ডা. মঈন উদ্দিনের মৃত্যু ও আমাদের শিক্ষা

সম্পাদকীয় ডেস্ক
সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০২ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২০

অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী

সিলেট মেডিকেল কলেজের মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন আজ সকাল ৭টায় কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসারত অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৮ বছর। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হতে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন (কে-৪৮)।

তিনি কীভাবে করোনায় আক্রান্ত হলেন তার একটি বৈষয়িক আলোচনা করতে চাই। তাকে ইতোমধ্যে সিলেট মেডিকেলের কোভিড-১৯ আইসোলেশন রোগীদের দেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। পাওয়া তথ্যে তার কোনো পিপিই ছিল না। উনি মাস্ক পরেই রাউন্ড দিতেন।

সিলেটে অথবা বাংলাদেশে করোনা রোগী এলো কীভাবে? বাংলাদেশ কোভিড-১৯ এর নিজস্ব জায়গা নয়। এটা আসছে বাইরে থেকে। তাই কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকে রোগ না আসার ব্যাপারে যদি শতভাগ সচেষ্ট হতেন তাহলে আজ ডাক্তার মঈনের এই অবস্থা হতো না।

রোগীগুলো বিমানবন্দর দিয়ে ঢুকে গেল। বিমানবন্দরে যদি সঠিক স্ক্রিনিং হতো, সঠিক কোয়ারেইন্টাইন হতো তাহলে করোনা রোগীদের সিলেট মেডিকেলে আসা লাগত না। ডা. মঈন যদি আইসোলেশন ইউনিটের দায়িত্বে না যেতেন তাহলে তার ভাগ্যে আজ এই দুর্ঘটনা ঘটত না। কিন্তু আইসোলেশন ইউনিটের দায়িত্বে যাবেন না কেন? উনি ছিলেন সৎ, কর্মপরায়ণ এবং জাতির জন্য নিবেদিতপ্রাণ। তাই এই দায়িত্ব না নিয়ে পারেননি।

তিনি নিজের ব্যাপারে অতটা সচেতন ছিলেন না কিন্তু জাতির ব্যাপারে ছিলেন একেবারে একনিষ্ঠ। তিনি একটি কোয়ালিটি সম্পন্ন স্পেসিফিক পিপিই পাননি। এটা ছাড়াই উনি রাউন্ড দিতেন। কোয়ালিটি সম্পন্ন পিপিই না পাওয়ার ব্যর্থতা কর্তৃপক্ষের ওপরই দাঁড়ায়। তাই কর্তৃপক্ষ এই দায় এড়াতে পারেন না।

ডা. মঈনকে তার নিয়তিবরণ করতে হয়েছে। তাকে আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এই অবহেলার কারণে আমাদের অন্য ডাক্তারদের যেন এই অবস্থা না হয়। আজ জাতি তার এক মেধাবী সন্তানকে হারিয়েছে। একজন ডাক্তারের মূল্য দাঁড়িপাল্লায় অন্যান্য সাধারণ লক্ষ মানুষের সমান হতে পারে না। ডাক্তারের যে কাজটি, ডাক্তার ছাড়া আর কেউ তা পারেন না।

আজ একজন মঈন না থাকার কারণে হিসাব করে দেখেন কত রোগী চিকিৎসাসেবা পাবে না। ডাক্তার না বাঁচলে রোগীও বাঁচবে না। রোগী না থাকলে মানুষও থাকবে না। দেশ ও জাতিও থাকবে না। তাই কর্তৃপক্ষের প্রতি আবেদন ডাক্তারদের একাধিক কোয়ালিটি সম্পন্ন স্পেসিফিক পিপিই দিন।

পিপিই অনেক ধরনের। গুণের দিক দিয়ে অনেক প্রকারের। ডাক্তারদের ভালো কোয়ালিটির স্পেসিফিক একাধিক পিপিই ব্যবহারের ডেডিকেটেড ট্রেনিং দিন। দেশে কোয়ালিটি সম্পন্ন কোভিড হাসপাতাল খুলুন। টেস্টের সংখ্যা অনেক অনেক বাড়ান।

লেখক : সাবেক অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ;
সাবেক মহাসচিব, বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন।

বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।