বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, বাড়ছে না সচেতনতা

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৮:৫৫ এএম, ০১ জুলাই ২০২০

মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটি কেড়ে নিয়েছে এক হাজার ৮৪৭ জনের প্রাণ। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ৬৮২ জন। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৩ জনে।

গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

উদ্বেগজনক ব্যাপার যে, দিন দিন করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে শনাক্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। এই তালিকায় সংযুক্ত হচ্ছে আমাদের স্বজন-পরিজন। মন্ত্রী-এমপি থেকে কেউ বাদ যাচ্ছে না। ক্রমেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে চাপ বাড়ছে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর। চিকিৎসা না পেয়েই অনেকের অমানবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বলা যায়, করোনাসংক্রান্ত এইসময় জনজীবনকে অচল, স্থবির ও বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। করোনা আক্রান্তের কোনো চিকিৎসা নেই। আবিষ্কার হয়নি কোনো ভ্যাকসিনও। দেশে চিকিৎসাব্যবস্থাও অপর্যাপ্ত। এই অবস্থায় সচেতন ও সাবধান হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা।

এ ধরনের কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার কথায়। সম্প্রতি করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরা সুখকর নয়। কারণ এই সংখ্যা ও পরিসংখ্যানের মধ্যে আমি, আপনি, আমার-আপনার আপনজন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, সহকর্মী, প্রতিবেশী প্রতিদিনই অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আক্রান্তের তালিকা ইতোমধ্যে বেশ দীর্ঘ। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, প্রশাসন, অন্যান্য পেশার মানুষ, সাধারণ জনগণ এই পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুর তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা, আইনশৃঙ্খলা ও অন্যান্য সেবাদানকারীরা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করলেও এই সংখ্যা ও পরিসংখ্যানকে নিম্নমুখী করা যাবে না, যদি না আপনারা অর্থাৎ আমরা সচেতন না হই।’

নাসিমা সুলতানা আরও বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমি বা আপনি একটি সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত হলে এবং পরিসংখ্যানে স্থান পেলে গবেষণার কাজে সহায়তা হবে। কিন্তু আমার-আপনার পরিবারের আপনজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, সহকর্মী যে কষ্ট ও দুঃখের মধ্যে পড়বে, সেটা বিবেচনা করে সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, করোনা মোকাবিলায় সচেতন হোন।’

‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। মাস্ক পরুন, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন, বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধুবেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। যেখানে-সেখানে কফ-থুথু ফেলবেন না। অপরিষ্কার হাত চোখে-মুখে-নাকে দেবেন না। ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। করোনার ঝুঁকি বাড়ায় এমন বিষয়গুলোর প্রতি সজাগ থাকুন। স্বাস্থ্যকর খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করুন।’

করোনা মোকাবিলায় এসব কথা মেনে চলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। দুঃখজনক হচ্ছে, একদিকে রয়েছে চিকিৎসাব্যবস্থার অপ্রতুলতা। অন্যদিকে শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। বাড়ছে মৃত্যু। মানুষগুলো যেন কেবলই সংখ্যা হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নিজের সুস্থতা আসলে নিজের হাতে। রাষ্ট্রকে যেমন তার নাগরিকের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। তেমনি নাগরিকদেরও দায়িত্ব হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজে সুস্থ থাকা এবং অন্যকে সুস্থ রাখা। মনে রাখতে হবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। সবাইকে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল হতে হবে।

এইচআর/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।