , নমুনা সংগ্রহ, মৃতের সৎকার করা ইত্যাদি) হিসেবে কাজ করবে যাতে দক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মীরা নিরাপদে থাকেন।
একজন দক্ষ কর্মকর্তা বা কর্মী তৈরি করতে রাষ্ট্রের অনেক সময় ও সম্পদ লাগে। সত্যি বলতে কী- এই করোনাময় অবস্থায় তাদের খুব বেশি কিছু করার নেই- কারণ এটার কোনো চিকিৎসা এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও নেই। তবে জাতি একবার মেধাশূন্য হয়ে পড়লে, সামনের দিনগুলো অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বেকার ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী যুবক শ্রেণি এগিয়ে আসলে, এই মহাদুর্যোগ অনেক ভালোভাবে মোকাবিলা করা যাবে কোনোরকম লোকসান ছাড়াই- এটাই আমাদের সবার চাওয়া। এই কাজের অভিজ্ঞতা তাদের ভবিষ্যতে আরও বড় চাকরি পেতে সাহায্য করবে। এই সময়ে তাদের তাদের নিজ নিজ পেশায় দক্ষ কর্মচারী অথবা কর্মকর্তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্র তাদের পারিশ্রমিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেবে। যেহেতু তারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে জড়িত থাকবে, তাদের বিমাসুবিধাও থাকা উচিত। তাদের নিয়োগের সময় প্রয়োজনীয় মেডিকেল পরীক্ষা নিরীক্ষা বাঞ্ছনীয়। যাতে তারা সহজে করোনাতে আক্রান্ত না হয়। আর তারপরেও যদি হয়ও, যেন জটিল না হয়।
আমার মনে হয় নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও বাসা থেকে অফিস করা অথবা সাধারণ ছুটি থাকাটা জরুরি। কারণ তাদের ক্ষেত্রে পরিবারে আইসোলেশনে থাকাটা খুব কঠিন। যেসব বাসায় কাজের লোক নেই ও একান্নবর্তী পরিবার, সেক্ষেত্রে গৃহিণীর করোনা হলে শিশুদের করোনা থেকে রক্ষা করা খুব কঠিন। আর করোনা শিশুদের ওপর দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রভাব ফেলে কিনা সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তাই পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের রক্ষা করতে, পরিবারের কর্মক্ষম নারীদের এই মহাদুর্যোগের সময় সুস্থ থাকাটা খুব জরুরি। সরকারের সহযোগিতা না থাকলে এটা সম্ভব না।
অতি দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে কর্তাব্যক্তিবর্গ (মন্ত্রী, এমপি, ডাক্তার, পুলিশ, প্রশাসন, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট, ব্যাংকার, জনপ্রতিনিধি প্রমুখ) যেভাবে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন ও মারা যাচ্ছেন, এইভাবে কিছুদিন চললে সংশ্লিষ্ট সেবা পাওয়াই দুস্কর হয়ে যেতে পারে। যেমন ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে নামকরা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কতজন আছেন, ৫-৭ জন হবেন হয়তো বা। এখন এই করোনার কারণে উনাদের যদি আমরা হারাই, তাহলে কী হবে বলেন? একইভাবে বড় নেতা কতজন আছেন? এইভাবে চিন্তা করলেই সমীকরণটা বোঝা যায়।
তবে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে স্বাভাবিক অবস্থায় অনেক কিছুই করা যায় না। তাই করোনার সময়টাকে মহাদুর্যোগ ঘোষণা করে সেইভাবে বাজেট পুনর্বিন্যাস করে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার তত্ত্বাবধানে সকলের অংশগ্রহণে, নিরপেক্ষভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করলে- সবদিকই রক্ষা হবে বলে আশা করা যায়।
পরিশেষে বলা যায়, এই মহাদুর্যোগের সময় সমতা ও সমন্বয় খুবই জরুরি। একটা দ্রুত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, যেকোনো সময় পুরো পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে। তাই আশাকরি কর্তাব্যক্তিরা বিষয়টা ভেবে দেখবেন। আমরা আর এমন মৃত্যুর মিছিল দেখতে চাই না। আর এই উপলক্ষে দুর্যোগব্যবস্থাপনা উন্নত হলে, ভবিষ্যতের যেকোনো দুর্যোগও একইভাবে মোকাবিলা করা যাবে।
লেখক : প্রকৌশলী, কলামিস্ট
এইচআর/বিএ/জেআইএম