৩৬ জুলাই: ক্যালেন্ডারের বাইরে লেখা এক দিন
তারিখটা ক্যালেন্ডারে নেই। পাঠ্যবইয়েও নয়। তবে মানুষের হৃদয়ে আছে গভীর কোনো ক্ষোভ অথবা সাহসের বর্ণিল প্রতিচ্ছবি হয়ে। আজ ৩৬ জুলাই। হ্যাঁ, শুনতে অদ্ভুত লাগলেও মানিক মিয়া এভিনিউতে আজকের তারিখ ৩৬ জুলাই-কোনো সরকারি গেজেটে নয়, এই তারিখ লেখা রয়েছে প্রতিবাদী মানুষদের প্ল্যাকার্ডে, মুখে মুখে। ছবি: মাহবুব আলম
-
সকাল থেকেই জমছে ভিড়। পতাকা হাতে তরুণ-তরুণী, মাঝবয়সী মানুষ, এমনকি প্রবীণদের মুখেও একরকম অদ্ভুত উজ্জ্বলতা।
-
কেউ বলছেন, এটা কোনো এক ‘নতুন রাষ্ট্রের জন্মদিন’, কেউ বলছেন, ‘ভবিষ্যতের কোনো মুক্তির দিন’। তবে যারাই আসছেন, তাদের চোখে একটাই ভাষা প্রতিবাদ, প্রত্যয় আর পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা।
-
৩৬ জুলাইয়ের কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই। নেই কোনো বর্ষপঞ্জিতে। কিন্তু এই তারিখটাই যেন হয়ে উঠেছে সবকিছুর প্রতীক-সংবাদের বাইরে পড়ে থাকা মানুষের, পদদলিত স্বপ্নের, অবহেলিত সংস্কৃতির, কিংবা চেপে রাখা কণ্ঠের প্রতিধ্বনি।
-
এ যেন সময়ের ফাঁকফোকরে গড়ে ওঠা এক অল্টারনেট ইউনিভার্স, যেখানে মানুষ ভুলে যেতে চায় প্রাত্যহিকতার নিয়ম আর তৈরি করতে চায় নিজের মতো করে ‘একটা দিন’ যে দিনটা রাষ্ট্রের না, মানুষের।
-
বিকেল নাগাদ পুরো মানিক মিয়া এভিনিউ রঙিন হয়ে উঠেছে। চারদিকে পতাকার ঢেউ, এগুলো কোনো রাষ্ট্রীয় পতাকা নয়, বরং ব্যক্তিগত বোধ আর সংগ্রামের রঙে আঁকা একেকটা ক্যানভাস। কেউ লাল-কালো রঙে আঁকা পতাকা উঁচিয়ে ধরে বলছেন, ‘এটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধের রঙ’। কেউ হাতে ধরে আছেন বেগুনি-হলুদের পতাকা, ‘এটা আমাদের কল্পনার ভবিষ্যত’।
-
কোনো রাজনৈতিক দল নেই, নেই কোনো ঘোষক বা বক্তা। কিন্তু ছড়িয়ে আছে গান, কবিতা আর স্মোক বোমের নীল ধোঁয়ার মধ্যে একরকম রোমাঞ্চ।
-
গানের ভাষা সাধারণ, কিন্তু তাতে যেন এক বিপ্লব লুকানো। কেউ নাচছেন, কেউ কাঁদছেন, কেউ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন বাতাসের দিকে মুখ করে-যেন সময়কে আলিঙ্গন করছেন।