করোনায় প্রাণ যায় মধ্যবিত্তের সব দায়?
তাইমুন পিয়া
লকডাউন দাও, লকডাউন উঠিয়ে নাও- একই দেশ একই সমাজের দুই আওয়াজ। দুই ভাগে যেন বিভক্ত হয়ে গেছি আমরা। লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষের রুজিরোজগার বন্ধ হবার জোগার। মধ্য আয়ের মানুষের ভেতর হতাশা- কাজটা থাকবে তো? প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে নাতো? বা ছাঁটাই লিস্টে নাম উঠবে নাতো? করোনা বহু আগেই ছিন্নভিন্ন করেছে আমাদের। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ একবছর যাবত। অফিস আদালত কারখানা সব চলছে দোলাচালে।
সেদিনও মনে হয়েছিল করোনা বুঝি বশ মানলো আমাদের কাছে। পৃথিবীর মানুষের কাছে। কিন্তু না, সেটা নাকি ছিলো দ্বিতীয় ওয়েভের আগমনী। এখন কী তৃতীয় ওয়েভ শুরু হলো? কয়েদিন ধরে সাত হাজারের উপর আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিন। মারা যাচ্ছে গড়ে অর্ধশত। সবাই সব নিয়মকানুন জানছেন তবুও কেন বাড়ছে করোনা? কেন নতুন রূপে এসে আর সময় দিচ্ছে না। মাত্র তিন চার দিন এমনকি সেদিন জানলাম এক আত্মীয় পজেটিভ রিপোর্ট হাতে পাবার দ্বিতীয় দিন মারা গেলেন। আরেক জন টিকা নেবার পাঁচ দিন পর পৃথিবী ত্যাগ করলেন। করোনা টেস্ট করতে গিয়ে আর ফেরেননি। এবং এই চিত্র কেবল বাংলাদেশে না। সারা বিশ্ব এখন কাবু করোনার কোপানলে।
আমরা মনে করি ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাস সংক্রামিত হতে থাকে। গবেষণা করে অবশ্য বিজ্ঞানীরা দুই ভাগ হয়েছেন এক ভাগ বলছেন বাদুড়, সিবেট, পেঙ্গুলিন প্রভৃতি প্রাণি থেকে করোনা ছড়িয়েছে। আরেক ভাগ বলছেন দক্ষিণ সমুদ্র থেকে জলজ প্রাণীর মাধ্যমে করোনা ছড়াচ্ছে। কারণ চীনের যে অংশ দক্ষিণে সমুদ্র ঘেঁষে সেখানেই প্রথম মহামারি আকার ধারণ করেছে।
মজার ব্যাপার ল্যাটিন শব্দ করোনা অর্থ মুকুট। ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোস্কোপে ভাইরাসটির আকার দেখেই এই নামকরণ করা হয়। ১৯৩০ সালে এই ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছিলো প্রথম মুরগীর শরীরে। ১৯৬০ সালে মানুষের শরীরে প্রথম এই ভাইরাসের খোঁজ মেলে। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ছয় প্রকার করোনাভাইরাস শনাক্ত করেছেন। এর মধ্যে বর্তমান বিশ্বত্রাস হিসেবে নোভেল করোনা ভাইরাস চিহ্নিত হয়েছে যার অপর নাম- কোভিড নাইন্টিন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীকে পরাস্ত করতে পেরেছে এক কোভিড নাইন্টিন। ২০২০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই রোগকে অতিমারি ঘোষণা দেয়। হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউরোপ এবং আমেরিকা। অর্থ প্রাচুর্য সব কিছু হার মানছে করোনার কাছে। ছোটো ছোটো দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবকাঠামো ধ্বংসের মুখে ধাবিত হচ্ছে।
তবুই যেন সর্বংসহা বাঙালি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। আক্রান্তের হার নেমে এসেছিল প্রতিদিন গড়ে তিনশ জনে। স্কুল কলেজ গুলো খোলার প্রস্তুতি চলছিল।
সতেরো কোটি মানুষের দেশকে এতো সহজে কাবু করতে পারবে না করোনা। এই বিশ্বাস নিয়েই রোজ সকালে চোখ মেলি। আর সারাদিন দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করি মৃত্যুহার শুনতে হবে বলে। কেউ ভালো নেই আমরা। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের উপর আর্থিক ধস যেভাবে নেমে আসছে তাতে ভালো থাকার কোনো উপায় নেই।
যদিও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্নকথা। পৃথিবীতে দূষণ কমেছে। পৃথিবী নতুন করে প্রাণ পাচ্ছে। রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা কমেছে। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধংদেহী আক্রোশও নাকি কমে এসেছে।
মানুষ যদি না থাকে তবে সেই ভালোই বা কার জন্য! ভালো হোক। পৃথিবীর ভালো হোক, মানুষের ভালো হোক।
এইচআর/এমকেএইচ