ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজ: নিরাপত্তার সেতু এখন ভোগান্তির নাম
ঢাকার অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট। প্রতিদিন হাজারো মানুষের পদচারণায় সরগরম থাকে এই এলাকা। সড়ক পারাপারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছুদিন আগে উদ্বোধন করা হয়েছিল একটি ফুটওভার ব্রিজ। উদ্ভোধনের পর প্রথমদিকে সেখানে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। হকারমুক্ত প্রশস্ত সিঁড়ি ও চলাচলের সুবিধাজনক পরিবেশে মানুষ নিশ্চিন্তে পারাপার হতে পারছিলেন। ছবি: মাহবুব আলম
-
কিন্তু দিন গড়াতেই চিত্র পাল্টে যায়। আজ সেই ফুটওভার ব্রিজে দাঁড়ালেই দেখা যায়, প্রতিটি ধাপ যেন দোকানপাটে ভরে গেছে। জামাকাপড়, মোবাইল অ্যাকসেসরিজ, খাবার-কি নেই সেখানে?
-
হকারদের দখলে জায়গা এতটাই সঙ্কুচিত হয়ে গেছে যে, পথচারীরা সঠিকভাবে হাঁটার জায়গাটুকুও খুঁজে পান না।
-
ফুটওভার ব্রিজের মূল উদ্দেশ্য ছিল সড়কের বিপজ্জনক যানজট আর দুর্ঘটনা থেকে মানুষকে রক্ষা করা। অথচ এখন সেই নিরাপত্তার পথটাই পরিণত হয়েছে ঝুঁকির আরেক নাম হয়ে।
-
দুই পাশে পসরা সাজানো দোকান, মাঝখানে ঠেলাঠেলি করে চলাচল-বয়স্ক মানুষ, নারী, কিংবা স্কুলগামী শিশুরা এখানে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত পারাপারের কোনো সুযোগও থাকছে না।
-
প্রশ্ন জাগে-ফুটওভার ব্রিজ কি কেবল উদ্বোধনের দিনের জন্যই ছিল হকারমুক্ত? নাগরিকের নিরাপদ চলাচলের অধিকার কি এভাবেই বারবার ভেঙে যাবে?
-
শহরের ব্যস্ততম মোড়ে দাঁড়িয়ে এমন চিত্র শুধু একটি সেতুর দখলকেই দেখায় না, দেখায় আমাদের শৃঙ্খলার অভাব ও নজরদারির সীমাবদ্ধতাও।
-
তবে অন্য দিকটিও ভোলা যায় না। ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়িতে বসা প্রতিটি হকারই হয়তো জীবিকার সংগ্রামে নাম লিখিয়েছেন। তাদের পরিবার, সন্তান-সবার দায়িত্ব তাদের কাঁধে। কিন্তু পথচারীর অধিকার কেড়ে নিয়ে এই জীবিকা কতটা ন্যায্য?
-
একটি শহর তখনই সুস্থভাবে বাঁচে, যখন সেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকে-হোক তা নিরাপদ চলাচল কিংবা সৎভাবে জীবিকা নির্বাহ।
-
ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজ তাই আজ আমাদের চোখে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়-আমরা কি এমন একটি শহর গড়তে চাই, যেখানে পথচারীর নিরাপত্তা হকারদের দোকানের আড়ালে হারিয়ে যাবে? নাকি এমন সমাধান খুঁজব, যেখানে হকারদেরও টিকে থাকার জায়গা থাকবে, আবার পথচারীরও থাকবে স্বস্তির নিশ্বাস?